নিউজ ডেস্ক:
জাতির পিতা হত্যার পেছনের ষড়যন্ত্রকারীরা একদিন আবিষ্কার হবেই- এমন দৃঢ়তার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ যেন কোনো দিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্যই ’৭৫-র ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তবে আমার অবাক লাগে যে, এর সঙ্গে আমাদের যারা তারা কি করে জড়িত থাকল? হত্যার বিচার করেছি। তবে এই ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা সেটা এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে সেটা একদিন না একদিন আবিষ্কার হবে এটা ঠিক। বাঙালিরা তাকে হত্যা করবে- এমন কথা তিনি কোনো দিনই বিশ্বাস করেননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গতকাল রবিবার দুপুরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্ত ও প্লাজমা দান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি। আলোচনা সভার সঞ্চালনা করেন কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু। এ সময় গরিব ও দুঃস্থদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। রক্ত ও প্লাজমা দান কর্মসূচিরও উদ্বোধন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে আমার একটাই কাজ, প্রত্যক্ষভাবে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচার করা আর সব থেকে বড় কাজ হলো দেশটাকে নিয়ে, মানুষগুলোকে নিয়ে জাতির পিতা যেই স্বপ্ন দেখেছিলেন, দেশের মানুষের উন্নয়ন করা, সেই উন্নয়ন করাকে আমি সব থেকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। তাই পেছনে কে ষড়যন্ত্র করেছে, কি করেছে সেদিকে আমি না গিয়ে আমার প্রথম কাজ হচ্ছে এই ক্ষুধার্ত, দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের জীবনমান উন্নত করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবার অগাধ বিশ্বাস ছিল এই বাংলাদেশের মানুষের প্রতি। তিনি সব সময় বিশ্বাস করতেন বাঙালিরা কখনো তার গায়ে হাত দিতে পারবে না। পাকিস্তানিরা যখন চেষ্টা করে তাকে হত্যা করতে পারেনি। বাঙালিরা কেন তাকে মারবে। অনেকেই অনেকভাবে তাকে বলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা কখনো বিশ্বাস করেননি। তিনি বলতেন, এরা আমার সন্তানের মতো- এরা কেন আমাকে মারবে? আর সেই বিশ্বাসে চরম আঘাত দিল। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো।
পিতা হত্যার বিচার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট আমরা যারা স্বজন হারিয়েছি। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে পিতা
হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার আমাদের ছিল না। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে এই খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল। খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়। ব্যবসা করার সুযোগ দেয়। বিপুল অর্থের মালিক করে দেয়। জিয়ার পথ ধরে জেনারেল এরশাদও এই খুনিদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীও করে। এমনকি ভোট চুরি করে পার্লামেন্টের মেম্বারও করে। খালেদা জিয়াও ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে ভোট চুরি করে তাদের সংসদ সদস্য বানায়। ৯৬ সালে সরকারে এসে আমরা এই অধ্যাদেশ বাতিল করে খুনিদের বিচারকার্য শুরু করি। যেদিন বিচারের রায় হবে। সেদিন ছিল ৮ নভেম্বর। খালেদা জিয়া তখন বিরোধী দলে। হরতাল ডেকেছিল। যাতে কোনো মতেই বিচারক কোর্টে যেতে না পারে। বিচারের রায় দিতে না পারে। কিন্তু সেই বিচারের রায় হয়েছিল। এর মধ্যে যাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছিল। দুজন খুনিকে আমরা থাইল্যান্ড ও আমেরিকা থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসি। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে এই বিচারের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। খুনিদের আবার পৃষ্ঠাপোষকতা দিয়েছিল। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আমরা তাদের বিচারের রায় কার্যকর করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ধাপে ধাপে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেন কিন্তু পাকিস্তানি শাসক চক্র বা এ দেশেরও কিছু পাকিস্তানি দালাল চক্র বা তাদের খোশামুদি, তোষামোদকারী, পদলেহনকারী কিছু বাঙালির এই অভ্যুদয় বা বিজয়কে কখনো মেনে নিতে পারেনি। দুঃখজনক হলো, নিজের দলের ভেতরে খন্দকার মোশতাক যেমন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল আবার অনেকেরই তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল। আর এই ঘটনা ঘটাতে হলে সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্যকে ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ে যদি তাদের পক্ষে কেউ না থাকে এটা কখনো সম্ভব ছিল না।