রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / বারনই নদীতে জগন্নাথের সলিল সমাধী

বারনই নদীতে জগন্নাথের সলিল সমাধী

হামিদুর রহমান মিঞা:
উনিশ’শ একাত্তর সালে পাক বাহিনী সারা বাংলায় গণহত্যা ও বসতবাড়িতে আগুন দিয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। পাক বাহিনীর আগমনে সারাদেশেই সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। একদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিধন অন্যদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর লুটপাট করে তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করা।

চেনা মানুষগুলো একসময় অচেনা মানুষে পরিণত হলে নিজের জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়। দেশ ত্যাগের সময় অনেক অচল বৃদ্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষ দেশের অভ্যন্তরে থেকে যায়। তেমনই একজন বৃদ্ধ জগন্নাথ প্রাং সে বিছানায় মৃতপ্রায় পড়ে থাকে। দেশ ত্যাগের সময় তার একমাত্র ছেলে পচা চন্দ্র প্রাং (ভাল নাম ভুলে গেছি) বাবাকে কাঁধে উঠায়ে নিয়ে রওয়না হবে বলে মনস্থির করে।

কিন্তু অপ্রকৃতিস্থ বৃদ্ধ জগন্নাথ ছেলেকে বলে তোমরা চলে যাও আমাকে নিয়ে চিন্তা করার দরকার নাই। আমি পৈতৃক ভিটাতেই থাকব আর গ্রামের পরিচিতজনদের নিকট চেয়ে চিন্তে খাব। শেষমেশ জগন্নাথ প্রাং থেকেই গেল তার ভিটাতে। এদিকে পাক বাহিনীর জোয়ানরা গ্রামে হানা দিতে শুরু করল। বারনই নদীর উত্তর পাড়ে কখনও আর্মিরা প্রবেশ করতে পারেনা।

কারণ ওদের আসার সংবাদ পেলেই আমরা দক্ষিণ পাড়ের লোকজন নৌকা দিয়ে পার হয়ে উত্তর পাড়ে যায়। পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় হায়েনারা নদী পার হতে পারেনা। একদিন কালিগঞ্জ খেয়াঘাটের নৌকা অজানা কারণে কে বা কারা উত্তর পাড়ে রাখে। সেদিন আর্মিদের সাথে আমাদের এলাকার একজন সাহায্যকারী( শাজাহান আলী) তাদেরকে নিয়ে রায়সিংহপুরে প্রবেশ করে। তেমুকপাড়ায় গিয়ে বৃদ্ধ জগন্নাথকে দেখে উর্দুতে জিজ্ঞেস করে হিন্দু না মুসলমান? জগন্নাথের বিশ্বাস সত্য কথা বললে হয়তো বৃদ্ধ মানুষ হিসাবে ছেড়ে দেবে তাই সে জানায় আমি হিন্দু।

সঙ্গে সঙ্গে পাক জন্তুরা অগ্নিমুর্তি আকার ধারণ করে পাশে থাকা কাজের লোকদের কাছে ডেকে নেয়। আর্মিদের ডাকে কাছে যেতে ভয় হচ্ছিল তাদের। আবার কাছে না গেলেও গুলী করে মারতে পারে। ভয়ে ভয়ে লোকগুলো কাছে গেলে তাদেরকে বলে যে, “মালাউনকা বাচ্চাকো পাকাড় লো”। আর্মিদের ভয়ে কম্পমান মানুষগুলো কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না, আর এদিকে জগন্নাথের বিশ্বাস পরিচিত লোকেরা তার কোন ক্ষতি করতে পারেনা। একসময় জগন্নাথকে দঁড়ি দিয়ে বাঁধতে বাধ্য করে লোকদেরকে। রায়সিংহপুরের বড়ঘাটে নদীর কিনারায় নিয়ে যায় কয়েকজন।

সেদিন বৃদ্ধ জগন্নাথের করুণ আকুতী হায়েনাদের হৃদয় গলাতে পারেনি। জগন্নাথ তো মানুষ নয় সে ইসলামের ধ্বজাধারী পাকিস্তানের শত্রু মালাউনকা বাচ্চা। সেদিন জগন্নাথকে মারতে বাধ্য হয়েছিল তাদের মধ্যে কুড়ান মুন্সী, হুরমুজ ব্যাপারি, ফকির চাঁদ অন্যতম। মিলিটারীদের হুকুম তামিল না করলে তাদেরকে মরতে হবে। বাধ্য হয়ে হুরমুজ ব্যাপারী ও ফকির চাঁদ হাত ও পায়ের দিকে ধরে আর কুড়ান মুন্সী পৃষ্ঠদেশ ধরে বারনই নদীতে ফেলে দেয়। এই ভাবে একজন বৃদ্ধ মানুষের সলিল সমাধী হলো তার তৃষ্ণা নিবারণকারি চিরচেনা নদীতে।

আরও দেখুন

নন্দীগ্রামে অবৈধভাবে পুকুর খনন করার অপরাধে একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা 

নিজস্ব প্রতিবেদক নন্দীগ্রাম,,,,,,,,,,,,, বগুড়ার নন্দীগ্রামে অবৈধভাবে পুকুর খনন করার অপরাধে একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা …