নিজস্ব প্রতিবেদক:
নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ী পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলো বাংলাদেশ ভারত রেল যোগাযোগ। গতকাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই রুটে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন। দীর্ঘ ৫৫ বছর পড়ে চিলাহাটি শিলিগুড়ি রুটে রেলপথ চালুর মাধ্যমে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হলো। গতকাল ঢাকা-দিল্লির মধ্যে ভার্চুয়াল সামিট শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা পর চিলাহাটি রেল স্টেশন থেকে ৩২টি পণ্যবাহী বগি নিয়ে ভারতের হলদিবাড়ী স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ট্রেন। সে সময় রেললাইনের দুই ধারে হাজার হাজার নারী-পুরুষ সমবেত হয়ে হাত উঁচিয়ে অভিনন্দন জানান। বর্তমানে পণ্যবাহী ট্রেন চললেও আগামী বছর এই রুটে চলবে যাত্রীবাহী ট্রেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় বন্ধ হয় চিলাহাটি-ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগ। পুনরায় এই রুট চালু করার উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে চিলাহাটিতে স্থাপন করা হয়েছে নতুন রেলপথ, ভিআইপি গেস্ট হাউস করা হয়েছে নির্মাণ। কাস্টম হাউস আর ইমিগ্রেশন অফিস নির্মাণের কাজ শেষ হলে আগামী বছর যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে। মোংলা বন্দর থেকে মালামাল নিয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। গতকাল চিলাহাটি রেল স্টেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয় মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, এ রেলপথ চালু হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উচ্চতা আরও অনেক বেশি উচ্চতায় স্থান পাবে। পাশাপাাশি দুই দেশের জনগণ উপকৃত হবে। ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে উন্মোচিত হলো দুই দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার নতুন দ্বার। পণ্যবাহী ট্রেনের পাশাপাশি আগামী বছর যাত্রীবাহী ট্রেন ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত চালু করা হবে বলে জানালেন মন্ত্রী। উপস্থিত বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেলপথ আবারও চালু হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটবে। আশা ভরসা অনেক আমাদের। আমদানি-রপ্তানি শুরু হবে। বিশেষ করে রংপুর অঞ্চল উপকৃত হবে। ২৬ মার্চ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হলে আমাদের জন্য মাইলস্টোন হিসেবে থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য বাণিজ্য। এক্ষেত্রে বাণিজ্য বাড়বে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুট চালু হওয়ার ফলে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার, নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেল, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রাবেয়া আলীম, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ, প্রকল্প পরিচালক ও রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের কর্মকর্তা আবদুর রহিম, নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান পিপিএম উপস্থিত ছিলেন।
ৎপ্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট পাক-ভারত বিভক্তের পরেও চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেলপথটি চালু ছিল। ‘দার্জিলিং মেইল’ নামে একটি ট্রেন চলত। কিন্তু ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তে নীলফামারী জেলার ডোমারের চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ী হয়ে দার্জিলিং পর্যন্ত রেলপথ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বন্ধ থাকা রেলপথটি চালু করতে উদ্যোগ নেয় দুই দেশের সরকার। ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ৮ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।