বৃহস্পতিবার , নভেম্বর ২১ ২০২৪
নীড় পাতা / ফিচার / আপনজনের লাশ সৎকার করা হয়নি!

আপনজনের লাশ সৎকার করা হয়নি!

হামিদুর রহমান মিঞা’
কত কষ্ট আর কত যন্ত্রনাদায়ক স্মৃতি বুকে নিয়ে আপনজনেরা আজও বেঁচে আছে। হ্যা আমি একাত্তরের দুর্বিসহ দিনগুলোর কথা নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে লিখছি। আমাদের কালিগঞ্জ গ্রামের এক হিন্দু পরিবার কমল কান্ত দাসের কথা বলছি। পাক বাহিনী যখন নাটোর শহরে প্রবেশ করে হত্যাযজ্ঞ চালায় তখনও গ্রামাঞ্চলে মানুষজন মোটামোটি ভালই ছিল। কয়েকদিনের মধ্যে হানাদার বাহিনী গ্রামে গ্রামে হানা দিতে শুরু করল। যখন হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে লুটতরাজ শুরু হলে বাধ্য হয়ে প্রান বাঁচাতে দেশত্যাগ করতে হয়েছে।

কালিগঞ্জ গ্রামের ধীবর পাড়ার কমল কান্ত দাসের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী । এক কন্যার কি এক ব্যাধীতে হাত পা ফোলা। বাড়িতে দুটো রোগী তাদেরকে নিয়ে বহু কষ্টে অজানা ঠিকানায় পা বাড়ায়। কমল কান্তের দুই ছেলে এক, কোকিল চন্দ্র, দুই, অখিল চন্দ্র। কোকিল চন্দ্র সাবালক হওয়ার পথে কিন্তু অখিল চন্দ্র তখন খুবই ছোট বটে। কমল কান্ত বড় ছেলে কোকিলকে নিয়ে সাইঙে স্ত্রীকে নিয়ে রওয়ানা হয়। অনেক পথ পায়ে হেঁটে যাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার তারমধ্যে একজন মৃতপ্রায় মহিলাকে বহন করতে হচ্ছে। অনেক পথ অতিক্রম করার পর তানোর থানার শেষ প্রান্তে গিয়ে তাদের থামতে হয়। সেখানে দেশত্যাগী মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৫/৩০ হাজার ছিল। সবাই পাকবাহিনীর আগমনে সামনে এগুতে পারছিলনা।

উপস্থিত সকলেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে খোলা আকাশের নীচে ১২/১৩ দিন অতিবাহিত করে। যখন রাস্তা খোলাসার সংবাদ পায় আর বর্ডার (সীমান্ত) অতিক্রম করার ব্যবস্থা হয় তখন তারা রওয়ানা হন। রাস্তায় অবস্থানের মধ্যে কোকিল চন্দ্রের মা মারা যায়। একদিকে পাকবাহিনীর ভয় অন্যদিকে সীমান্ত পার হওয়ার চিন্তায় মৃতদেহ সৎকার না করেই রওয়ানা হয় তারা। কোকিল চন্দ্রের ভাষ্য অনুসারে জানতে পারি সেখানে মোট ১৪ টা লাশ মাটির উপরে রেখে দিয়ে পালাতে হয়েছে। লাশগুলো হয়তো শেঁয়াল শকুনে ছিড়েছিড়ে খেয়েছে।

ঐ ভয়াবহ দিনে জীবিত মানুষেরই দাম ছিলনা সেইখানে মৃত মানুষকে নিয়ে ভাবনার ফুসরৎ কোথায়? যাইহোক কমলকান্ত দাস দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাটের নিকট এক শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। কিছুদিনের মধ্যে তার অসুস্থ মেয়েটাও পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আত্মদানকারী ত্রিশ লাখ শহীদের তালিকায় এদের নাম উঠেছিল কিনা জানিনা। তবে সঠিক গননা করে এই সকল পরিবারকে শহীদি পরিবার হিসাবে স্বীকৃতীর দাবি জানিয়ে শেষ করছি।

আরও দেখুন

অতিরিক্ত ভালোবাসা ঠিক নয়

নজরুল ইসলাম তোফা: আমরা জীবনে চলার পথে বহু মানুষকে “ভালোবাসা” দিয়ে দিয়ে থাকি। হয়তো আমরা …