বিশেষ প্রতিবেদক:
নাটোরে সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ছাড়া অপর চার সংসদ সদস্য একাট্টা হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সভায় সাংসদ শিমুল ছাড়া জেলার চার সংসদ সদস্য সবাই যোগ দিয়েছিলেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে সেই ভার্চুয়াল সভায় সাংসদ শিমুলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সংসদ সদস্য গণ ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান এতে যোগ দেন। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পৌর মেয়র উমা চৌধুরীও এতে যোগ দেন।
এতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, নাটোরের রাজনীনিতে আর কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। কারও একক অধিপত্য আর মানা হবেনা। কেউ দল নিয়ে বিশৃংখলা তৈরী করলে তাকে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে। কোন ক্যাডার রাজনীতির স্থান নেই। দল নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলবেন না, এখনই সময় ভাল হয়ে যাওয়ার। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবকলীগের ২৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা সভায় নাটোরের চার সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলকে উদ্দ্যেশে করে এমন হুশিয়ারী দিয়েছেন।
জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আযম স্বপনের পরিচালনায় এবং সভাপতি খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ ডলারের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, নাটোর-নওগাঁর সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রত্না আহমেদ।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, শেষ বয়সে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দলের সভাপতি বানিয়েছেন। আমি সভাপতি হওয়ার পর জেলা আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার জন্য বাড়ি ভাড়া নেই। কিন্তু অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমাকে নাটোরে বাড়ি ভাড়া নিতে দেয়নি। এছাড়া দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এই শেষ বয়সে আর কত লাঞ্ছনার শিকার হবো। আজকে স্বেচ্ছাসেবকলীগে যাদের কমিটি দেওয়া হয়েছে, তাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। কারণ কেন্দ্র কমিটি দেওয়ার আগেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমি একবাক্য বলে দিয়েছি, যাদের নাম বলা হচ্ছে, তারা সবাই ত্যাগী।
জেলার রাজনীতির বিষয় এড়িয়ে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দিক নির্দেশনায় আইসিটি সেক্টরে ১৫লাখ তরুণ তরুনীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আগামীতে আরও ২০লাখ তরুণ-তরুনীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হবে। তাছাড়া আগামী দিনে স্বেচ্ছাসেবকলীগ যাতে এই করোনা মহামারীর মধ্যে সাধারণ মানুষদের মাঝে দাঁড়াতে পাওে সেজন্য ৫০হাজার মাস্ক দেওয়া হয়েছে। আগামীতে সঠিক নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে নব-গঠিত কমিটি।
অনুষ্ঠানে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, নাটোর জেলার রাজনীতি আর এভাবে চলতে পারে না। আওয়ামী লীগ তথা প্রধানমন্ত্রীর ভাবমুর্তি নষ্ট করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেই স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতারা কমিটি দিয়েছেন। কিন্তু সংবাদ সম্মেলন করে এই কমিটিকে অগণতান্ত্রিক বলা হচ্ছে। তার মানে তারা বলছে তারা প্রধানমন্ত্রীকে মানেন না। কমিটি তো আরও দিয়েছে, কোথাও তো এমন হয়নি। চেয়ার পেয়েছেন, মানে যা খুশি তাই করবেন, তা হবে না। বিগত ২৪বছর ধরে কমিটিতে ছিলেন, কি করেছেন, একটা কাউন্সিলও করতে পারেননি। দলও গতিশীল হয়নি।
নাটোর-নওগাঁ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রত্না আহমেদ বলেন, আমার প্রতি অন্যায় অবিচার করা হচ্ছে। আমার প্রোগ্রামে এমপি শিমুলের নাম করে বাধা প্রদান করা হয়। আমি কি বিএনপির এমপি, যে আমাকে বাধা প্রদান করবে। আর কোন ছাড় নাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাইবো। পাশাপাশি নাটোরে যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে তাদের গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি। আজ আমার বাবার বাড়ির এলাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উদ্বোধন করা হয়েছে সেখানে আমাকে দাওয়াত দেয়া হয়নি।
অনুষ্ঠানে নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরি জলি নবগঠিত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ এর কমিটির সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এখন আদর্শচ্যুত আওয়ামী লীগ। অভ্যন্তরীণ কোন্দল সমাধান করবে কে? আওয়ামী লীগ অফিসে পুলিশ থাকবে কেন? আমাদের কোথাও কোন মূল্যায়ন করা হয় না। আমি বিনীত অনুরোধ করছি এই নোংরা রাজনীতি বাদ দেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তজা আলী বাবলু, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ইমরান সোনার, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিয়ন হোসেন সহ অন্যন্যরা ।