নিজস্ব প্রতিবেদক, হিলি:
দেশের চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। এরপর হিলি স্থলবন্দরসহ বেশ কয়েকটি বন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানি অনুমতি দেয় সরকার। চলতি বছরের ৯ ই জানুয়ারী থেকে চাল আমদানি শুরু করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গুলো। আমদানি শুরুর প্রথমদিকে চালের বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়লেও আবারো প্রশাসনের নজরদাড়ির অভাবে অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। আমদানি কমের অযুহাতে বন্দরে এবং স্থানীয় খুচরা বাজারে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। চার দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। লকডাউনের মাঝে হঠাৎ করে চালের বাজার অস্থির হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হিলির সাধারণ ক্রেতারা।
আজ সোমবার দুপুরে হিলি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে আমদানিকৃত সব ধরণের চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। চার দিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। স্বর্ণা-৫ জাতের চাল কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে, কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে আটাশ জাতের চাল ৪৮ টাকা, কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে মিনিকেট এছাড়াও সম্পা কাটারি জাতের চাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৭ টাকা কেজি দরে।
চাল কিনতে আসা ভ্যানচালক আলম হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে লকডাউন চলছে। আর লকডাউনে আমাদের তেমন কামায় রোজগার নেই। সব জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে চালের দাম বেড়েছে। কেজিতে ৩ -৪ টাকা বেড়ে যাওয়ায় আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছি।
চাল কিনতে আসা আমেনা বিবি বলেন, একটু সুযোগ পেলেই ব্যবসায়ীরা নানা অযুহাতে দাম বাড়িয়ে দেয়। আর কষ্ট ভোগ করতে হয় আমাদের। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ চালের বাজার মনিটরিং করলে হয়তো দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
কথা হয় আরো কয়েকজন ক্রেতার সাথে তারাও বলেন, সরকার চাল আমদানি শুরু করেছে। ভাবলাম আমরা সাধারণ ক্রেতারা কম দামে চাল কিনতে পারবো। কিসের কম দাম বাজারে দেখতেছি আরো চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাল আমদানি তো ঠিকই হচ্ছে তাহলে চালের দাম কেনো বাড়ছে সরকারকে এটি খতিয়ে দেখা দরকার।
চট্টগ্রাম থেকে হিলি স্থলবন্দরে চাল কিনতে আসা রাকিব জানান, আমি গেলো এক মাস থেকে হিলি স্থলবন্দর থেকে চাল কিনি। হঠাৎ করে ব্যবসায়ীরা চাল আমদানি কমিয়ে দিয়ে চালের দাম সিন্ডিকেট করে বাড়িয়েছে। প্রতিকেজি চালের দাম বন্দরেই ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। আমাদের চাল কিনতেও সমস্যা হচ্ছে বিক্রি করতেও সমস্যা হচ্ছে।
হিলি বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা স্বপন বলেন,আমরা বন্দর থেকে চাল কিনে বাজারে বিক্রি করে থাকি। বন্দরে প্রতিকেজি চালের দাম ২ থেকে ৩ টাকা বেশি কিনতে হচ্ছে। বন্দর থেকে বেশি দামে কিনছি আবার ঘরে চাল গুলো আনতে খরচ আছে। সবমিলিয়ে আমরা বেশি দামে কিনছি বেশি দামে বিক্রি করছি। এখানে আমাদের সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ার কোন সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক ললিত কেসেরা জানান, চাল আমদানি আগের তুলনায় কমে গেছে। যে কারনে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। চাল আমদানি কমার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারত অভ্যন্তরে যানযট অন্যদিকে চাল আমদানিতে সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হয়ে আশায় চাল আমদানি কমেছে। যার প্রভাব চালের দামে বেড়েছে।
আরো এক আমদানিকারক বিকাশ চন্দ্র বলেন,সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে চাল আমদানি করতে না পারলে ২৫% শুল্কের বিপরীতে ৬০% শুল্ক দিয়ে চাল ্আমদানি করতে হবে। আর ৬০% শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করলে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হবে। তাই আমরা চাল লোডিং কমিয়ে দিয়েছি। সরকার যদি চাল আমদানির সময়সীমা বেড়ে দেয় তাহলে চাল আমদানিও বাড়বে সেই সাথে বাজারে চালের দাম কমে আসবে।
হিলি কাস্টমসের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের ৯ তারিখ থেকে চাল আমদানি শুরুর পর গেলো ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতীয় ৩ হাজার ৪শ ৭৩ ট্রাকে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫শ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে এই বন্দর দিয়ে। যা থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১শ ৩০ কোটি ৬ লক্ষ টাকা।