রবিবার , সেপ্টেম্বর ২৯ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / ফুঁসছে বাংলাদেশ

ফুঁসছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। আর সেই বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য যখন ইসলামের অপব্যাখ্যায় ভাঙচুর করা হয়, তখন সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াটাও ভিন্নরকমই হয়। ঠিক সেটাই হয়েছে। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে সারা দেশ। গণবিস্ফোরণ ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। রোববার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ দেশের অনেক জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বইছে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড়। এরই মধ্যে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরে সরাসরি জড়িত অভিযোগে পুলিশ স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দুই শিক্ষক ও দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের ভাস্কর্যবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে দুই মাদ্রাসাছাত্র বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। গ্রেফতারকৃত চারজন হলোÑ কুষ্টিয়া শহরের জগতি পশ্চিমপাড়া এলাকার ইবনি মাসউদ (রা.) মাদ্রাসার শিক্ষক আল আমিন (২৭), শিক্ষক

ফুঁসছে বাংলাদেশ
ইফসুফ আলী (২৬) এবং একই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র আবু বক্কর ওরফে মিঠন (১৯) ও সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (২০)।
রোববার বিকাল সাড়ে ৩টায় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খন্দকার মুহিদ উদ্দীন।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের খবর ছড়িয়ে পড়লে শনিবার থেকেই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও শাহবাগে ঢাবির অপরাজেয় বাংলাসহ অনেক স্থানেই বিক্ষোভে নেমে পড়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন। তবে রাত শেষে রোববার দিনভর সারা দেশেই এ নিয়ে উত্তাল অবস্থা সৃষ্টি হয়। এমন প্রেক্ষাপটে রোববার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখনও দলের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। আবারও বাড়াবাড়ি করলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ঘরে বসে থাকবে না।’
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কুষ্টিয়ার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্তে যাদের নাম বেরিয়ে আসবে, তাদের নামেই মামলা হবে। এ ছাড়া দেশের সব ভাস্কর্যের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর হামলা মানে দেশের ওপর হামলা, বাংলাদেশের ওপর হামলা, এটা সংবিধানের ওপর হামলা। এর বাইরেও ছাত্রলীগ, আইনজীবীদের সংগঠনসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে রোববার ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার দাবি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়ায় মাদ্রাসা শিক্ষকসহ গ্রেফতার ৪ : নিজস্ব প্রতিবেদক কুষ্টিয়া পুলিশের বরাত দিয়ে জানান, কুষ্টিয়ার জুগিয়া ইবনে মাসুদ মাদ্রাসার দুই শিক্ষকের প্ররোচনায় মাদ্রাসার দুই ছাত্র আবু বক্কর ওরফে মিঠুন ও সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ছাত্রদের শনাক্ত করে পুলিশ। রোববার কুষ্টিয়া পুলিশ তাদের গ্রেফতার করলে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এরপর ওই দুই ছাত্র তাদের পেছনে মদদদাতা বা পরামর্শদাতা হিসেবে তাদের মাদ্রাসার দুই শিক্ষকদের নাম বলে। এরপর পুলিশ সেই দুই শিক্ষক আল আমিন ও ইফসুফ আলীকেও গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত মিঠুন কুষ্টিয়ার মিরপুরের সিংপুর মৃধাপাড়ার সমশের মৃধার ছেলে, নাহিদ দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গোলাবাড়িয়া গ্রামের সামসুল আলমের ছেলে। শিক্ষকদের মধ্যে আল আমিনের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুরে এবং ইউসুফের বাড়ি পাবনার আমিনপুরে।
কুষ্টিয়ায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রোববার পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খন্দকার মুহিদ উদ্দিন জানান, শিক্ষকদের প্ররোচনায় এ ঘটনা ছাত্ররা ঘটিয়েছে। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনার ওপর আঘাত। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ওপর আঘাত। এর পেছনে যে শক্তি থাকুক না কেন তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
মুহিদ উদ্দিন বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। খুব অল্প সময় আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাতে ভাস্কর্য ভাঙচুরের কথা তারা স্বীকার করেছে। তারা উভয়ে মাদ্রাসার ছাত্র। ছাত্রদের পেছনে দুই শিক্ষকের মদদ দেওয়ার অভিযোগে তাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে ডিআইজি জানান, গত শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূর থেকে পায়ে হেঁটে এসে আসামিরা ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। ভাঙচুরের পর তারা আবার মাদ্রাসায় ফিরে যায়। সেখানে গিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। পরে শনিবার সকালে আসামিরা অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের পরামর্শে পালিয়ে যায়। আসামিদের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ডিআইজি মুহিদ উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় অন্য কোনো ষড়যন্ত্র বা কোনো মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীর মদদ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আসামিদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে মূল রহস্য। তবে মৌলবাদী চিন্তাধারা থেকে আসামিরা ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে, এটি প্রাথমিক তদন্তে স্পষ্ট। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি একেএম নাহিদুল ইসলাম রাহাত, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএ তানভীর আরাফাতসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ভাস্কর্য ভাঙচুরের পর দিনই গত শনিবার সন্ধ্যায় ওই এলাকায় গুলির প্রসঙ্গে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার জানান, এটি অন্য কোনো ঘটনা। এ ঘটনার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নয়। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিবাদ সমাবেশ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। রোববার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পৃথকভাবে এই বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে রোববার বিকালে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তার মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। একই সময়ে মহানগর উত্তরের অন্তর্গত প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। এ ছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অন্তর্গত প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ বিকাল ৩টায় পৃথক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ করেছে। এসব বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে শাস্তি দাবি করেন নেতাকর্মীরা। সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও মৎস্যজীবী লীগ।