নিউজ ডেস্ক:
আসন্ন রমজান সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে আটটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এই আট পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করবে। এ উদ্যোগ মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা টেনে ধরবে। অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এই আটটি পদক্ষেপ হচ্ছে-দেশে আমদানি ও উৎপাদিত পণ্য গুদাম থেকে সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখা। পণ্য পরিবহণে চাঁদাবাজি ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহয়তা নেওয়া। মজুতকৃত পণ্যের নিরাপত্তায় বিশেষ নজর রাখা। মজুতকৃত পণ্য বাজারে সঠিকভাবে সরবরাহ ও মূল্য যাচাই করতে বিশেষ তদারকি করা। চিনি ও ভোজ্যতেলের বাজারে বিশেষ নজরদারি। বাজার মনিটরিংয়ে গোয়েন্দা নজর বাড়ানো। রমজানে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রিতে কালোবাজারি রোধে টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রে অভিযান চালানো। কেউ অসাধুতা করলে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার শনিবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা রমজানসহ সারা বছর যাতে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে, এজন্য একগুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এতে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে পণ্যের মজুত ও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রেখে দাম নিয়ন্ত্রণের ওপর। এটি নিশ্চিত করতে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি চিহ্নিত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টিও সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যাতে বাজারে দৃষ্টান্ত তৈরি হয়। যার মাধ্যমে অন্যরাও অসৎ ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে। তবে অধিদপ্তর ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে না। অসাধুভাবে কোনো ব্যবসায়ী যাতে ভোক্তাকে জিম্মি করে মুনাফা লুটতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাজার স্থিতিশীল রাখতে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব কৌশল হিসাবে পবিত্র রমজানে সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মজুত সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে টিসিবির বিক্রি করা পণ্য-চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, ছোলা, পেঁয়াজ ক্রয় ও মজুত পরিস্থিতি শক্তিশালী করার কার্যক্রম চলমান আছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে খোলাবাজারে বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত আছে। পাশাপাশি রমজান উপলক্ষ্যে ১ এপ্রিল থেকে বিশেষভাবে বিক্রি শুরু হবে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভোজ্যতেলের বাজার নজরদারি করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ ও বাজার তদারকি করছে। রাজধানীর বাইরে জেলা, থানা ও গ্রামপর্যায়ের বাজার স্থিতিশীল রাখতে জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে। প্রতিটি বাজারে নিত্যপণ্যের পাইকারি ও খুচরা মূল্য প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করে তা নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্র জানায়, পণ্যের আমদানি ও সরবরাহ অবস্থা পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এলসি তথ্য প্রতিদিন সংগ্রহ করা হচ্ছে। একইভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকেও। তথ্য সংগ্রহের পর পণ্যভিত্তিক সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যালোচনা চলছে। রমজানে এ পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে দেশে মজুত পরিস্থিতি এবং কী পরিমাণে পণ্য উৎপাদন বা আমদানি করা হয়েছে তা প্রতিবেদন আকারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। সেসময় চাহিদার তুলনায় পণ্যের মজুত বেশি না কম, তা নির্ণয় করা হবে। এর ভিত্তিতে বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার বা কমার যৌক্তিক ও অযৌক্তিক কারণ বের করে তাৎক্ষণিক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, রমজান এলেই নিত্যপণ্যকেন্দ্রিক একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে। এটি অনেক পুরোনো। সরকার বিভিন্ন সময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে। সরবরাহ না বাড়িয়ে সরকার প্রশাসনিক উপায়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এতে ফল হয় উলটা। তিনি বলেন, রমজানে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের মধ্যে রয়েছে-ভোজ্যতেল, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর, চিনি এবং বিভিন্ন সবজি। তবে এগুলো সরবরাহ নিশ্চিত করতে আগে থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থাৎ, যে কোনোভাবেই বিকল্প উপায়ে সরবরাহ বাড়লে এমনিতে ব্যবসায়ীরা পণ্য ছেড়ে দেবে। মির্জ্জা আজিজ বলেন, ভোক্তা অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন আইন আছে। এসব আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে এসব আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতাও জরুরি।
অন্যদিকে ভোক্তা অধিদপ্তর জানায়, ব্যবসায়ীদেরও নিজেদের মতো করে পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যবসা সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডাররা যাতে নিজেরাই সংশোধন হয়, সে বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর রাজধানীসহ সারা দেশের ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বসে মিটিং করছে। তাদের সাবধান করা হয়েছে, কেউ যাতে অযথা পণ্যের দাম না বাড়ায়। রমজানে কোনো ভোক্তা যাতে পণ্য কিনতে হিমশিম না খায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর বাজারে এমন অযৌক্তি আচরণ করলে এবার কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের অল্প সময়ে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।