নিউজ ডেস্ক:
মুজিববর্ষে সংযুক্ত মাথার যমজ বোন রাবেয়া ও রোকেয়াকে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করে সুস্থ শরীরে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়াকে দেশের জন্য বড় অর্জন হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজকে রাবেয়া- রোকেয়া বাড়ি ফিরে যাবে, তাদের মা-বাবার কোলে হেসে-খেলে বেড়াবে- এটি সত্যি খুব বড় পাওয়া। এটি সবার জন্য আনন্দ ও গর্বের।
রাবেয়া-রোকেয়ার সফল এই অস্ত্রোপচার দেশে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক। দীর্ঘ চিকিৎসায় জোড়া মাথা আলাদা হওয়ার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে তারা। প্রধানমন্ত্রী রোববার রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) যমজ এই দুই বোনের গৃহে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সিএমএইচের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।
এই মাসে (মার্চ) বাঙালির ইতিহাসে অনেক কিছু ঘটেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন; দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল; ‘৭১-এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।
উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী এদিন রাবেয়া-রোকেয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। কেমন আছো- প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলে দুই বোনের একজন বলে, ‘ভালো, তুমি কেমন আছো?’ এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই হেসে ওঠেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভালো, বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি?’ এ সময় মাথা নেড়ে খুশির কথা জানায় শিশুটি। অনুষ্ঠানে দেশবাসীর কাছে রাবেয়া ও রোকেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, তারা যেন সুস্থ থাকে, ভালো থাকে এবং বাবা-মায়ের মুখে আনন্দ নিয়ে আসতে পারে। গতকাল রাবেয়াকে বেশ সুস্থ মনে হয়েছে। রোকেয়া বিশেষ চেয়ারে বসেছিল। রাবেয়া অনুষ্ঠানজুড়েই দুষ্টুমিতে মেতে ছিল।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ছোট বোন শেখ রেহানা তাকে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর দেখিয়ে যমজ শিশুদের সম্পর্কে অবহিত করার পরে তিনি চিকিৎসার উদ্যোগ নেন। তিনি বলেন, রাবেয়া- রোকেয়াকে পৃথক করার মতো এক বড় অপারেশন বাংলাদেশে করার কারণ হলো, এখানকার চিকিৎসক এবং টেকনিশিয়ানদের একটা অভিজ্ঞতা হবে। ৪৮টি অপারেশন এবং ৩৬ ঘণ্টা ধরে অপারেশন করা- এটা বিরাট ব্যাপার। হাঙ্গেরি থেকে আসা চিকিৎসকদের দলটি এখানে দীর্ঘদিন অবস্থান করে অপারেশনটা করেছে। আর সব থেকে ভালো লেগেছে, তারা প্রত্যেকেই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন।
২০১৯ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক মাইলফলক। এ দিনেই সিএমএইচ ঢাকায় জোড়া মাথা পৃথক্করণের জটিল অপারেশনটি শুরু হয়। হাঙ্গেরি সরকারের সহযোগিতায় ‘অ্যাকশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল ফাউন্ডেশন’-এর সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও হাঙ্গেরিতে ছোট-বড় ৪৮টি অপারেশন সম্পন্ন হয়। পরে শিশু দুটিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে এই অপারেশনের সবচেয়ে জটিল অংশ যমজ-মস্তিস্ক আলাদাকরণের কাজটি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকায় সম্পন্ন করা হয়।
এ ধরনের অপারেশন সারা বিশ্বেই বিরল এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম। অপারেশন-পরবর্তী সাফল্যও বিশ্বে খুব বেশি নেই। পিএমও সূত্র জানায়, ঢাকা সিএমএইচ শিশু দুটির জন্য আজীবন চিকিৎসাসুবিধা কার্ড দিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে সিএমএইচসহ যে কোনো সরকারি হাসপাতালে তারা বিনামূল্যে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা পায়।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পাবনার স্কুলশিক্ষক দম্পতি রফিকুল ইসলাম এবং তাসলিমা খাতুনের ঘরে যমজ মাথা নিয়ে জন্ম নেয় রাবেয়া-রোকেয়া।