নিউজ ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠছে। আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মহামারি মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াবে।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরসের (এসঅ্যান্ডপি) রেটিংয়ে দেখানো হয়েছে।
বাংলাদেশের রেটিং এবারও দীর্ঘ মেয়াদে ‘বিবি-’ এবং স্বল্প মেয়াদে ‘বি’ বহাল রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি, যার অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে।
এসঅ্যান্ডপির রেটিং শুক্রবার সংস্থার ওয়েবসাইটে তুলে দেয়া হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে এই একই রেটিং পেয়ে আসছে বাংলাদেশ।
সংস্থাটির হিসাবে রপ্তানি আয়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক ঋণ-সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভালো করছে। আর এ কারণেই মহামারিতে আর্থিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও জোরালো প্রবৃদ্ধি ও বিপুল উন্নয়ন চাহিদার কল্যাণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের মতোই ‘স্থিতিশীল’ থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এসঅ্যান্ডপি।
সংস্থাটি আশার কথা শুনিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠছে। আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মহামারি মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াবে।
বাংলাদেশের ওপর এসঅ্যান্ডপির বার্ষিক রেটিং (২০২১) পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জোরালো প্রবৃদ্ধির ধারা গড় আয় বাড়াতে থাকবে এবং বছরজুড়ে বাহ্যিক ঝুঁকি মোকাবিলা করে টিকে থাকবে বলে যে প্রত্যাশা ছিল রেটিংয়ে তারই প্রতিফলন ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুলনামূলকভাবে দুর্বল অর্থনৈতিক ভিত্তির প্রভাব মোকাবিলা এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা ক্রমাগত স্বাভাবিক হবে ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে। এই বছর প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অর্জিত হতে পারে। ২০২১ সালের জুন মাসে সমাপ্ত অর্থবছরে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
২০১০ সালে এসঅ্যান্ডপির কাছ থেকে প্রথমবারের মতো ঋণমান পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ একই রেটিং পেয়ে আসছে।
অর্থনীতির মূল্যায়নের সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের অর্থনীতি, বাজেট ঘাটতি ও বিপুল উন্নয়ন চাহিদার সম্মুখীন হলেও বিদেশি ঋণ ও জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেকে সুবিধা পাচ্ছে।
অর্থনীতিতে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেশের প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাকে চিহ্নিত করার বিপরীতে ভালো বাহ্যিক পরিস্থিতি, উল্লেখযোগ্য দাতাসম্পৃক্ততা থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, রেমিট্যান্স ও বিশ্বমানের তৈরি পোশাক শিল্পকে তুলে ধরেছে এসঅ্যান্ডপি।
এসঅ্যান্ডপি বলছে, ভবিষ্যত রাজস্ব পরিস্থিতি জোরদারের জন্য সরকার রাজস্ব উদ্যোগগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে র্যাটিং আরও উন্নত হতে পারে।
রাজনীতির ক্ষেত্রে এ ঋণমান সংস্থার মূল্যায়ন হলো, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক চিত্র প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতার পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভবিষ্যতের নীতি প্রতিক্রিয়াগুলোর পূর্বাভাসকে দুর্বল করে দিতে পারে। আর এটা দেশটির জন্য একটা চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে এসএন্ডপি।
দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, অবকাঠামো ঘাটতি ও ব্যবসায় পরিবেশে জটিলতার কারণে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ধারাবাহিকভাবে নিম্ন পর্যায়ে আছে বলে সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ।
২০২১ সালে বাংলাদেশের ভালো ঋণমানের জন্য বর্তমানে দেশটির আশাব্যঞ্জক মাথাপিছু আয় এবং আর্থিক খাতে নানা নীতি-সহায়তা অবদান রেখেছে। তবে, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আরও উন্নতি করতে হবে। এই সীমিত রাজস্ব দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসবে না।
এটাকে দেশটির অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এসঅ্যান্ডপি বলছে, এই মাত্রার আয় দুর্বল ও সংকীর্ণ রাজস্ব ভিত্তি তৈরি করে, যার ফলে বাহ্যিক ধাক্কা মোকাবিলায় রাজস্ব ও মুদ্রা পরিস্থিতির স্থিতিস্থাপকতায় সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ২২৭ ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ তার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর চেয়ে ভালো করবে এবং ইতিবাচক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের অব্যাহত রাখবে।
এসঅ্যান্ডপির পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে ঋণ পরিশোধ সক্ষমতার চলমান উন্নতি লক্ষ্যণীয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি বৈদেশিক বাণিজ্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। বৈদেশিক মুদ্রার উল্লেখযোগ্য রিজার্ভ উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করছে।
এসঅ্যান্ডপি বলছে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ, ক্রমবর্ধমান আমদানি, রপ্তানি ও বিনিয়োগ (বিশেষ করে জাহাজ নির্মাণশিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে) বাংলাদেশের মধ্যমেয়াদি প্রবৃদ্ধিকে আরও গতিশীল করবে। স্বল্পখরচে ও দীর্ঘমেয়াদে বহিঋণ অর্থনীতিতে পুনরায় অর্থায়ন ঝুঁকি হ্রাস করেছে।
সহনীয় মাত্রার বৈদেশিক ঋণ, সাশ্রয়ী শর্তে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের সুযোগ, বৈদেশিক মুদ্রার উল্লেখযোগ্য রিজার্ভের উপস্থিতি ইত্যাদি কারণে লেনদেনের ভারসাম্য বা ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য প্রবাহ ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলেও মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানটি।