নিউজ ডেস্ক:
পুলিশে প্রায় ১০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে আগামী সেপ্টেম্বরে। দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্সে রেখে এই নিয়োগ হবে সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতিতে। পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি), ১৯৪৩-এর কিছু প্রবিধান সংশোধন করে কনস্টেবল ও নারী কনস্টেবলদের ন্যূনতম উচ্চতা ২ ইঞ্চি করে বাড়ানো হয়েছে। আগের মতো আবেদন করলেই ডাকা হবে না পুলিশ লাইনে। উচ্চতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সম্ভাব্য যোগ্য প্রার্থীদের অটো স্ক্রিনিং করে অধিকতর যোগ্যদের ডাকা হবে। নিয়োগ বিধিতে এবারই প্রথম কণ্ঠস্বর পরীক্ষাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব বিষয়ে পুলিশ সদর দফতর পিআরবি সংশোধন সংক্রান্ত প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরই মধ্যে প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়েছে, যা দু-এক দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ হবে। শুধু কনস্টেবল নয়, এসআই, টিএসআই ও সার্জেন্টদের নিয়োগ বিধিও সংশোধন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন ও প্ল্যানিং) মো. হায়দার আলী খান বলেন, ‘বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন দক্ষ পুলিশ প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই। আমরা এমন একটি নিয়োগ চাই, যাতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য ধাপে ধাপে নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। এ জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত নিয়োগ পদ্ধতি, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, উপযুক্ত লজিস্টিকস। মানুষের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী পুলিশকে এক্ষুনি তৈরি করা না গেলে কাক্সিক্ষত ভিশন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সে কারণে নিয়োগবিধি সংস্কার ও যুগোপযোগী করা হয়েছে। জনগণের আকাক্সিক্ষত পুলিশ পেতে হলে নিয়োগে অবশ্যই দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। তাই আমরা পুলিশে যে কোনো নিয়োগে অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছি। আইজিপি মহোদয় ইতিমধ্যে জনগণের কাক্সিক্ষত পুলিশ পেতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। পুলিশ সদর দফতর সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কাজ করছে।’
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ) মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, নতুন পদ্ধতিতে যোগ্যতার কিছু প্যারামিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পদ্ধতি যুগোপযোগীকরণের জন্য পুলিশ রেগুলেশন ১৯৪৩-এর সংশ্লিষ্ট প্রবিধান সংশোধন করা হয়েছে। কনস্টেবল পদে পুরুষ প্রার্থীর উচ্চতা আগে ছিল ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। এখন থেকে কনস্টেবল পদপ্রার্থীদের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি হতে হবে; বুকের মাপের ক্ষেত্রে ৩১ ইঞ্চি সাধারণ ও বর্ধিকরণ ৩৩ ইঞ্চি থাকতে হবে। কনস্টেবল নারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে আগে উচ্চতা নির্ধারিত ছিল ১ দশমিক ৫৮ মিটার বা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। নতুন বিধিতে তা পরিবর্তন করে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি করা হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে দৈনিক সংবাদপত্রের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। অনলাইনে নেওয়া আবেদন উচ্চতার ভিত্তিতে ৫০ শতাংশ ও শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে শতাংশ (পয়েন্ট স্কেল অনুসরণ করে) প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং শেষে অধিক উচ্চতাসম্পন্ন এবং ভালো ফলাফল অর্জনকারী প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা হবে। দৌড়, রোপ ক্লাইম্বিংয়ের পাশাপাশি হাইজাম্প, লংজাম্প, পুশআপ, সিটআপ এবং ড্র্যাগিং অন্তর্ভুক্ত ও উত্তীর্ণ হওয়ার প্যারামিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঠ ব্যবস্থাপনায় পুলিশ সদস্যদের উচ্চতার পাশাপাশি সুঠাম দেহের অধিকারী ও সক্ষমতা সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু ভিন্ন এবং ব্যতিক্রম হওয়া বাঞ্ছনীয়। যাতে হাজার মানুষের মধ্যেও সহজে একজন পুলিশকে চেনা যায়।
প্রজ্ঞাপনের খসড়া থেকে জানা গেছে, নতুন নিয়মে আরও যেসব সংশোধনী আনা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, পুরুষের ক্ষেত্রে প্রচলিত দৌড় ২৮ সেকেন্ডে ২০০ মিটার এবং সাড়ে ৬ মিনিটে ১৬০০ মিটার ও মহিলা ৩৪ সেকেন্ডে ২০০ মিটার হারে ৬ মিনিটে মধ্যে ১০০০ মিটার হতে হব। হাই জাম্প বা উচ্চ লাফ পুরুষ-৩ দশমিক ৬ ফুট এবং মহিলা ২ দশমিক ৬ ফুট ন্যূনতম হতে হবে। দড়ি বেয়ে ওপরে উঠা বা রোপ ক্লাম্বিং পুরুষ ১২ ফুট, মহিলা ৮ ফুট, পুশআপ পুরুষ ৩০ সেকেন্ডে ১৫ বার, মহিলা ৩০ সেকেন্ডে ১০ বার। ড্র্যাগিং (কনুই দিয়ে এগিয়ে চলা) পুরুষ ১৫০ ফাউন্ড নিয়ে ৩০ ফুট, মহিলা ১১০ ফাউন্ড নিয়ে ২০ ফুট। নতুন নিয়মে লিখিত পরীক্ষার জন্য পুলিশ সদর দফতর এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করবেন এবং উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন। ৫০ শতাংশ নম্বর প্রাপ্ত প্রার্থীদের মৌখিক ও শারীরিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে।
পুলিশ সদর দফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ‘কতজন কনস্টেবল নিয়োগ হবে সেটি নির্ধারণ করা হবে পিআরবির সংশোধিত প্রজ্ঞাপন হওয়ার পর। তবে প্রাথমিক হিসাবে প্রায় ১০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হবে। নিয়োগে স্বচ্ছতার জন্য পুলিশ সদর দফতর রেঞ্জভিত্তিক শক্তিশালী কমিটি করে দেবে। তাদের কাজ হবে কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেওয়া। এ ছাড়া নিয়োগে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাতে কোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তি পুলিশে প্রবেশের সুযোগ না পায়। সারা দেশে বর্তমানে পুলিশের সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ১৮৬। এদের মধ্যে কনস্টেবল ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৫৪ জন। দেশের জনসংখ্যার তুলনায় ৭৫১ জনের বিপরীতে একজন পুলিশ। জনগণকে সঠিক সেবা দেওয়া, জনশৃঙ্খলা ও জনশান্তি বাড়াতে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছরে ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী ওই বছর পুলিশের পলিসি গ্রুপের সভায় ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই এসআই ও সার্জেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে।