১৯৬২ সালে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে নির্মাণ করা হয় একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটিই বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক প্রায় ২৩০ মেগাওয়াট। প্রায় ছয় দশক ধরে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ। এখন কাপ্তাই থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে সৌরবিদ্যুৎ।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কাপ্তাই ৭.৪ মেগাওয়াট সোলার পিডি গ্রিড কানেকটেড বিদ্যুৎকেন্দ্র’ উদ্বোধন করেন। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপকের মতে, সরকারিভাবে স্থাপিত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘটনা দেশে এই প্রথম।
২০২০ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ সৌরশক্তি থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এ জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। ২০১৭ সালের ৯ জুলাই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহযোগিতায় কাপ্তাইয়ে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেডটিই করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে পিডিবি। এরপর কর্ণফুলী (কাপ্তাই) জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান বাঁধসংলগ্ন ২৩ একর খালি জায়গায় সৌর প্যানেল বসানোর কাজ শুরু হয়।
জানা যায়, মোট ২৪ হাজার ১২টি সৌর প্যানেল থেকে এ প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। ইনভার্টার রয়েছে ২৪০টি। মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৭.৪ মেগাওয়াট। আবহাওয়া অনুযায়ী উৎপাদন কমবেশি হবে। পরীক্ষামূলকভাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৬.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। সৌর প্যানেলগুলোর মেয়াদ ২৫ বছর। ইনভার্টারের ওয়ারেন্টি ১০ বছর। পরে এসব পরিবর্তন করে উৎপাদন অব্যাহত রাখা যাবে। এডিবির অর্থায়নে কাপ্তাইয়ে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা গেছে।
দুনিয়াজুড়েই এখন বিকল্প উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের প্রক্রিয়া চলছে। দিন দিন বিকল্প উৎসর বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়ছে। সৌরবিদ্যুৎ অন্যতম বিকল্প উৎসজাত বিদ্যুৎ। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থাগত কারণে পরিবেশের দূষণ অনেক কম হয়। এ ধরনের বিকল্প অন্য উৎস বায়ুবিদ্যুতের দিকেও সরকারের মনোযোগ বাড়াতে হবে। বলা চলে, জাতীয়ভাবে এ উদ্যোগ নিয়ে সরকার পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে দেশের জনগণ।