নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে আগামীতে যেকোনো কোম্পানিকে অর্থ লেনদেন পরিশোধ ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আগ্রহী কোম্পানিকে সংশ্লিষ্ট সব বিধিবিধান মেনে এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক তৈরিকৃত ‘পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস আইন ২০২১’-এর খসড়ায় এসব বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এই আইনটি অনুমোদনের জন্য চলতি সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। আগামী মঙ্গলবার বৈঠক হওয়ার কথা।
জানা গেছে, এই আইনের অধীনে গঠিত প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে কোনো ঋণখেলাপি থাকতে পারবেন না এবং কোনো উদ্যোক্তা পরিচালকের শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে না। এমডি নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন লাগবে। আইন অমান্য করলে জেল জরিমানার বিধানও রয়েছে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের অবসায়নও চাইতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, মূল ব্যাংকিং সেবার বাইরে অর্থ লেনদেন পরিশোধ ব্যবসায় আগ্রহী ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ সেবা প্রদানের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত পৃথক অনুমোদন নিতে হবে। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১’-এর সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানও অর্থ লেনদেন পরিশোধ ব্যবসার সাথে জড়িত হতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিতে হবে এবং ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত পরিমাণে, হারে ও পন্থায় মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে।
খসড়া আইনে অর্থ লেনদেন পরিশোধ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ গঠনে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- কোনো ঋণখেলাপি অর্থ লেনদেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না এবং প্রতিষ্ঠানের কোনো উদ্যোক্তা পরিচালকের শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে না। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।
আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে অনেক ধরনের লেনদেন হচ্ছে। মূল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে ইন্টারনেট ও এজেন্ট ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক তহবিল স্থানান্তর, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডসহ বিকাশ, নগদ, রকেট, বিভিন্ন ব্যাংকের ই-ওয়ালেট, ইন্টারনেন্ট ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক মুদ্রা, ইলেট্রনিকভাবে তহবিল স্থানান্তর, চেক ইলেট্রনিকভাবে উপস্থাপন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রা, ট্যাংকেটেড চেক, ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট, সরকারি সিকিউরিটিজ সেটেলমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদি। এসব পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ, অর্থ গ্রহণ ও গ্রাহকের অর্থ চাহিদা নিষ্পত্তি হচ্ছে। আর এসব পদ্ধতি ব্যবহার করছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এজেন্ট ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট। এদের কার্যক্রম তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো এবং গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এ আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
খসড়া আইনে শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, বিধিবিধান লঙ্ঘন করে কোনো প্রতিষ্ঠান লেনদেন ব্যবসা পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর বিধিনিষেধ আরোপসহ সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত ও প্রত্যাহার করা হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স না নিয়ে বা কোনো বিধি লঙ্ঘনের দায়ে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পর কেউ এ ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করলে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ এবং সর্বনি¤œ এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এরপরও একই কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে প্রতিদিনের জন্য ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।
এ ছাড়া নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা, তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অসহযোগিতা করা, কোম্পানির হিসাব, বহি বা নথিপত্র নষ্ট, ধ্বংস, পরিবর্তন, গোপন বা ভুলভাবে উপস্থাপন এবং অসাধু উদ্দেশ্যে পরিশোধের ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে এক লাখ টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।
খসড়া আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গ্রাহক বা জনস্বার্থবিরোধী কোনো কার্যক্রমে লিপ্ত হলে সেটি অবসায়ন করতে হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে তৃতীয় কোনো পক্ষের আবেদনে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন হবে না। আর আদালত থেকে অবসায়ন কার্যক্রম জারি করা হলে ওই প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের সাথে কোনো লেনদেন করতে পারবে না।
গ্রাহকের দায়দেনা প্রশাসকের ওপর বর্তাবে। তবে অবসায়নকালে গ্রাহককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ছাড়া লেনদেন ব্যবস্থা কার্যক্রম ও ঝুঁকি কমাতে এ সংক্রান্ত কাজ আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালা প্রণয়ন করবে। ওই নীতিমালায় গ্রাহকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা থাকবে। আর এ ব্যবসার মানদণ্ড, পদ্ধতি ও বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভূমিকা এবং নীতিগত সহায়তা করবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে তারল্য সরবরাহ ও প্রতিষ্ঠানের মূলধন সংরক্ষণ করবে।
নথিপত্র সংরক্ষণের বিষয়ে আইনের খসড়ায় বলা হয়, পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনকারী, পরিশোধ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণকারী, পরিশোধ সেবাদানকারী লেনদেনগুলোর তথ্য পরবর্তী ১২ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে।
এই আইনের অধীনে একটি পরিশোধ কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির প্রধান হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর। এই কমিটির কার্যপরিধি, গঠন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে।