নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রণোদনার ঋণ ও সুদ পরিশোধে আরো ছয় মাস সময় পেল তৈরী পোশাক গার্মেন্ট শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। বর্তমানে এই ঋণ ও সুদ পরিশোধের গ্রেস পিরিয়ড রয়েছে ছয় মাস, যা গত জানুয়ারি মাসে শেষ হয়েছে। এখন তা আরো ছয় মাস বাড়িয়ে এক বছর করা হয়েছে। তবে ঋণের সুদ-আসল আগের মতো ১৮ কিস্তিতেই পরিশোধ করতে হবে। আগে ঋণ দুই বছরে পরিশোধ করার কথা ছিল। এখন গ্রেস পিরিয়ড বাড়ানোর কারণে বিজিএমই ঋণ পরিশোধে আরো সময় পাচ্ছে।
রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য গতকাল সোমবার অর্থ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে গত বছর প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় তৈরী পোশাক শিল্প শ্রমিকদের স্বল্প সুদে তিন মাসের বেতন ঋণ হিসেবে প্রদান করে সরকার। টাকার অঙ্কের যার পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই ঋণের সার্ভিস চার্জ ছিল মাত্র দুই শতাংশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, করোনাকালে সবচেয়ে বেশি প্রণোদনা পেয়েছে তৈরী পোশাক খাত। এই খাতসহ রফতানিমুখী শিল্প শ্রমিকদের মজুরি দিতে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করে। তিন দফায় শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধে মোট ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দেয়া হয়।
জানা গেছে, তৈরী পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঋণ পরিশোধে বেশ কিছু শর্ত দেয়া ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ঋণের পুরো অর্থ শোধ করতে তারা দুই বছর পাবে। ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ছয় মাস। এরপর দুই বছরে ১৮ কিস্তিতে ঋণের টাকা শোধ দিতে হবে। কিন্তু গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ার আগেই তৈরী পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণের কারণে ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিল, স্থগিত, নির্দিষ্ট সময়ে পেমেন্ট না দেয়া ইত্যাদি কারণে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিজিএমইএর অবস্থা তুলে ধরে গত বছরের শেষ দিকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। চিঠিতে করোনা পরিস্থিতির কারণে সচল শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতার জন্য দেয়া ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ছয় মাসের পরিবর্তে এক বছর করা এবং দুই বছরে ১৮ কিস্তির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের পরিবর্তে পাঁচ বছরে ৬০টি কিস্তির সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করা হয়।
কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক গত জানুয়ারি মাসে গণমাধ্যমে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২০২১ সালের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই নির্দেশনা এমন সময়ে দেয়া হলো, যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে শিল্প গভীর অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্ততপক্ষে ছয় মাসের জন্য স্থগিতকরণ অথবা প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ অন্ততপক্ষে আরো এক বছর (বর্তমানে ২৪ মাস) সম্প্রসারিত করা না হলে শিল্প টিকিয়ে রাখা দুরূহ হবে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের যে রফতানি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানেও রফতানির উদ্বেগজনক চিত্র বহাল আছে।
এরপর বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করে বিজিএমইএ। শেষ পর্যন্ত ঋণের গ্রেস পিরিয়ড আরো ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।