নিউজ ডেস্ক:
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকলে আসছে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। এরই মধ্যে স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সূত্রটি বলছে, সংক্রমণের হার ৭-৮ শতাংশ থাকলেও খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী রবিবারের মধ্যেই বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
জানা গেছে, এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষকে যেকোনো সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিভাবে ক্লাস চলবে, সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শুরুতে এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সপ্তাহের ছয় দিন ক্লাস করবে। অন্যান্য শ্রেণির ক্লাস সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন হতে পারে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের বৈঠকে খোলার সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এ ব্যাপারে রূপরেখা দেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
সূত্র জানায়, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে এতে যুক্ত থাকবেন ইউজিসি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতনরা। সেখানে কোন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ওই সূত্র বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে করোনা সংক্রমণের হার চার সপ্তাহ ধরে ৫ শতাংশ বা এর কম থাকলে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে, এমনটা বলা যাবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এত দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ নিচে এলে স্কুল-কলেজ খোলা হবে, কিন্তু বাংলাদেশে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তাগিদ দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ করোনা সংক্রমণ ৭ বা ৮ শতাংশ থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনা পরিস্থিতির উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকলে অক্টোবরের শুরুতেই হল খুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটি।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে আজকের বৈঠকের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। আর কত দিন শিক্ষার্থীরা বসে থাকবে? আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব থাকবে, যদি করোনা সংক্রমণ ১০ শতাংশের নিচে থাকে তাহলেও যেন সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়।’
কাজী শহীদুল্লাহ আরো বলেন, ‘এখন ১৮ বছর বয়সীরাও টিকা পাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজও অনেকের সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রায় সবাই দুই ডোজ টিকাই নিয়েছেন। এ ছাড়া আমাদের যাঁরা শিক্ষার্থী তাঁদের বয়সও ২৫ বছরের নিচে, যাঁদের সংক্রমণের হার খুবই কম। আর কিছুটা ঝুঁকি তো আমাদের নিতেই হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শুরুতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস নেওয়া হবে। নবম ও একাদশ শ্রেণির ক্লাস হবে সপ্তাহে দুই দিন। অন্যান্য শ্রেণিতে সপ্তাহে এক দিন ক্লাস নেওয়া হবে। যদি পরিস্থিতি ভালো হয়, তাহলে স্কুল খোলার দুই-তিন সপ্তাহ পর থেকে সব শ্রেণিতে স্বাভাবিক ক্লাস নেওয়া হতে পারে। প্রাথমিকেও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের বেশিদিন স্কুলে আনা হবে। অন্যান্য শ্রেণিতে এক-দুই দিন ক্লাস হতে পারে। আর প্রাক-প্রাথমিকের ক্লাসও অবস্থা বিবেচনা করে শুরু করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্নাতক শেষবর্ষ ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে চাই। তবে করোনা সংক্রমণ আরো একটু কমার জন্য অপেক্ষা করছি। শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকা দেওয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস পরিচালনা করা হবে, সে ব্যাপারেও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।’
জানা যায়, এ বছর সংক্ষিপ্ত পরিসরে নভেম্বরের মাঝামাঝি এসএসসি ও ডিসেম্বরের শুরুতে এইচএসসির পরীক্ষা নেওয়া হবে। এসএসসির জন্য ৬০ কর্মদিবস ও এইচএসসির জন্য ৮৪ কর্মদিবসের সিলেবাস প্রকাশ করা হলেও যে কয়দিন সময় পাওয়া যায় তার মধ্যে ক্লাস করে সিলেবাস শেষ করানো হবে। এসএসসি ও এইচএসসি—উভয় ক্ষেত্রেই গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বচনিক বিষয়ে ছয়টি সংক্ষিপ্ত পরীক্ষা নেওয়া হবে। তিন ঘণ্টার পরীক্ষা হবে দেড় ঘণ্টায়। রচনামূলক অংশে নম্বর থাকবে ৩৫ ও এমসিকিউতে (মাল্টিপল চয়েজ কোয়েশ্চেন) থাকবে ১৫ নম্বর। শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন বাছাই করার ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ পাবে। তবে ৫০ নম্বরকে ১০০-তে রূপান্তর করে পরীক্ষার ফল দেওয়া হবে।
এবার আবশ্যিক বিষয় বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, আইসিটি ও ধর্ম এবং চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এসব বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের আগের পাবলিক পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে মূল্যায়নের মাধ্যমে নম্বর দেওয়া হবে। এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি, এইচএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি ও এসএসসির ফল মূল্যায়ন করা হবে। এসএসসিতে (ভোকেশনাল) জেএসসি ও নবম শ্রেণি এবং এইচএসসিতে (ভোকেশনাল) এসএসসি ও একাদশের ফল মূল্যায়ন করা হবে।
গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। সংক্রমণের হার ক্রমেই নিচে নেমে আসছে—এটা আমাদের জন্য সুখবর। এই নিম্নগতি থাকলে শিগগিরই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারব।’ ধাপে ধাপে খোলার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পৃথিবীর যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। এই অসুখে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সবাই শুরু থেকেই সপ্তাহে ছয় দিন হয়তো ক্লাস করার সুযোগ পাবে না। একটু সময় নিয়ে সেটা হবে।’
একই দিন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা প্রস্তুত রয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যেকোনো সময়ে স্কুল খুলতে পারে। তবে এখন আমরা করোনা পরিস্থিতি আরো কিছুটা কমার জন্য অপেক্ষা করছি।’ তিনি বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হয়তো বেশিদিন স্কুলে আনা হবে। থ্রি, ফোর হয়তো দুই দিন করব। ওয়ান, টু এক দিন করে করব। এখন স্কুল খুললে এভাবেই ক্লাস করাতে চাচ্ছি।’