নীড় পাতা / জাতীয় / একুশ হোক প্রাপ্তির

একুশ হোক প্রাপ্তির

সুরজিত সরকার

বিষময় বিশ শেষ হচ্ছে অবশেষে। সঙ্গে অনেক কিছু কেড়ে নিয়ে আটকে দিয়ে। একুশের শুরু হতে যাচ্ছে। একুশ সংখ্যাটা আমাদের চেতনার, বিশ্বাসের, সংগ্রামের, অধিকার আদায়ের। বিশ সালের শুরুতে দশক শেষের চাওয়া পাওয়ার দ্রবণে করোনা নামক উপাদান জীবনের স্বাদ গন্ধ নষ্ট করেছে। তবে একুশ হোক একেবারেই অন্যরকম। দুরন্ত প্রতাপ নিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিক বিষময় বিশের জ্বালা। একুশের নতুন সকালের শুরুটা হোক কুয়াশা ভেদ করে প্রথম রাঙা আলোয় আড়মোড়া ভাঙ্গা চোখে দেখা সূর্য্যের মতন। আমাদের চলতে হয়, দেখতে হয়। তারপরও খুব ঠান্ডায় কাঁপা হাঁটুতে উঠে দাঁড়িয়ে একুশের প্রতীক্ষায় ক্ষয় পূরণে লড়তে হয়।

স্বাগতম একুশ। আমাদের দেশের বেকারত্ব মুক্তি পাক। ভারতে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লি সীমান্তে চলমান কৃষক আন্দোলন সফল হোক। এর থেকেও বেশি চাওয়া করোনার ভ্যাকসিন পাক পৃথিবীর সকল প্রান্তিক পর্যায়ের সকল মানুষ যতটা দ্রুত সম্ভব। বন্ধ হোক মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা। শেষ হোক পৃথিবীর সকল অনিয়ম। পৃথিবীটা ভরে উঠুক ফুলে ফুলে। চারপাশ হোক ফুলের উদ্যান। পৃথিবীতে সকালে সূর্য্যের আলো যেমন সমানভাবে পৌঁছে যায় প্রতিটি কোণায় তেমনিভাবে প্রকৃতির সকল আয়োজনে সমতা আসুক। গৃহহীন ও ক্ষুধা মুক্ত হোক নতুন একুশের বসুন্ধরা। একুশের তাৎপর্যে সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার আদায় করে নিক।

ক্যালেন্ডার যখন ছিল না, তখন দিনক্ষণ নির্ধারণ করা বেশ কঠিন একটা কাজ ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে মিশরীয় জ্যোতির্বিদরা একটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে দিনকে ১২ ঘন্টা ও রাতকে ১২ ঘন্টা হিসেবে ভাগ করে ২৪ ঘন্টায় একটি পূর্ণ দিন ধার্য করা হয়৷ গ্রিক দার্শনিক প্লেটো একটি বিশেষ পানির ঘড়ি তৈরি করে তাঁর আশ্রমের ছেলেদের পাঠ দিতেন৷ মানুষ বছর গণনা শুরু করেছিল চাঁদের হিসেবেই এর অনেক পরে আসে সৌর গণনার হিসেব। এখান থেকেও বলা যায়, আজকের এই আধুনিকায়নের যুগে যখন আমরা এত আড়ম্বরের মধ্য দিয়ে বছর শুরু করি সেই আয়োজনের শুরু নতুন বছরের নতুন ক্যালেন্ডারে সেই শুরুটা হয়েছিল চাঁদের হিসেবে। চাঁদের মত কলঙ্কমুক্ত স্নিগ্ধ হোক আমাদের নতুন একুশ। নতুন প্রজম্ম একটা সুস্থ্য পৃথিবী পাক।

নতুনকে বরণ করতে পুরনোকে বাদ দেয়া যায়না আবার পুরনোকে ছেড়ে নতুনকে নিয়ে শুরু করতে হয় তারপরও স্মৃতির বুকে কখনও আলতো কখনও গাঢ় দাগ কেটে থেকে যায় পুরনো আর নতুন মিলেমিশে। দেয়ালে কাঁটাটা সেই একটাই থাকে শুধু পাল্টে যায় ক্যালেন্ডার। সেই সঙ্গে পাল্টে যায় সময়ের স্রোতে জীবন। পুরনো আর নতুনের মতন ভালো মন্দও জীবনের সঙ্গে মিলেমিশে থাকে। যদিও এখন আর নতুন বইয়ে পুরনো ক্যালেন্ডার দিয়ে মলাট দেয়া বা নতুন ক্যালেন্ডার ঘরে নেয়ার মত ছোট ছোট আন্তরিকতাগুলো দেখা যায়না।

এই ছোট ছোট আন্তরিকতাতে ছিল অপার সৌন্দর্যময় আনন্দ। আমাদের একটা ছোটবেলা ছিল ভালো লাগার ভালোবাসার যেটি হারিয়ে গেছে। এখন গল্পের ছলেও খুব কম উঠে আসে যান্ত্রিক ব্যস্তাতার মাঝে। একুশ কি ফিরাতে পারবে আমাদের সেই ছেলেবেলায়, যেখানে কোন এক দুরন্ত শিশু দুপুরের ভাত ঘুম চুরি করে দৌঁড়ে বেড়াতো গ্রামের পাড়ায় পাড়ায়, বাগানে, নদীর তীরে। একুশ সালটাতেও পাল্টাবেনা ছয়টি ঋতু। প্রকৃতির জীবন চক্র সবগুলো ঋতু ফিরে আসবে। একেক ঋতুর একেক রুপ গন্ধগুলো কি ফিরে পাবে আমাদের অনুজ প্রজম্ম। আমারা কি পারব একটি সুস্থ্য পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরতম দিনে দাঁড়াতে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে পারব এটিই এই বুড়ো পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরতম দিন যা এর আগে কখনও আসেনি আগে।

তারপর আমাদের উত্তর প্রজম্মও বলবে একইভাবে। একুশ আমাদের ভাষা দিয়েছে, দিয়েছে স্বাধীনতার ভিত। একুশের একুশ আরও উদদীপ্ত হয়ে স্বাধীনতার পঞ্চাশ হবে। এই একুশে আমরা রাঙব রঙ্গিন রঙয়ের হোলিতে। একুশ যেমন আমাদের শিখিয়েছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে তেমনি একুশের জন্যও এটি চ্যালেঞ্জ আমাদের কে ভালো কিছু দেয়ার। কেবল তখনই খরস্রোতা অসামঞ্জস্যপূর্ণতা গুলো গতিহীন হবে, প্রতিটি সকাল সকলের জন্য হবে সমতার সমকালের। মহাকালের একুশ হবে আমাদের সমকাল।

আরও দেখুন

নাটোরে ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে জখম

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনৈতিক পূর্ব শত্রুতার জেরে নাটোরে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। …