নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / নজর আলীর বাবু

নজর আলীর বাবু

পরিতোষ অধিকারী:

মৎস্যজীবী প্রধান নজর আলী। বাড়ি তৎকালীন নাটোর সদর থানার ৪ নং পিপরুল ইউনিয়নের ভূষণগাছা ধাওয়াপাড়া গ্রাম। পাড়ার সব পরিবার মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। যদিও অধুনা কালে নদী বিলগুলোতে পর্যাপ্ত মাছ না থাকায় পেশা পরিবর্তন করেছেন অনেকেই। সেই পারারই প্রধান নজর আলী বয়স সত্তরোর্ধ্। চুলগুলো বড় বড় এবং পাকা। গান ছন্দে বেশ দক্ষ এই নজর আলী। লেখাপড়া কিছুই জানতেন না। যেকোনো সমস্যা হলেই একটা মাত্র জামা সেটি বগলদাবা করে চলে আসতেন নাটোর শহরে বাবুর বাড়িতে। বাবু দ্রুত সমাধান দিয়ে দিতেন। বাড়িতে যত্ন করে খাওয়ানোর পরে সাথে দিতেন কিছু পথ খরচা। কোনদিনই হতাশ হয়ে বাবুর বাড়ি থেকে ফিরে যেতে হয়নি তাকে।

নদী বা বিলে মাছ শিকারে গেলে যে কোন বড় মাছ বাবুর জন্য নিয়ে আসতেন। বাবুর কাছে অনেক কাকুতি-মিনতি করতেন একটি মাছ তাকে খাওয়াবেন বলে। কিন্তু বাবুও নাছোড়বান্দা টাকা না দিয়ে মাছ খাবেন না পরিষ্কার জানিয়ে দিতেন। গরিব বলে তার মাছ বিনে পয়সায় খাবেন না এ কারণে নজর আলী কেঁদে দিতেন। তার পরেও বাবু অটল পারতেন। বাবু তার স্ত্রীকে বলে দিতেন মাছটি নিয়ে গিয়ে কেটে ফেলো এবং নজর আলী কে টাকা দিয়ে দাও। এরপর নজরআলী চোখ মুছতে মুছতে টাকাটি নিয়ে বিদায় হতেন।

একবার সুযোগ এলো বাবুর জন্য কিছু করার। সালটি ১৯৯১। বাবু সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেন। নজর আলী এবার টাউন প্রেসে এসে পোদ্দার বাবুকে বললেন ১শ টি পোস্টার ছেপে দিতে। গামছার কোথায় করে খুচরো পয়সা নিয়ে এসেছেন। সেগুলো গুনে গুনে টেবিলের উপরে রেখে দিলেন। সাতদিন পরে এসে পোস্টারগুলো নিয়ে গিয়ে পাড়ার লোকজন মিলে ময়দা দিয়ে তৈরি আঠার সাহায্যে বিভিন্ন দেয়ালে লাগিয়ে দিলেন।

বাবু ভোটের আগে সবার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ধানের শীষের পোস্টার এর পাশাপাশি দুই একটা নৌকার পোস্টার দেখে অবাক হলেন। কোথা থেকে আসলো এই পোস্টার? কারণ বাবু ক্যাম্পিং করতে যখন এলেন তখন সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন পোস্টার। তার আগেই এই পোস্টার লাগানো কে?

পান খাওয়া লাল দাঁতগুলো বের করে নজর আলী বললেন, বাবু এইবার আমি আপনাকে পরাজিত করলাম। বাবু এবার হতভম্ব। নজর আলীর কাছে হেরে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, এই পাড়াতে আমি আর ঢুকবো না। এখানে আর ক্যাম্পিং করতে হবে না। সত্যিই সেখানে আর কোন ক্যাম্পিং করতে হয়নি বাবুর। বাবু নিজেও জানতেন না তার জন্য এই হতদরিদ্র মানুষ গুলো এতো বড় কাজ করতে পারে।

জনশ্রুতি আছে ভোটের আগের দিন রাতে বিরোধী দলের লোকজন ওই পাড়াতে টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এই নজর আলী তার লোকজন নিয়ে পাহারা বসিয়ে ছিল। যাতে ভোট কেনাবেচা করতে না পারে। ভোটে জিতলেন বাবু। নজর আলী তার লোকজন মিলে কাগজের মালা কিনে হাজির হলেন বাবুর বাড়িতে। এমন ভাবে বাবুর গলায় মালা পড়ালেন জেনো ভোটে নিজেই জিতে গেছেন।

বাবু বলেছিলেন, নজর আলী দের এই ঋণ কীভাবে শোধ করব? এই বাবু আর কেউ নয় নাটোরের অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শংকর গোবিন্দ চৌধুরী। এখনো সেই গ্রামে যারা বয়স্ক আছেন তারা বাবুর স্মৃতিচারণ করেন এবং অশ্রু বিসর্জন করেন। এরকম অসংখ্য ভক্ত রয়েছে নাটোর তথা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়।

তার কথা ভেবে বাবুর কাছে যে প্রত্যাশা তার অনেকটাই জানান তার কন্যা নাটোর পৌরসভা মেয়র তথা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি উমা চৌধুরীর কাছে।

আরও দেখুন

নাটোরে প্রচারণাকালে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকের উপর হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক:নাটোর সদর উপজেলায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারনাকালে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোস্তারুল ইসলাম আলমের ২জন কর্মী-সমর্থকের …