নিউজ ডেস্ক:
ঢাকার কল্যাণপুরের ১৫৩ একর জলাশয় ঘিরে তৈরি হচ্ছে আরেক দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল। পানির আধার তৈরির পাশাপাশি বহুমুখী শিক্ষা ও বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এখানে ৬০ একর জায়গা পুরোপুরি জলাধার হিসাবে রাখা হচ্ছে। বর্ষার মৌসুমে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি ও শেরেবাংলা নগর এলাকার বৃষ্টির পানি ৬ ঘণ্টা ধারণ করতে পারবে। পরে প্রয়োজনে অতিরিক্ত পানি পাম্পিং করে তুরাগ নদে ফেলতে পারে। এর ফলে ওই অঞ্চলের ৩০ লাখ মানুষ জলজট ও জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে। আর ঢাকাবাসীর সুস্থ বিনোদনের এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। শিগগির প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে। এ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় চিন্তা করা হয়েছে ৯০০ কোটি টাকা।
ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ঢাকার ওই অঞ্চলের জলজট ও জলাবদ্ধতা নিরসন এবং ঢাকাবাসীর বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করতে কল্যাণপুরে জলাশয়কে হাতিরঝিলের আদলে দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, সরকারের ওই জায়গাটি নানাভাবে বেদখল হয়ে রয়েছে। প্রথমে দখলদার উচ্ছেদ করা হবে। পরে সেখানে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আশপাশের এলাকার পানি নিষ্কাশন সমস্যার সমাধান হবে এবং ঢাকাবাসীর বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হাতিরঝিল প্রকল্পের পানি দূষণসহ অন্য ক্রুটিগুলো পর্যালোচনা করে শুরু থেকেই সেসব বিষয় মাথায় রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে প্রকল্পের পরামর্শক এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব যুগান্তরকে বলেন, কানাডিয়ান একটি কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভিত্তি স্থপতি লিমিটেড ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে। এ ছাড়া পানি নিষ্কাশন ও পানির ধারণক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) কাজ করছে। সমন্বিতভাবে একটি ভালো প্রকল্প তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের মধ্যে পানিকে কেন্দ্র করে বিনোদন কেন্দ্র তৈরি, সাঁতার শেখার সুযোগ, কৃষি জ্ঞান অর্জনের সুযোগ, তরুণ ও তরুণীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বোট ক্লাব, ফুডকোর্ট, প্রজাপতি গার্ডেন, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনা করার চিন্তা করা হচ্ছে। ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ জানায়, কল্যাণপুর জলাধারে জমির পরিমাণ ১৭১ একর। এর মধ্যে ৯৯ একর জমির মালিক কৃষি বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানা ৬ একর, ঢাকা ওয়াসার অধিগ্রহণকৃত জমির পরিমাণ ৫৩ একর, খাসজমি ১৩ একর। খাল, ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা ও পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব পাওয়ার পর ওই জলাধার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে ডিএনসিসি। আর যেসব সংস্থার ওই জমির মালিকানা রয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে ডিএনসিসি।
প্রকৌশল বিভাগ আরও জানায়, জলাশয়টি নতুন করে খনন করে পাড় বাঁধাই করা হবে। ওইপাড়ে নির্মিত হবে ১১ কিলোমিটার সড়ক। ব্রিজ, ভায়াডাক্ট, সুবজ বেষ্টনী, ওয়াকওয়ে, বসার স্থানসহ নানামুখী আয়োজন করা হবে। বেগুনবাড়ি খাল ও হাতিরঝিলের ৩০২ জায়গা অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে রক্ষা করে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে সরকার ২০০৭ সালে হাতিরঝিল প্রকল্প গ্রহণ করে। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৪৭৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১০ সালের জুনে। প্রথম দফা সংশোধনীতে এক বছর সময় বাড়ার সঙ্গে ব্যয় বাড়ে আট কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় দেড় বছর মেয়াদ বেড়ে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় এক হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এ দফায় ব্যয় বাড়ে ৪৯০ কোটি টাকা। তৃতীয় দফায় আরও ২৬৫ কোটি টাকা যোগ হয়ে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় দুই হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। পরে মেয়াদকাল বাড়ানো হলেও ব্যয় বাড়ানো হয়নি।
ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাতিরঝিল প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্রটি-বিচ্যুতি থেকে শিক্ষা নিয়ে ডিএনসিসি শুরুতে সেসব দুর্বলতার ব্যাপারে সতর্ক থাকলে কম সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে। এটা করা সম্ভব হলে দ্রুততম সময়ে ঢাকাবাসী ওই প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।