নিউজ ডেস্ক:
সঙ্কট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলা। সরকারের পরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় মৃতপ্রায় মোংলা বন্দরে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে গতি ফিরছে। বন্দরের সুবিধাদি বৃদ্ধির জন্য ১০টি বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। পদ্মাসেতু ও খুলনা-মোংলা রেলসেতু নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়ায় মোংলা বন্দরকেন্দ্রিক দেশের শিল্প-বাণিজ্যে সূচিত হয়েছে অমিত সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।
ইতোমধ্যে এ বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে শুরু করেছে নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে মোংলা বন্দরের প্রতি। এতে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে গোটা বন্দর এলাকা। লোকসান কাটিয়ে গত ৫ বছরে মোংলা বন্দর ৪৯৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। এ সময় বন্দরে ৩ হাজার ৭০০টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে নীট মুনাফা অর্জন হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। ওই বছর বন্দরটিতে রেকর্ড সংখ্যক ৯০৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ এসেছে। পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন।
বন্দর সূত্র জানায়, বন্দরে পুরোদস্তুর সার, সিমেন্ট, ক্লিংকার, সিরামিক ক্লে, কয়লা, রামপাল ও রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেনারেল কার্গো ও ভারি যন্ত্রপাতি, এলপিজি গ্যাস, ফ্লাই অ্যাশ ও এডিবেল ওয়েল, রিকন্ডিশন গাড়িসহ বিভিন্ন ভারী শিল্পপণ্য আমদানি করা হচ্ছে। বন্দরের আধুনিকায়ন, চ্যানেলের নাব্যতা সংরক্ষণ ও দক্ষতার সঙ্গে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে জাহাজের গড় অবস্থানকাল হ্রাস এবং কার্গো ও কন্টেইনার সংরক্ষণের সুবিধা স¤প্রসারণসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য্য বর্তমানে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন ও তিনটি প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়ায় আছে। মোংলা বন্দর ব্যবহারকারীদের দ্রুত ও দক্ষ সেবা প্রদানে যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে আছে ; ৭০টি কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, ৮০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর প্যানেল স্থাপন, ৩টি কার ইয়ার্ড নির্মাণ, ১০টি বিভিন্ন ধরণের সহায়ক জলযান ক্রয়, ৬২টি বিভিন্ন ধরনের লাইটেড বয়া, ২টি রোটেটিং বিকন, ৬টি জিআরপি লাইট টাওয়ার সংগ্রহ ও স্থাপন, একটি মোবাইল হারবার ক্রেন ক্রয়, একটি স্টাফিং- আনস্টাফিং শেড, একটি ওয়েব্রিজ মোবাইল স্ক্যানার সংগ্রহ। এ ছাড়া বন্দরের খুলনাস্থ রুজভেল্ট জেটির বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
এসবের বাইরে বন্দরের অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম সংগ্রহ, পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং, সহায়ক জলযান সংগ্রহ, বর্জ্য নি:সৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ থেকে পিপিপি›র আওতায় মোংলা বন্দরের ২টি অসম্পূর্ণ জেটির নির্মাণও কাজ শেষ করা হবে ২০২১ সালের মধ্যে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং মোংলা বন্দরের ভিশনকে সামনে রেখে আরও উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় কমিটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে মোংলা বন্দরের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানে আমদানি-রফতানিকারকরা মোংলা বন্দর ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। বিনিয়োগও বাড়ছে। খুলনা- মোংলা রেললাইন নির্মাণের কাজ চলছে। সারাদেশের সাথে বন্দরের রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলে বন্দরটির গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পাবে।
বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য (রামপাল-মোংলা) হাবিবুন নাহার বলেন, বৃহত্তর খুলনাকে অর্থনৈতিকভাবে সচল করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোংলা বন্দরের উন্নয়নে নানা প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। খুলনা- মোংলা ৬৪ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ এ বছর ডিসেম্বরে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। রেলপথটি চালু হলে নেপাল, ভুটান ও ভারতের সাথে আমাদের বাণিজ্যিক যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে। দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারী ও আমদানী-রফতানিকারকরা এখন মোংলা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে বন্দরের গতিশীলতা এসেছে। পদ্মাসেতু চালু হলে বন্দরের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে যাবে। তখন রাজধানী ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে বন্দরের ব্যবধান অনেক কমে যাবে। সময় ও খরচ কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর ব্যবহারে আরো আগ্রহী হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বন্দরের নাব্যতা সঙ্কট কাটিয়ে উঠেছি। এখন বন্দর চ্যানেলে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আসার মত সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। বন্দর ব্যবজারকারীদের সুবিধার্থে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে।