নিজস্ব প্রতিবেদক:
অর্থায়নের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে অবশেষে গাজীপুরের ধীরাশ্রমে আন্তর্জাতিক ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) স্থাপন করা হচ্ছে, যেখানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি রেলে কনটেইনার এনে রাখা হবে। বন্দরের গতি বাড়াতে যে তিনটি প্রকল্প সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে তার একটি ধীরাশ্রম আইসিডি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকেই জানানো হয়েছে, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পতে অর্থায়ন করবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, অনেক আগে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হলেও অর্থায়নকারী না পাওয়ায় বাস্তবায়ন করা যায়নি। এখন অর্থায়নকারী পাওয়া গেছে। এডিবি প্রকল্পটিতে অর্থায়নে সম্মত হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, ধীরাশ্রমে আইসিডি নির্মাণ হলে রাজধানীতে প্রবেশ না করেই কনটেইনার বহনকারী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এতে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট চালু হলে ওই দেশগুলো থেকে আনা কনটেইনার রাখা যাবে এ আইসিডিতে। এ ছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণের পর ঢাকা-মোংলা রুটে কনটেইনারবাহী ট্রেন পরিচালনা করা যাবে। চট্টগ্রাম বা মোংলা থেকে উত্তরাঞ্চলে কনটেইনার পরিবহন করতে আর ঢাকায় প্রবেশ করতে হবে না। ধীরাশ্রম আইসিডিই হবে সারা দেশের এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কনটেইনার ডিপো। জানা গেছে, ২০০৭ সালে প্রথম গাজীপুরের ধীরাশ্রমে আইসিডি নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে রেলওয়ে। কমলাপুর আইসিডির ওপর চাপ কমাতে তখন গাজীপুরের পুবাইল রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে প্রায় ১৩৬ দশমিক ৫ একর জমির ওপর ধীরাশ্রম আইসিডি স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। সিদ্ধান্ত ছিল সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি অর্থাৎ পিপিপি ভিত্তিতে নির্মাণ হবে এটি। তবে অর্থায়নকারী না পাওয়ায় গত এক যুগেও প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। এখন মেট্রোরেল আর পদ্মা সেতুর রেল লিংকের কারণে কমলাপুর রেলস্টেশন স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে। এতে পাশের কমলাপুর আইসিডিও আর থাকবে না। এ অবস্থায় ধীরাশ্রমের প্রস্তাবিত কনটেইনার ডিপোকে আরও বৃহত্তর পরিসরে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার এনে রাখা হয় ঢাকার কমলাপুর আইসিডিতে। এটি রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে গুরুত্বপূর্ণ ঘনজনবসতি ও ব্যস্ততম এলাকায় অবস্থিত। প্রধানতম রেলস্টেশন ও যোগাযোগের কেন্দ্র হওয়ায় এ অঞ্চল নিয়ে ভবিষ্যতে এখানে ‘মাল্টি মোডাল কমিউনিকেশন হাব’ তৈরির পরিকল্পনা আছে সরকারের। এরই মধ্যে দেশের মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে মেট্রোরেলের লাইন কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত অংশের কার্যক্রম চলছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে এখানে আইসিডির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রেলে পরিবহনকৃত কনটেইনার রাখার জন্য বিকল্প আইসিডি জরুরি হয়ে পড়েছে। অগ্রাধিকার তালিকায় চলে এসেছে ধীরাশ্রম আইসিডি প্রকল্প। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বছরে মাত্র ৯০ হাজার টিইউএস কনটেইনার পরিবহনের সক্ষমতা আছে রেলওয়ের। সক্ষমতা কম থাকায় বর্তমানে কমলাপুরে প্রতিদিন একটি ট্রেনে ৬০টি কনটেইনার পরিবহন করা হয়। দৈনিক দু-তিনটি কনটেইনারবাহী ট্রেন ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে চলাচল করে। এতে বর্তমানে ট্রেনে বছরে ৬০-৭০ হাজার কনটেইনার পরিবহন করা হয়। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রতিদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে কনটেইনারবাহী ছয়টি ট্রেন যাতায়াত করতে পারবে। একটি ট্রেন ২০৪টি কনটেইনার পরিবহন করলে বছরে ৪ লক্ষাধিক কনটেইনার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে আনা-নেওয়া করা যাবে। ফলে বন্দরে কনটেইনার জট অনেকাংশে কমে যাবে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতি বছর চট্টগ্রাম বন্দরে গড়ে প্রায় ১২ শতাংশ হারে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যা বাড়ছে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসারে এ বন্দরের দক্ষতা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বন্দরসংশ্লিষ্ট বে-টার্মিনাল ও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল অবকাঠামো দুটি বাস্তবায়ন হলে কনটেইনারের লোড-আনলোড আরও বাড়বে। সে চাপ সামাল দিতে হলে দ্রুত কনটেইনার সরাতে হবে বন্দর থেকে। বর্তমানে ট্রাকে কনটেইনার পরিবহনে অনেক বেশি ব্যয় হয়। এ ক্ষেত্রে দ্রুত ও সাশ্রয়ী কনটেইনার পরিবহনের মাধ্যম হচ্ছে রেলপথ। রেলপথে ওই কনটেইনার ধীরাশ্রম আইসিডিতে নিয়ে আসতে পারলে ব্যবসায়ীদের ব্যয় যেমন কমবে তেমন বন্দরের কনটেইনার জটও হ্রাস পাবে।