রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪
নীড় পাতা / ফিচার / রাজাকারদের সুরক্ষায় পাহারার ব্যবস্থা!

রাজাকারদের সুরক্ষায় পাহারার ব্যবস্থা!


হামিদুর রহমান মিঞা:
দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের আগমন বার্তায় শান্তি কমিটি, আলবদর বাহিনী ও রাজাকারেরা ভীত সন্ত্রস্ত। এ সময় গ্রামে গ্রামে রাতের বেলায় পাহারা (ডিউটি) দেওয়ার জন্য ফরমান জারি হয়। দলে দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন রাতে পাহারা শুরু করে। সেই সময় দেশে বড় বন্যায় ফসলাদীর ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছিল। বন্যায় আবাদের ক্ষতি হলেও পাকবাহিনীর হাত থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছিলাম। সাঁতার না জানার কারনে পাকবাহিনী গ্রামাঞ্চলে আসতে পারতোনা। মুক্তিযোদ্ধারা নৌকার মাঝি সেজে ঘাটে অবস্থান করত। কোন কারণে পাকবাহিনীর আর্মিরা কোথাও যেতে চাইলে মুক্তিবাহিনীর সদস্য মাঝি বেশে তাদের নিয়ে মাঝ নদীতে অথবা বিলের মধ্যখানে ডুবায় মারত। সেই কারনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা গ্রামে আসা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল। কিন্ত রাজাকারেরা স্ব স্ব এলাকায় পাহারার ব্যবস্থা করে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল।

একদিকে বড় বর্ষা অন্যদিকে রোজার সময় হওয়ায় মানুষের পাহারা দেওয়া কষ্টসাধ্য ছিল। রোজা রেখেও মানুষ রাজাকারদের আদেশ পালন করতে বাধ্য ছিল। একদিন আমার ভাই হাফিজুর রহমান, মামাতো ভাইয়েরা আঃ রাজ্জাক, সোলায়মান আলী, হযরত আলী সাথে পাড়ার সায়েত আলী ও হলদ আলীকে নিয়ে পাহারা দিচ্ছে। শেষ রাতে সেহরী খেয়ে তারা আবার পাহারা দেওয়ার নিমিত্তে রওনা হয়। কিছুক্ষন পরেই আমার ভাই কাঁদো কাঁদো স্বরে বড় ভাই হাবিবুর রহমান মিঞাকে ডাক দেয়। বড় ভাই উঠে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে? উত্তরে সে জানায় আমরা এক পাক ডিউটি দিয়ে আমাদের ভিটায় মাচাঙয়ের উপরে শুয়ে আছি এমন সময় রাজাকারেরা লোকমান সর্দারের বাড়িতে যাওয়ার সময় আমাদেরকে চর থাপ্পর মেরেছে। কথা শোনার সাথে সাথে বড় ভাই অগ্নিশর্মা হয়ে রওয়ানা দেন। রাজ্জাক মাস্টার ও লোকমান সরদারের বাড়িতে গিয়ে বড় ভাই তাদের নিকট জানতে চায় কে পাহারাদারদের গায়ে হাত তুলেছে। কেউ আর কথা কয়না শেষে রাজাকার কমান্ডার আঃ কাদের মাস্টার অন্য রাজাকারদের ধমক দিয়ে বলে উঠে শালাদের পাহারা দেওয়ার জন্য জনগন রাত জাগছে আর শালারা তাদেরকেই মারছে! মেঝ ভাই ও অন্যরা দেখিয়ে দেও মুখে বসন্তের দাগ আছে উনি আর কালো করে রাজাকারটা তাদেরকে মেরেছে। তাদের পরিচয় হলো একজন আঃ করিম শিকদার চেয়ারম্যানের ভাগিনা আবুল হোসেন আর অপরজন আক্কেলপুর এলাকা থেকে উঠে আসা উতরিয়া আবুল হোসেন খান।

পরিশেষে বড় ভাই হাবিবুর রহমান মাস্টার তাদের কমান্ডার আঃ কাদের মাস্টারকে জানিয়ে দেয় আমার ছেলেরা আর তোমাদের জন্য পাহারা দিবেনা। কাদের সাহেব ভাইকে বলে হাবিবুর তুমি আগামীকাল স্কুলে এসো চেয়ারম্যানকে বলে সব ব্যবস্থা করব। তখনও কাদের মাস্টার পাটুল হাপানিয়া হাই স্কুলের পাঠদান চালাতেন। আমার বড় ভাই হাবিবুর রহমান মিঞা ঐ স্কুলেরই শিক্ষক। পরের দিন ভাই স্কুলে গেলে কাদের মাস্টার ভাইকে সাথে নিয়ে চেয়ারম্যানের নিকট গতরাতের ঘটে যাওয়া ঘটনা জানায়। চেয়ারম্যান করিম শিকদার ভাইকে বন্ধুপুত্র হিসাবে মানতেন। যদিও বড় ভাই আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের সাথে জরিত ছিল তা জেনেও চেয়ারম্যান ভাইকে কিছুই বলেন নাই। বরং বিস্তারিত শোনার পর বড় ভাইকে বলে বাবা তুমি বল কি করা উচিৎ? বড় ভাই চিন্তা করে বলে উঠে আমি বিচার চাইনা তবে আজ থেকে এলাকার লোকজন আর পাহারা দিবেনা। বড় ভাইয়ের কথায় সায় দিয়ে চেয়ারম্যান সাহেব সেদিন থেকে পাহারা বন্ধ করে দেন। সৎ উদ্দেশ্য ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হলে সৎ মানষিকতার দরকার হয়। আর সৎ মানুষের দ্বারাই বা কল্যানেই সমাজ ও রাষ্ট্রের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।

আরও দেখুন

অতিরিক্ত ভালোবাসা ঠিক নয়

নজরুল ইসলাম তোফা: আমরা জীবনে চলার পথে বহু মানুষকে “ভালোবাসা” দিয়ে দিয়ে থাকি। হয়তো আমরা …