নিউজ ডেস্ক:
সমুদ্রের নোনা জলের ঠিক ওপরে অবতরণের প্রস্তুতি নেবে উড়োজাহাজ। রানওয়ে স্পর্শ করার ৩ সেকেন্ড আগেই সেটি প্রবেশ করবে বিমানবন্দর এলাকায়। পর্যটননগরী কক্সবাজারের বিমানবন্দর ঘিরে চলছে এমন নানা পরিকল্পনা। হাতে নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৭০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার বড় এক প্রকল্প। বিশ্বের উপকূলীয় শহরে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরগুলোর কাতারে নাম লিখিয়ে দেশকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধ এবং এভিয়েশন সেক্টরে রিজিওনাল হাব হিসেবে গড়ে তোলাই সরকারের চেষ্টা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৯ আগস্ট গুরুত্বপূর্ণ এই বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। গণভবন থেকে এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি যুক্ত হবেন। প্রকল্পকাজের উদ্বোধনসংক্রান্ত সারসংক্ষেপ এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে দেশের সব কয়টি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরই আধুনিকায়ন করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় নতুন রূপ পাচ্ছে দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রের বিমানবন্দরটি। কক্সবাজারের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য শহরের মধ্যেও যোগাযোগ
সুবিধা বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী আমাদের সময়কে বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্রসংলগ্ন বাঁকখালী নদীর অংশে রানওয়েটি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এ বিমানবন্দরের মাধ্যমে রিজিওনাল হাব গড়ে তুলতে চান প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন দেশের বিমান চলাচলের রুটও এ এলাকা ঘিরে।’ তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ চলমান। এর মধ্যে অন্যতম বিমানবন্দরের উন্নয়ন। এ কাজ শেষ হলে রানওয়ের আয়তন বাড়বে, অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন হবে বিমানবন্দর।’
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের পর্যটনশিল্প বিকাশে এবং সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আকাশপথে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজার বিমানবন্দর। ২০১৭ সালের ৬ মে এই বিমানবন্দরে বোয়িং ই-৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তখন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমানবন্দরটির রানওয়েকে তিনি ১২ হাজার ফুটে সম্প্রসারণের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবেই কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করা হচ্ছে। বিদ্যমান রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুটে এবং প্রস্থ ১২০ ফুট থেকে ২০০ ফুট করা হবে। সেই সঙ্গে রানওয়ের সক্ষমতা বাড়ানো, এয়ারফিল্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজ করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
জানা যায়, আগামী ৫০ বছরের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হাতে নেওয়া হয়েছে এই প্রকল্প। ৩ হাজার ৭০৯ কোটি ৬০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর অনুমোদন পায়। চীনা দুই প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ কাজ পেয়েছে। পাশাপাশি বেচিকের নিজস্ব অর্থায়নে সেখানে স্থাপন করা হবে প্রিসিশন অ্যাপ্রোচ ক্যাটাগরি-১ লাইটিং সিস্টেম। তখন সুপরিসর বিমানগুলো পূর্ণ লোডে উড্ডয়ন-অবতরণ করতে পারবে। অর্থাৎ নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর, ৭৪৭-৪০০ ও এয়ারবাসের মতো উড়োজাহাজ সহজেই ওঠানামা করতে পারবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে। এতে বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহনক্ষমতাও বাড়বে। বৃদ্ধি পাবে ফ্লাইট অপারেশনের সংখ্যা। ভবিষ্যতে কক্সবাজারসংলগ্ন মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশের বড় বড় এয়ারলাইন্সের এয়ারক্রাফটও অবতরণ করতে পারবে কক্সবাজারে।