নিউজ ডেস্ক:
ধরুন, স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে জানা গেল কৃষিকাজসম্পর্কিত নানা তথ্য। যেমন কোন এলাকায় কখন কী পরিমাণ বৃষ্টি হবে, কোন কৃষিতে কতটুকু পানি প্রয়োজন, কোন সময় দেশের কোন এলাকায় কী পরিমাণ খাদ্যশস্যের উৎপাদন হতে পারে ইত্যাদি। এসব বিশ্লেষণ করে খাদ্য মজুতের পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াও দুর্যোগকালীন খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এ রকম একটি ধারণা নিয়েই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দল ‘টেক নার্ডস’ অংশ নিয়েছিল আর্থ অবজারভেটরি ড্যাশবোর্ড হ্যাকাথন প্রতিযোগিতায়। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) ও জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি এই প্রতিযোগিতার আয়োজক। সেখানে অংশ নিয়ে টেক নার্ডস জিতে নিয়েছে ‘অনারেবল মেনশন’। টেক নার্ডসের চার সদস্য হলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশলের ছাত্র সৈয়দ তাওসিফ ইসলাম, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের আনিকা রাহনুমা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রাবেয়া আক্তার ও সাফাইদ হোসেন।
বিশ্বের ১৩২টি দেশ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এ বছর জুনের শেষে সাত দিনব্যাপী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল, স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করে সমস্যা শনাক্ত করা এবং সে অনুযায়ী সমাধান দেওয়া—যা মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলো ব্যবহার করতে পারে।
সৈয়দ তাওসিফ ইসলাম বলেন, ‘প্রায় দেড় বছরের মহামারিতে আমাদের মতো কৃষিপ্রধান দেশ বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই আমরা যদি আবহাওয়া ও আমাদের দেশের মাটির পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করতে পারি, তাহলে পরের বছরের ফসল উৎপাদন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে ফসল তোলার মৌসুমে একটি বাস্তবসম্মত কার্যকর পরিকল্পনা তৈরি করা যাবে।’ তাওসিফ মনে করেন, বেকার জনবলকে কীভাবে, কতখানি কৃষি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যায়, সে সম্পর্কেও ধারণা দেবে তাঁদের এই প্রকল্প।
আনিকা রাহনুমার মতে, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই পদ্ধতি কাজে লাগবে। তিনি বলেন, ‘কৃষিভিত্তিক দেশের নাগরিক হিসেবে সহজাতভাবে আমাদের মধ্যে একটা দায়িত্ববোধ তৈরি হয়। খাদ্য সরবরাহব্যবস্থায় করোনার নেতিবাচক প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করেছে। সুতরাং এটা সত্যিই বড় সমস্যা। কিন্তু যদি আমরা আমাদের প্রকল্পের ওপর ভিত্তি করে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আমরা একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারব।’
দলের সদস্য রাবেয়া আক্তার জানান, প্রতিযোগিতার জন্য তাঁদের স্পেন ও জার্মানির ২০২০ ও ২০২১ সালের তথ্য দেওয়া হয়েছিল। ‘আমরা ২০২০ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে ২০২১ সালে কী পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদিত হতে পারে, তার পরিমাণ একটি মেশিন লার্নিং মডেলের মাধ্যমে নির্ভুলভাবে বের করার চেষ্টা করেছি,’ বলেন রাবেয়া।
এক সপ্তাহের প্রতিযোগিতার শুরুতেই প্রতিযোগীরা ঠিক করে নিয়েছিলেন, কোন সমস্যা নিয়ে তাঁরা কাজ করতে চান। সময়টা অল্প হলেও নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ঠিক করে নিতে হয়েছে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা টেক নার্ডসকে সামনে আরও কার্যকর পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে বলে জানান দলের সদস্যরা।