নিজস্ব প্রতিবেদক:
এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটারের বাংলাদেশে উর্বর ভূমির আয়তন এক লাখ ৩৩ হাজার ৯১০ বর্গকিলোমিটার। জলজ আয়তন ১০ হাজার ৯০ বর্গকিলোমিটার। আছে ৫৮০ কিলোমিটারের সমুদ্র। পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মতো তিনটি বড় নদী রয়েছে দেশে। স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই দেশের মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচনেও বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীন-ভারতের চলমান বৈরিতা এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বৈরিতায় সম্প্রতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
চীন ও বাংলাদেশের জনগণ প্রাচীনকাল থেকেই পরস্পরের ভালো বন্ধু। প্রাচীনকালের দক্ষিণ রেশমপথ এবং সামুদ্রিক রেশমপথ ছিল দু’পক্ষের যোগাযোগ ও বোঝাপড়ার মূল মাধ্যম। এ নিয়ে হাজার বছর ধরে প্রচলিত অনেক গল্প-কাহিনীও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীন-ভারতের চলমান বৈরিতায় সম্প্রতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তৎকালীন চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই দু’বার ঢাকা সফর করেন। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৪৫ বছর ধরেই চীন বাংলাদেশকে আন্তরিক বন্ধু ও উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে গণ্য করে আসছে। চীন সব সময় দু’দেশের সম্পর্কোন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেয় এবং কেন্দ্রীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইসু্যতে পরস্পর পাশে থাকার নীতিতে বিশ্বাস করে। দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। পরিবহণ, জ্বালানি ও বিদু্যৎ, টেলিযোগাযোগসহ বেশ কয়েকটি প্রধান অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে চীন। এতে বাংলাদেশের পাশাপাশি লাভবান হচ্ছে চীনও। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছিল ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে চায়নারই বিনিয়োগ ছিল ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশ বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। তখন বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীন প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিল পরবর্তী চার বছরের মধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে, যেটা এখন পর্যন্ত কোনো একক দেশ থেকে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। কিছুটা বিলম্ব হলেও সেই অর্থ বাংলাদেশের পাইপলাইনে প্রবেশ শুরু হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বহুমাত্রিক, যার মধ্যে পণ্য বাণিজ্য থেকে শুরু করে রয়েছে আঞ্চলিক অবকাঠামো ও বিনিয়োগের সম্পর্ক। চীন এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ও ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় দাতা দেশ। এছাড়া দেশের মূল অবকাঠামোতে রয়েছে চীনের বড় অর্থায়ন। সম্প্রতি চীনের সম্প্রসারিত বাজারে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা নিতে পারলে বাংলাদেশের জন্য চীন হতে পারে সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। যা দুদেশের পারস্পরিক সম্পর্কের অব্যাহত ধারাবাহিকতার পাশাপাশি রূপ নেবে ঐতিহাসিক সম্পর্কে। যার সুবিধা পাবে উভয় দেশ।