নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন দেশ পরিচালনার সুযোগ পাওয়ায় বাংলাদেশ আজ মর্যাদাপূর্ণ, স্বনির্ভর এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে উঠছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই দেশ স্বনির্ভর ও উন্নত হয়ে গড়ে উঠেছে। তিনি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
গতকাল সোমবার গণভবনে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
ইংরেজি নতুন বছরে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটা বিষয় সুস্পষ্ট হয়েছে যে, সমগ্র বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখছে; যেটি অতীতে ছিল না। বাংলাদেশ নাম বললেই ঝড়, বন্যা আর দারিদ্র্যের দেশ বলে বিশ্বের অনেকেই মনে করতেন। বিশ্বে এখন বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে।
এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।
চতুর্থবারের মতো ভোট দিয়ে তাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের সীমিত সম্পদ এবং বিশাল জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়েই তার সরকার দেশকে আত্মমর্যাদাশীল করে গড়ে তুলতে চায়। যতটুকু সম্পদ আছে, তা নিয়েই দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষম করে তোলা হবে। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে নিজেদের আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান করতে পারায় আজকে বিশ্বে সেটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে আসীন হয়েছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে বাংলাদেশ- এই একটি সিদ্ধান্তই সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ আর পরনির্ভরশীল নয়।
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পেছনে আমাদের দেশেরই স্বনামধন্য কিছু লোক জড়িত, যেটা আমাদের দুর্ভাগ্য। একটি ব্যাংকের সামান্য একটি এমডি পদের লোভে একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেটি বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে, যে পদ্মা সেতু আমাদের দক্ষিণের ২২টি জেলার মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধি শতকরা ২ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে, সেটি বন্ধের ব্যবস্থা নিয়েছিল। যা হোক, একটি আঘাত এলে হয়তো মানুষ সচেতন হয় এবং নিজের কাজ করা শেখে, আমরা সেটাই শিখেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই আঘাতটা আসায় আমরা হতাশ না হয়ে বরং সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিই এবং যেটা আজকে বাস্তবে রূপ নিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯-এর জন্য জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচি ঘটা করে পালন করতে না পারলেও দেশের সব জনগণকে একটি ঘর করে দেওয়ার মাধ্যমে দেশের সব ভূমিহীন, নিঃস্ব, হতদরিদ্র পরিবারকে পুনর্বাসন করাই সরকারের লক্ষ্য। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশে আর একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। আমরা প্রত্যেক ঘরে আলো জ্বলাব। ‘
তিনি আরও বলেন, জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে মৌলিক চাহিদাগুলো তার সরকার পূরণ করে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। সেভাবেই দেশকেও এগিয়ে নিয়ে গিয়ে জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। জাতির পিতা দেশ স্বাধীনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে বলেছিলেন, এ দেশের মাটি এবং মানুষ রয়েছে, তা দিয়েই তিনি দেশকে গড়ে তুলবেন- সে কথা মাথায় রেখেই তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে নতুন বছরে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন চলমান রাখা এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সমাগত হওয়ায় এটিকে জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।