নিউজ ডেস্ক:
রাজধানীর মহাখালীতে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য আজ থেকে চালু হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। এ হাসপাতালের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল’। এখানে ১ হাজার সাধারণ শয্যার পাশাপাশি ১০০ শয্যার আইসিইউ ও ১১২টি এইচডিইউ শয্যা স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থাও রয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আজ বেলা সাড়ে ১১টায় হাসপাতালটি উদ্বোধন করবেন। এরপর শুরু হবে রোগী ভর্তি। গতকাল গিয়ে দেখা যায়, মহাখালী কাঁচাবাজারের জন্য নির্মিত ছয় তলা ভবনে হাসপাতাল স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ। এর মধ্যে দ্বিতীয় তলায় স্থাপন করা হয়েছে জরুরি বিভাগ। এ বিভাগে ৫০টি শয্যা রয়েছে। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলার দোকানগুলোয় দুটি করে শয্যা বসানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি ফ্লোরের ফাঁকা জায়গায় কাচ দিয়ে বড় একটি কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। এ কক্ষটিতে ২৫টি শয্যা রয়েছে। এখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ছয় তলায় পৃথক কয়েকটি কক্ষ নিয়ে আইসিইউ ও এইচডিইউ শয্যা স্থাপন করা হয়েছে। ডিএনসিসি
ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ হাসপাতালে ১ হাজার ২০০-এর বেশি শয্যা স্থাপনের সক্ষমতা আছে। তবে রবিবার (আজ) থেকে আংশিকভাবে ২৫০ শয্যা চালু করা হবে। এর মধ্যে ৫০টি আইসিইউ, ৫০টি শয্যা জরুরি রোগীদের জন্য এবং ১৫০টি সাধারণ শয্যা রোগীদের জন্য চালু করা হবে। সাধারণ শয্যা হলো কভিড আইসোলেশন রুম। এ রুমগুলোয় আপাতত একজন করে রোগী রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।’ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশন-ডিএনসিসির মহাখালী কাঁচাবাজারের ছয় তলাবিশিষ্ট ১ লাখ ৮০ হাজার ৫৬০ বর্গফুট আয়তনের ফাঁকা ভবনে এ হাসপাতাল চালু করা হচ্ছে। এত দিন মার্কেটটি করোনা আইসোলেশন সেন্টার ও বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার ল্যাব হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এখন করোনা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হলেও পৃথকভাবে ওই সেবা কার্যক্রমগুলোও চলবে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন আরও বলেন, ‘এর মধ্যে ১৫০ জন চিকিৎসক ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে যোগদান করেছেন, নার্স যোগদান করেছেন ২০০ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ৩০০ জনের মতো। এ ছাড়া এ হাসপাতালে সেনা, বিমান ও নৌ বাহিনীর প্রায় ১৫০ জন চিকিৎসক ও বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ কর্মী সহযোগিতা করছেন। হাসপাতালটি আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে। সার্বিক সহযোগিতা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ডিএনসিসি এ ভবন দিয়ে সহযোগিতা করছে।’ তিনি বলেন, ‘এ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় জোর দিয়ে ২১২টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র রাখা হয়েছে। এটা দেশের সবচেয়ে বড় করোনা হাসপাতাল হতে চলেছে। আমরা যদি পর্যাপ্ত জনবল পাই তাহলে অনেক ভালো সেবা দিতে পারব। করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য এত বড় হাসপাতাল দেশের আর কোথাও নেই। এত বড় হাসপাতাল চালাতে কী পরিমাণ জনবল প্রয়োজন তা বুঝতেই পারছেন। আমরা আজ ২৫০ শয্যা চালু করছি, আগামী সাত দিনের মধ্যে ৫০০ শয্যা চালু করতে পারব। বাকি শয্যাগুলো আশা করছি এ মাসের মধ্যেই চালু করতে পারব।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে হাসপাতালগুলোয় চাপও বেড়েছে। ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে ১ হাজার ২০০-এর বেশি শয্যা চালু করা হবে। এ হাসপাতালটি আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে। এখানে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে সহযোগিতা করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর। এ হাসপাতাল চালু হলে করোনা আক্রান্তদের সেবাদান জোরদার হবে বলে প্রত্যাশা করি।’ গত বছরের ৯ আগস্ট করোনা আইসোলেশন সেন্টার পরিদর্শনে গিয়ে মহাখালীর এ মার্কেটটিকে ৫০০ শয্যার আরবান (নগর) হাসপাতালে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছিলেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘৭ দশমিক ১৭ একর জমির ওপর ডিএনসিসি মার্কেট মূলত পাইকারি কাঁচাবাজারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। এখন একে কীভাবে আরবান হাসপাতালে রূপান্তর করা যায় আমরা তার পরিকল্পনা করছি। এ ভবনকে আমরা যদি আরবান হাসপাতালে রূপান্তর করতে পারি তাহলে নগরবাসীর অনেক সুবিধা হবে।’