আব্দুস সালাম, বড়াইগ্রাম:
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার করোনাকালিন দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রনোদনা প্রদানের পাশা পাশ্বি বলেছিলেন-অনাবাদি এক ইঞ্চি জমিও পতিত ফেলে রাখা যাবেনা। প্রধানমন্ত্রীর সে কথা বাস্তবায়নে হোক আর বিলাসীতাতেই হোক অথবা নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদেই হোক বড়াইগ্রামবাসী এ পতিপাদ্যে অনেকটাই এগিয়ে। গোটা উপজেলায় পতিত জায়গা নেই বললেই চলে।
সমস্ত উপজেলার অফিস- আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রায় সকল রাস্তারই উভয় পাশ্বে, ঈদমাঠ, গোরস্থান, শ্মশান, গ্রাম, পাড়া, মহল্লার প্রায় বাড়ির অঙ্গিনায়, আনাচে- কানাচে এমন কি ছাদের উপরে টব, রিং, চাড়ি, হাইড্রোজের ড্রাম, বালতি, গুড় জ্বাল করার ড্রাম, মুখ কাটা বড় বোতলে মাটি দিয়ে লাগানো হয়েছে ফলজ ,বনজ অথবা শাক-সব্জির বাগান। উৎপাদিত ফসল একদিকে যেমন মিটছে তাদের চাহিদা অন্যদিকে ছড়াচ্ছে সবুজের সমারোহ।
বনজ- মেহগণি, আকাশমনি, রেÐিকড়ই, শিলকড়ই, শিশু, নিম ইত্যাদি। ফলদ-আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারা, হরেক রকম বরই, ড্রাগন, কলা ইত্যাদি।
সব্জির মধ্যে রয়েছে- আলু, বেগুন, লাউ, শশা, সীম, মিষ্টিকুমডা, ঢেঁড়স ইত্যাদি।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা যেমন বড়াইগ্রাম, জোনাইল, তিরাইল, কুমরুল, কালিকাপুর, রামাগাড়ি, ভবানীপুর, বনপাড়া, ধানাইদহ, রাজাপুর, দারিখৈল, দোগাছী, মেরীগাছা, নগর ঘুরে দেখা যায়- পাবনা-নাটোর মহাসড়কের রাজাপুর থেকে আহমেদপুর পর্যন্ত, বনপাড়া-ঢাকা মহাসড়কের বনপাড়া থেকে প্রায় ৪০ কিঃ মিঃ পর্যন্ত, প্রতিটা গ্রামের পাকা- কাঁচা প্রায় সকল রাস্তারই উভয় পাশ্বে বনজ গাছের ফাঁকে ফাঁকে আম, সজিনা ও সব্জির গাছ লাগানো হয়েছে। উৎপাদিত ঐ সব আম,সজিনা ও সবজি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন শহর এলাকায় যাচ্ছে।
কালিকাপুর গুচ্ছ গ্রামের আবুল কাশেম বলেন আমার নিজস্ব কোন জমি নাই খাস জমিতে বসবাস করি। বাড়ি এবং রাস্তার পাশ্বে অতি সংকীর্ণ জায়গাতে একটি বরই ও একটি সজিনার গাছ লাগিয়েছি। প্রতি বৎসর সেখান থেকে উৎপাদিত বরই এবং সজিনা নিজে খাওয়ার পরেও দুই থেকে আড়াই হাজার হাজার টাকা বিক্রি করতে পারি। গুচ্ছ গ্রামের আরেক জন আব্দুল মান্নান জানায়- কাশেম ভাইয়ের দেখে আমিও রাস্তার পাশ্বে একটা আমের গাছ লাগায়েছি । নিজের গাছের উৎপাদিত আম নিজেদের চাহিদা মত খেয়েও আত্মীয় স্বজনদের দিতে পারি।
সেখানকার অপর আরেক জন শফিকুল ইসলাম জানায় অন্যদের দেখে আমি ও রাস্তার ধারে শীমগাছ লাগিয়ে ছাদের উপর উঠিয়ে দিয়েছি, গাছটিতে যে পরিমান শীম ধরেছে তাতে নিজের চাহিদা মিটিয়ে নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের দিয়েছি এমন কি কোন প্রতিবেশীই বলতে পারবেনা, যে তাকে দুই-একদিন শীম দেওয়া হয় নাই।
রামাগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুন বলেন- আমার বাড়ির পিছনে যে পতিত জায়গা পড়ে ছিল সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির ১০টি আম গাছ, দুইটি কাঁঠাল গাছ, দুইটি জাম গাছ, ১টি লিছু গাছ, ১টি করমচা গাছ, ১টি তেজপাতার গাছ, ১টি ডালিম গাছ, ১টি সাগর কলার গাছ, ১টি লাউ গাছ, ১টি মিষ্টি কুমড়ার গাছ এবং ছাদে হাইড্রোজের ড্রামে একটি মালটার গাছ,একটি কমলার গাছ ও একটা পেয়ারার গাছ,বালতিতে একটা ডালিমের গাছ, একটা বালতিতে পুদিনার গাছ, দুই বালতিতে মরিচের গাছ এবং গুড় তৈরীর ড্রামে লাল শাক, পুঁইশাক, পেঁয়াজ, মরিচ, কাটুয়া ডাটা মৌসুম অনুসারে করে থাকি। এতে আমার কাঁচা বাজার করা লাগেনা বললেই চলে।
বিভিন্ন ফলও কেনা লাগেই না বরং অন্যদের দিয়ে খেতে পারি,শ্বশুর বাড়ির ভিটাতে এক বিঘা জমি পেয়ে ছিলাম সেখানেও পতিত ফেলে না রেখে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগায়েছি। আরাজী ভবানীপুর গ্রামের সাইফুলের বাড়িতে দেখা যায় গেটের সামনে লাউ গাছ লাগিয়ে টাল দেওয়া হয়েছে এবং বাড়িতে যাতাওয়াতের রাস্তা রেখে মেইন রাস্তা পর্যন্ত দুই পাশ্বে লাগানো হয়েছে বেগুন, মরিচ, টমেটোর। প্রবাসী সাইফুলের স্ত্রী ফেরদৌসী বলেন-করোনা কালিন ছুটিতে আমার ছেলে আব্দুল্লাহ আল্ মামুন বাড়িতে থেকে এ সব কাজ করেছে। আমার কাঁচা বাজার তেমন করাই লাগেনা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্ত শারমিন সুলতানা বলেন-নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ বর্তমান খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জন করেছে। পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কৃষিবিভাগ অত্যন্ত তৎপর এ ছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান এজেন্ডা এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সে লক্ষ্যে কৃষকদেরকে বসত বাড়ির আঙ্গিনায় শাক-সবজি ও ফল গাছ উৎপাদনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেল- পাড়া,মহল্লার প্রান্তিক কৃষক সহ নারী-পুরুষ প্রত্যেককে শাকসবজি উৎপাদন বৃদ্ধির জন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলে উপদেশ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।