নিজস্ব প্রতিবেদক:
এবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হচ্ছে এমন এক সময়ে যখন কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক শক্তির একটি অংশ জাতির পিতার ভাস্কর্য নির্মাণকে সামনে রেখে শক্তি দেখানোর চেষ্টা করছে।মৌলবাদী চক্রের সব ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের তাগিদও দিয়েছেন তিনি। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আগের দিন রোববার দেয়া এক বাণীতে এই আহ্বান জানান সরকার প্রধান। তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীদের যারা রক্ষার চেষ্টা করছে তাদেরও এক দিন বিচার হবে।এবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হচ্ছে এমন এক সময়ে যখন কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক শক্তির একটি অংশ জাতির পিতার ভাস্কর্য নির্মাণকে সামনে রেখে শক্তি দেখানোর চেষ্টা করছে। রাজধানীর ধোলাইপাড়ে এই ভাস্কর্য নির্মাণ হলে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া, টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেয়ার হুমকির মধ্যে কুষ্টিয়ায় নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্যে ভাঙচুরও করা হয়েছে।এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভের মধ্যে মাঠে নেমেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতির সংগঠন।এর মধ্যে আবার দেশ জুড়ে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমনকি বিচারকরা মাঠে নেমে জাতির পিতার সম্মান অম্লান রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জাতির পিতা। তার ওপর যে কোনো হামলা জাতির ওপর হামলা হিসেবে দেখা হবে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় একটি ওয়েবিনারে বলেছেন, একাত্তরে যেভাবে রাজাকারদের প্রতিরোধ করা হয়েছে, তেমনি এখন হেফাজতের মৌলবাদী গোষ্ঠীকেও মোকাবিলা করা হবে।প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ‘আমি দল মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একাত্তরের ঘাতক, মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-মৌলবাদী চক্রের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।’মৌলবাদী চক্রকে রুখে দিন: প্রধানমন্ত্রীমুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আগে আগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসর আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেশেখ হাসিনা তার বাণীতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচারের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনেছে। বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে।’বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত আল বদর বাহিনীর নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আরেক আলবদর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের দণ্ড কার্যকর এখন সময়ের অপেক্ষা।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই কুখ্যাত মানবতাবিরোধীদের যারা রক্ষার চেষ্টা করছে, তাদেরও এক দিন বিচার হবে। এ সব রায় বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে। দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে।’শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।’মৌলবাদী চক্রকে রুখে দিন: প্রধানমন্ত্রীকরোনা পরিস্থিতিতে এবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আয়োজন থাকবে সীমিত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জানাতে হবে শ্রদ্ধাবঙ্গবন্ধু কন্যা তার বিবৃতিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা, সাম্প্রদায়িকতার জঙ্গিবাদ-উত্থান, জাতীয় নির্বাচন বানচালে দেশ জুড়ে ‘আগুন সন্ত্রাস’ চালানোর কথাও তুলে ধরেন। বলেন, ‘এখনও নানাভাবে তারা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।’এবার করোনা পরিস্থিতিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হচ্ছে ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেবেন না। তাদের পক্ষ হয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন তাদের প্রতিনিধিরা।সাধারণের শ্রদ্ধার আয়োজনও সীমিত করা হবে ঝুঁকির কারণে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জানাবে হবে শ্রদ্ধা।