রবিবার , ডিসেম্বর ২৯ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / নেপালের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু হচ্ছে

নেপালের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু হচ্ছে

নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে রেলওয়ে ট্রানজিট চুক্তি সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক সই করা হবে বন্ধু রাষ্ট্র নেপালের সঙ্গে। এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে নেপালে রফতানি পণ্য রেলে করে নেয়া সম্ভব হবে। বাড়বে রফতানির পরিমাণ। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে আগামীকাল সোমবার নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি দুদিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। তাঁর উপস্থিতিতে এবার ঐতিহাসিক রেলওয়ে ট্রানজিট চুক্তি করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। ওই বৈঠকে পর্যটন, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও কৃষি খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই করবে দুদেশ। দ্রুত সময়ের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করার ব্যাপারে আলোচনা করা হবে। নেপালের প্রেসিডেন্টের এবারের সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-নেপালের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়বে। অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে মনে করছে সরকার।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ট্রানজিট ও প্রটোকল চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় নেপালকে ৬টি পোর্ট অব কল দেয়া হয়। এগুলো হলো চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দর, বেনাপোল, বাংলাবান্ধা, বিরল ও চিলাহাটি। এসব পোর্ট অব কলে নেপালের যানবাহন পণ্য পরিবহন করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাবান্ধা ছাড়া আর কোন বন্দর দিয়ে নেপালে নিয়মিত পণ্য আসা-যাওয়া করে না। ট্রানজিট ও প্রটোকল চুক্তিতে এবার ‘অপারেশনাল লাইজেশন অব রোহনপুর-সিঙ্ঘাবাদ রেলওয়ে ট্রানজিট’ চুক্তির বিষয়টি নতুন করে সংযোজন করা হচ্ছে। এতে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোহনপুর-ভারতের মালদহের সিঙ্ঘাবাদ সীমান্ত দিয়ে পণ্যবাহী ট্রেন নেপালের বিরাটনগর পর্যন্ত যাবে। মাঝে ভারতের ভূখ- ব্যবহার করবে নেপাল।

এই চুক্তির বিষয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে আগেই প্রটোকল করে রেখেছে ভারত। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, নেপালের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি রেলপথে পণ্য নেয়ার বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছিল। কিন্তু নানা ধরনের জটিলতার কারণে এটা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এবার সমঝোতা স্মারক সই হবার পর আর কোন বাধা থাকবে না। এ ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে প্রটোকল রয়েছে। ভারতের ভূখ- ব্যবহার করে নেপালে পণ্য নেয়া হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সরাসরি রেলযোগাযোগ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ভুটানের সঙ্গে রেলপথ চালু হবে। আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নেপালের প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রেলওয়ে ট্রানজিট সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র প্রস্তুত করে দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, নেপালের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য এখন বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে বেশি অর্থের পণ্য রফতানি হয়, নেপাল থেকে কম পণ্য আমদানি হয়। বাণিজ্যের পরিমাণ প্রতিবছর বাড়ছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। আর নেপাল থেকে আনা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ডলারের পণ্য। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে দ্রুত সময়ের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা করা হচ্ছে। কিন্তু নেপালের প্রস্তুতি না থাকায় এখনও পিটিএ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তবে এবার নেপালের প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে পিটিএ করার ব্যাপারে আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পিটিএ করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তাগিদ রয়েছে।

জানা গেছে, গত বছরের ১০ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেপালের সঙ্গে রেল ট্রানজিট পথটির খসড়া অনুমোদন করা হয়। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোহনপুর-ভারতের মালদহের সিঙ্ঘাবাদ সীমান্ত দিয়ে পণ্যবাহী ট্রেন নেপালের বিরাটনগর পর্যন্ত যেতে পারবে। ওই সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ১৯৭৬ সালেই বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের দ্বিপক্ষীয় ট্রানজিট চুক্তি আছে। সেই ট্রানজিট চুক্তির আলোকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোহনপুর ও ভারতের সিঙ্ঘাবাদ রুটে পণ্য আনা-নেয়ার সুবিধা চেয়েছে নেপাল। বাংলাদেশের সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করতে চায় নেপাল। সবাই একমত হলে অদূর ভবিষ্যতে এটাও মন্ত্রিসভায় আসবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রোহনপুর থেকে নেপালের বিরাটনগর পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ২১৭ কিলোমিটার। দ্বিতীয় পথটি হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোহনপুর-পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) বিরল-রাধিকাপুর-বিহারের রক্সল নেপালের বীরগঞ্জ। এই পথে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে বীরগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ৫১৪ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে ভারতীয় ভূখ-ের রেলপথ ব্যবহার করে পণ্য আনা-নেয়া করতে ট্রানজিট সুবিধা পেয়েছে নেপাল।

এক দশক ধরেই পার্শ্ববর্তী ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার করে ভারতের কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় একাধিক চালান নেয়া হয়েছে। কলকাতা থেকে নৌপথে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ পর্যন্ত এরপর সড়কপথে আখাউড়া হয়ে আগরতলায় পণ্য গেছে। ঢাকা ও কাঠমান্ডুর মধ্যে সরাসরি ট্রেন সার্ভিস চালু করা সম্ভব বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ডাঃ বনশিধর মিশ্র। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ রয়েছে। এখন সড়ক ও রেল যোগাযোগও সম্ভব। এদিকে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি সফরকালে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। নেপালের জনগণ বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা বঙ্গবন্ধুকে গোটা মানবজাতির নিপীড়িত মানুষের নেতা হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। বিদ্যা দেবী ভান্ডারি তার দেশের জনগণের এ বার্তা বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ ও জনগণের কাছে পৌঁছে দেবেন। তিনি ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ওপর স্মারক বক্তব্য রাখবেন।

আরও দেখুন

বড়াইগ্রামে অবৈধভাবে নদীর পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করার দায়ে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা 

নিজস্ব প্রতিবেদক বড়াইগ্রাম,,,,,,,,,,,,,নাটোরের বড়াইগ্রামে নদীর পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করার অপরাধে মো.মোখলেস হোসেন নামে একজনকে …