মুক্তমত:
গত ০৮ তারিখে মহান জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতির জনকের কন্যা,জননেত্রী শেখ হাসিনা সদ্য প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শোক প্রস্তাবের উপরে আলোচনার মাঝে হঠাৎই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন ছাত্র নেতার মুক্তির প্রসঙ্গে কথা বললেন। শোনার সাথে সাথে আমার নিজের অনুভূতিতে একটু ধাক্কা অনুভব করলাম। আমার স্মৃতিপটে ভেসে ওঠলো সেই সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন ছাত্র নেতার বিচার চলাকালীন সময়ে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ রাজশাহী আসবেন স্টেডিয়াম উদ্বোধন করতে। আমি সহ আরো চারজন ছাত্র নেতাকে তৎকালীন বগুড়ার উপ আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসক মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম সাহেব সার্কিট হাউসে নিয়ে গিয়ে প্রস্তাব দিলেন যে তার কোর্টে আমাদের মামলা চলছে, এবং সেই মামলা থেকে তিনি আমাদের খালাস করে দিবেন। কিন্তু শর্ত একটাই যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজের পক্ষে থেকে রাজশাহীতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ওয়েলকাম জানাতে হবে। কিন্ত আমরা সেদিন মাথা নত করি নাই। আমরা বলেছিলাম জেল,জুলুম যাই হোক আমরা এটা করতে পারবো না। যাই হোক তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়া যথারীতি আমাদের যাবৎজীবন সহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে ছিলো। পরবর্তীতে জেল হওয়া পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার আমাদের বললেন তোমরা একটা মার্সিপিটিশন দাও আমরা মাফ করে দিবো। দেয়ালেরও কান আছে বলে সেদিন আমরা কয়েক জন ছাত্র নেতা মিটিং করে বলেছিলাম কোনো ভাবেই সামরিক জান্তার কাছে কোনো দাস খাত লিখিত দেবো না।আমাদের বিশ্বাস ছিলো যে আমরা কোনো অন্যায় করি নাই।আমাদের মুক্তি আমরা পাবোই, যেহেতু আমাদের নেত্রী আমাদের সাথে রয়েছেন। এটাই নির্মম বাস্তব যে আমাদের গোপন মিটিংয়ের এই তথ্যটি পর্যন্ত সেদিন বিচারকের কাছে পৌঁছে গিয়ে ছিলো। অর্থ, চাকরি দেওয়া থেকে শুধু করে আমাদের বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়েছিলো কিন্তু আমরা কয়েক জন ছাত্রনেতা কোনো কিছুর লোভে মাথানত করি নাই। আমরা বিশ্বাস রেখেছিলাম দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার উপরে। যাই হোক পরবর্তীতে এরশাদ সাহেব সংলাপে যাওয়ার পূর্বে ঢাকায় ছিলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ প্রায় দশ,পনেরো হাজার ছাত্রছাত্রী নিয়ে বঙ্গভবনে কাছাকাছি আমরা একটা জমায়েত করেছিলাম। আমাদের প্রিয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চা পানের পূর্বে বলেছিলেন যে আগে ছাত্রনেতাদের মুক্তি দিতে হবে তারপরে বৈঠকে বসবো। আর আজকে যখন মহান জাতীয় সংসদে এ প্রসঙ্গটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন তখন এই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেলো।
আসলে আমাদের বিশ্বাস ছিলো, আস্থা ছিলোএবং ধৈর্য্য ধারণ করেছিলাম যে আমাদের প্রিয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মুক্তির কথা অবশ্যই বলবেন এবং ঠিকই তিনি আমাদের কথা বলেছিলেন। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে, তার কাণেই আমরা ১৪ জন ছাত্রনেতা স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুবিধা ভোগ করছি। যদিও সেদিনের সেই ছাত্রনেতাদের অনেকই আজ আমাদের মাঝ থেকে চিরো বিদায় নিয়েছেন।
আবুল কালাম আজাদ: এডভোকেট, নাটোর-১ আসনের সাবেক এমপি (লালপুর-বাগাতিপাড়া)