বিশেষ প্রতিবেদক, নাটোর
অপরাধ না করেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আইনজীবীর গাফিলতির কারণে ১৮ বছর ধরে মামলার ঘানি টানছেন বাবলু শেখ নামের হতদরিদ্র এক ব্যক্তি। এছাড়া ৫৯দিন জেলও খেটেছেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের সিংড়া উপজেলার আঁচলকোট গ্রামে। আদালতের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে বাবলু শেখ এখন ক্লান্ত। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর মামলার রায়ের দিন ধার্য করেছে আদালত। তবে সে দিনই বাবলু শেখ এই মামলা থেকে মুক্তি পাবে বলে প্রত্যাশা আইনজীবী ও এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, ২০০১ সালের ১৫ এপ্রিল নাটোর সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে একটি মারামারির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় কাজী আবদুল মালেক বাদী হয়ে শ্রী বাবুসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ৩ নম্বর আসামী ছিলেন শ্রী বাবু। তৎকালীন সদর থানার উপ-পরিদর্শক মমিনুল ইসলাম এবং হেলেনা পারভীন শ্রী বাবুকে অভিযুক্ত করে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। কিন্তু ২০০২ সালের ৭ নভেম্বর শ্রী বাবুর পরিবর্তে সিংড়া উপজেলার আঁচলকোট গ্রামের বাবলু শেখকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠায়। পরবর্তীতে ভুলের বিষয়টি আদালতকে অবহিত না করে ১৩ নভেম্বর আসামির আইনজীবী লুৎফর রহমান বাবু বাবলু শেখের জামিন করান শ্রী বাবু পরিচয়েই। এরই মধ্যে দুই দফায় ৫৯ দিন জেল খাটতে হয় বাবলু শেখকে। এলাকাবাসি বলছেন, শ্রী বাবু ও বাবলু শেখের নাম, গ্রোত্র আলাদা হওয়ার পরও একজন নিরাপরাধ মানুষ দীর্ঘ ১৮ বছর হয়রানির স্বীকার হওয়াটা দুঃখজনক।
এদিকে ১৫ বছর আগে মারা যান বাদি আবদুল মালেক। তার পরিবারের সদস্যরা মামলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেননা বলেন তারা। অপরাধ না করেও দিনের পর দিন আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে নিঃস্ব বাবলু শেখের পরিবার। আর মামলা চালাতে গিয়ে হতদরিদ্র পরিবারটির জোটেনি আহার- বন্ধ হয়ে যায় সন্তানদের লেখাপড়া। মামলার হয়রানি থেকে মুক্তি চায় বাবলু শেখ ও পরিবারের সদস্যরা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবলু শেথ জানান, মিথ্যে মামলার হয়রানির থেকে তিনি মুক্তি চান। বাকি জীবনটা সবাইকে নিয়ে সুখে শান্তিতে কাটাতে চান।
বাবলু শেখের মেয়ে বলেন, মামলার টাকা জোগার করতে করতে তারা দারিত্রদার কষাঘাতে জর্জরিত। অভাব অনটনে তিন বোন আর এক ভাইয়ের লেখাপড়া হয়নি।
বাবলু শেখের স্ত্রী মিনু বেগম জানান, এখন শুধুই মিথ্যে মামলা থেকে মক্তির অপেক্ষায় আছেন তারা।
বাবলু শেখের বর্তমান আইনজীবী শামীম উদ্দিন জানান, ২০১৬ সালের ২৩ জুন মুখ্য বিচারিক হাকিম মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী আসামি বাবুর বিরুদ্ধে দুই বছর সশ্রম কারাদন্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে। ওই দিন কাঠগড়া থেকে বাবলু শেখকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে ২০১৬ সালের ১৬ আগষ্ট আপিলের মাধ্যমে জামিনে বের হন। মামলার দুইজন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আগের আইনজীবী লুৎফর রহমান বাবুর গাফিলতির কারণে বিনা দোষে কারাভোগ করতে হয়েছে বাবলু শেখকে
তবে আগের আইনজীবী লুৎফর রহমান বাবুর কাছে মামলা সম্পকে জানতে চাইলে তিনি ঘটনাটি ভুলে গেছেন বলে জানান।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট মুক্তার হোসেন জানান, বিনাদোষে কারাভোগের বিষয়টি মানবাধিকার লংঘন। এছাড়া বিনা অপরাধে হয়রানির কারণে বাবলু শেখকে ক্ষতিপুরন দেওয়ার দাবী জানান তারা।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিনের ঘটনা হওয়ায় এ বিষয়টা তার জানা নেই। মামলার নথিপত্র দেখে কি ঘটনা ঘটেছিল তা বলা যাবে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।