নিজস্ব প্রতিবেদক:
শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে তার সুবাতাস বইছে বলে মন্তব্য করেছেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান। এখন এখন ডিএসইর সার্ভিলেন্স অনেক শক্তিশালী উল্লেখ করে মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, আমাদের আইটি বিভাগে অনেক দুর্বলতা আছে। এরপরেও ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ঘটনা আর পুনরাবৃত্তি হবে না।
গতকাল বুধবার রাজধানীর নিকুঞ্জে অবস্থিত ডিএসইর কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান, শাকিল রিজভী, শাহজাহান, মুনতাকিম আশরাফ, নাসরিন সুলতানা প্রমুখ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, আমরা ফেব্রুয়ারিতে ডিএসই বোর্ড দায়িত্ব নেই। এরপর নানা সমস্যা ছিল। করোনা মহামারির কারণে ৬৬ দিন লেনদেন বন্ধ রাখা হয়। সর্বোপরি বিএসইসির ইতিবাচক কর্মকান্ডে ডিসেম্বরের পর থেকে পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ডিএসইর কোনো ডিজাস্টার রিকভারি সাইট নেই। সফটওয়্যারের যে সমস্যা সেটা আমাদের সামনে এসেছে মাস তিনেক আগে। এর প্রেক্ষিতে নিকুঞ্জে কার্যক্রম চলছে। আগামী জুনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা, বিএসইসির সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে, যা পুঁজিবাজারে সুবাতাস নিয়ে এসেছে।
বিমা খাতের সম্পর্কে আইডিআরএ যে নির্দেশনা দিয়েছে তার সম্পর্কে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, এর ব্যাখ্যা ওই সংস্থাই দিতে পারবে। তবে বিনিয়োগকারীদের সব কিছুর ব্যাখ্যা জেনে শেয়ার কেনা উচিত। এসএমই ও এসএমই বোর্ড উদ্বোধন করা হলেও তার কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি কেন জানতে চাইলে মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, উদ্বোধন করা হলেও তা সে সময় পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল না। তবে বর্তমানে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ফেব্রæয়ারির মধ্যেই এসএমই ও এসএমই বোর্ড চালু করা হবে।
ডিএসইর সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, বিনিয়োগ শিক্ষার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা না জেনে, না বুঝে পুঁজিবাজারে আসবেন না। আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কেউ দায়িত্ব নেবে না। রকিবুর রহমান বলেন, আমাদের ভয় হচ্ছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ৯০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে, যেখানে উন্নত দেশের কোম্পানির শেয়ারের সিংহভাগ থাকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। আমরা তথ্য প্রযুক্তিতে এখনো কিছুটা পিছিয়ে আছি সত্য। তবে চীনের সঙ্গে আমরা প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছি। বর্তমানে ডিএসই নাসডাকের (যুক্তরাষ্ট্রের স্টক এক্সচেঞ্জ) সঙ্গে সফটওয়্যারের চুক্তি রয়েছে। এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালে। তারপর আমরা চীনের থেকে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসব, তখন আর এ সমস্যা হবে না। রকিবুর রহমান বলেন, ২০১০ সালে আমরা বিনিয়োগকারীদের মার্জিন লোন নিয়ে পুঁজিবাজারে না আসতে বলেছিলাম। কিন্ত তখন তা মানা হয়নি। তবে সে সময়ের তুলনায় এখন পুঁজিবাজার অনেক শক্তিশালী। তিনি বলেন, লেনদেনযোগ্য শেয়ার সবচেয়ে বেশি ব্যাংকের। প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যাংকের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের হাতে। এক সময় ব্যাংকগুলো বেশি বেশি বোনাস দিয়ে পরিচালকরা টাকা নিয়ে যেত। এখন তারা ১০ টাকার শেয়ার কেনেন না। তাই এ খাতে সুশাসন খুবই জরুরি।
ডিএসই আরেক পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, আগে শেয়ারের অর্ডার আসতো মার্কেট লট হিসাবে। সে সময় হাওলা চার্য থাকলেও পরবর্তীতে তা তুলে নেয়া হয়। এখন একটি হিসেবে অর্ডার আসে। ফলে দিনে প্রচুর অর্ডার আসে, প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ অর্ডার আসলেও তার মাত্র ২৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়। প্রযুক্তি খাতের সমস্যার জন্য এটি একটি বড় কারণ। আর চাইলেই একটি সফটওয়্যার থেকে আরেকটি সফটওয়্যারে যাওয়া যায় না। তবে আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা আরো ভালো সেবা দিতে পারব। উর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের কোনো ঝুঁকি আছে কি না- এমন প্রশ্নে শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে।