শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪
নীড় পাতা / ফিচার / আব্দুল্লাহ্ আল মামুন”এর লেখা“আত্মহত্যা বা আত্মহনন”

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন”এর লেখা“আত্মহত্যা বা আত্মহনন”

“আত্মহত্যা বা আত্মহনন”

কি সুন্দর একটা মেয়ে। সদ্য কলেজে উঠেছে, পড়াশুনায় খুব ভালো। কোন অজানা দুঃখ ছিলো বোধহয়। নয়তো এভাবে কেউ চলে যায়? আত্মহত্যার জন্য সাহস দরকার। ছোট মেয়েটি এতো সাহস কোথায় পেয়েছিলো লাল শাড়ি গলায় পেঁচিয়ে একেবারে চলে গেলো। চোখে কাজল নেই। কপালে টিপ নেই। বুকের ভেতর অভিমান নিশ্চয়ই ছিলো। আত্মহত্যা বা আত্মহনন হচ্ছে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া। আত্মহত্যা কে চিকিৎসকগণ মানসিক অবসাদ জনিত উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। অনেক ধর্মেই আত্মহত্যাকে পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় দশ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে। সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৬ থেকে ১০ জন। প্রতিটি আত্মহত্যার পেছনে যিনি আত্মহত্যা করেন, তার নিজস্ব কিছু কারণ থাকে। প্রতিটি মানুষ আলাদা, আবেগ-অনুভূতিও আলাদা। আমি যেভাবে পৃথিবীকে দেখি, আরেকজন সেই দৃষ্টিতে পৃথিবী দেখবে না। দেখা যায় প্রতিটি আত্মহত্যার দু’ধরণের হয়, পরিকল্পিত এবং আবেগ তাড়িত হয়ে বা কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে চরম বিষণ্ণতা বা ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন থেকে। অধিকাংশ মানুষ খুব একটা পরিকল্পনা করে আত্মহত্যা করে না। বিষণ্ণতা থেকে আবেগ তৈরি হয়, আশা চলে যায়, অন্য কোনো উপায় খুঁজে পায় না মানুষ, একমাত্র উপায় হয় তখন নিজের জীবন নিয়ে নেওয়া। সুইসাইড করার অর্ধেক কারণই হচ্ছে বিষণ্ণতা বা অবসাদ। এছাড়া ও সম্পর্ক ভেঙে গেলে, চাকরি হারালে, আয়ের পথ না পেলে, সামাজিক পজিশন হারালে, ফেল করলে, লজ্জা পেলে, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হলে, মাদক ও মদ্যপান, মানুষের আত্মহত্যার আশংকা বাড়িয়ে তোলে। খুব স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে কেন দিনে দিনে আমাদের দেশে আত্মহত্যার হার বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। প্রতিদিন অপরিচিত অনেকের মৃত্যুর খবর শুনি। মনটা ঐ ভাবে নাড়া দেয় না। যখন আত্মহত্যার গল্প শুনি বিশ বছরের একটা তরুন টকবগে ছেলে প্রেমে প্রত্যাখান হয়ে আত্মহত্যা করেছে। ভিতরে ভিষন ভাবে নাড়া দেয়। আত্মহত্যাতে বীরত্ব নেই। চোঁখটা বন্ধ করে একবার দেখুন পৃথিবীটা কত আনন্দময়। মনটা শান্ত হবে। আমরা সবাই এখন ইঁদুর দৌঁড় প্রতিযোগিতায় আছি। এই প্রতিযোগিতা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য আমাদের হতাশা ও বিষণ্ণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। হতাশা মানুষের সৃজনশীলতা, বোধ ও বুদ্ধিমত্তা নষ্ট করে দিচ্ছে। পরিবারের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত মানুষকে আরও চাপের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। আমাদের সন্তানদের মানিয়ে নেওয়া শেখাতে হবে। বিপদে তাদের পাশে থেকে সময় দিতে হবে। কোনো অপরাধের জন্য কাউকে ধিক্কার জানানোর মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। নিজেদের অপ্রাপ্তি সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। কেউ যদি বিষণ্ণতায় ভোগে, তার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনাদের বলছি, হতাশায় থাকলে সিদ্ধান্ত নেবার মতো মানসিক অবস্থা টুকু থাকে না। এ সময় কান্নার জন্য একটা বিশ্বস্ত কাঁধ প্রয়োজন। একজন শ্রোতা প্রয়োজন। একজনের গাইড প্রয়োজন। মানুষের জীবনে প্রেম, পড়াশুনা, বেকারত্ব, পারিবারিক অশান্তি, দাম্পত্যকলহ সহ আরো অনেক হতাশা থাকে। কেউ হতাশায় থাকলে তার কথা শুনুন। তাকে মন খুলে কথা বলতে দিন। ভালো পথ দেখান। তার গোপন কথা গুলো গোপন রাখুন। সে বাঁচতে চায়। তাকে বাঁচান।

লেখক: আব্দুল্লাহ্ আল মামুন

আরও দেখুন

কবি নাজনীন নাহার এর কবিতা “আমি মানুষ’’

আমি মানুষ! নাজনীন নাহারআমি মানুষ!হ্যাঁ আমি মানুষ।আমি অমানুষের করি নাশ,মানচিত্র থেকে মুছে দেবো আমি অমানুষদের …