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দিনভর বিক্ষোভ : বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা ও ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতার প্রতিবাদে আয়োজিত এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গোটা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিকাল ৩টায় যুবলীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এই সমাবেশ থেকে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি, সাম্প্রদায়িক, উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। সমাবেশ থেকে যুবলীগের নেতারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি এই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে যুবলীগ রাজপথে থাকার ঘোষণা দেয়। এ সময় যুবলীগের সমাবেশ থেকে সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাড়া-মহল্লা, মসজিদ-মাদ্রাসায় বসে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কোনো অপতৎপরতায় লিপ্ত হয় কি না সে দিকে লক্ষ রাখার নির্দেশ দেন। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি গুলিস্তান, নূর হোসেন স্কয়ার, পুরানা পল্টন মোড় প্রদক্ষিণ করে। এরপর মিছিলটি বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। একই সময় বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এ ছাড়া কৃষক লীগ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে সংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাঙার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবি করে মিছিল করে। এ সময় যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীরাও মিছিলে অংশ নেন। বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের পাশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল করে শাহবাগ থানার অন্তর্গত ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। এখানে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতন। এই সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা ও ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের প্রতিহত করতে রাজপথে থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয় এবং মিছিলটি বঙ্গন্ধুু অ্যাভিনিউ ও গুলিস্তান এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল, ওয়াজ মাহফিলে উপস্থিত থাকার নির্দেশ : ‘তোরা দিনের বেলা আসিস, তোদের ঈমানি শক্তি কত দেখব।’ কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের উদ্দেশে এভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্রলীগ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন ঢাবি শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ অনেকে।
ছাত্রলীগ সভাপতি জয় বলেন, বাংলাদেশের মানচিত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের প্রতিটি জনগণের হৃদয়ে অবস্থান করছেন। ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে জনগণের হৃদয় থেকে বঙ্গবনন্ধুকে দূরে রাখা যাবে না। এ সময় দেশের যেকোনো ওয়াজ মাহফিলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান করার নির্দেশনা দেন ছাত্রলীগ সভাপতি।
সাধারণ সম্পাদক লেখক বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলবেন না। যদি কেউ বলেন, জাতির জনকের অবমাননা করেন, তাহলে সেই দেহ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারবেন না। তাদের ঠিকানা হবে কারাগারে বা ফাঁসির কাষ্ঠে। সমাবেশের আগে বিশ^বিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়, যা ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সিপিবির বিক্ষোভ : বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)। রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ করে দলটি। এ সময় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক এমএ সামাদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শামসুল হক সরকার, বায়েজিদ, আলাউদ্দিন, রকিবুল ইসলাম ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক হারুন চৌধুরী।
সমাবেশে এমএ সামাদ বলেন, মৌলবাদী শক্তিকে মাঠে নামানো ও নিয়ন্ত্রণে রাখার যে কৌশল দীর্ঘদিন ধরে সরকার অবলম্বন করছে, তা দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে সাম্প্রদায়িক শক্তিকেই পুষ্ট করেছে। যার বিষময় ফল দেশবাসী এরই মধ্যে প্রত্যক্ষ করছে। গণমানুষের অধিকার হরণ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা একই সঙ্গে করার পরিপ্রেক্ষিতে দেশ এখন মৌলবাদীদের আস্ফালন ও হুমকির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। বক্তারা সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য প্রগতিশীলদের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর ও বিরোধিতাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ন্যাপের নিন্দা : কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দুষ্কৃতকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। রোববার এক বিবৃতিতে দলটির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া এ দাবি জানান। নেতারা বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করতেই ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে এ অপশক্তি মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে এ অশুভ শক্তির তৎপরতা ও ষড়যন্ত্রের আসল চেহারা ফুটে উঠেছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে ক্ষতবিক্ষত করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।
ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার দাবি : রোববার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সাধারণ আইনজীবীসহ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ সময় ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার দাবি জানান তারা। এদিন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সামনে সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে আয়োজিত এক অবস্থান কর্মসূচিতে যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন যারা ভাস্কর্য ভেঙেছে তাদের রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার অধীনে আনা যায় কি না সে বিষয়ে বিবেচনা করতে সিনিয়র আইনজীবীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ সময় সুমন বলেন, একাত্তর সালে যারা বলেছেন, যারা পাকিস্তানের বিরোধিতা করবে তারা আর মুসলমান থাকবে না। যারা এসব কথা বলেছেন তারা এসব কথা বলে তো আর পাকিস্তান আটকাতে পারেনি, এ দেশে রাখতে পারেনি। এদের বংশধররাই আজকে বলে এটা মূর্তি, এটা প্রতিমা। এটা এই স্বাধীনতার সপক্ষের সরকারের বিরোধিতা করার জন্যই, ইসলাম প্রতিষ্ঠা এদের কোনো উদ্দেশ্য না। তিনি বলেন, পাকিস্তান, সৌদি আরব, ইরান কিংবা তুরস্কে যখন এরদোগানের ভাস্কর্য হয় তখন তারা বলে এসব পবিত্র। একমাত্র বাংলাদেশের জাতির পিতা যার ভাস্কর্য হওয়ার পর যেটা আমাদের বাঙালিদের অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্কিত, পৃথিবীর কোনো জায়গা পাবেন না যে, অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হয়। ব্যারিস্টার সুমন আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা। যারা এই বঙ্গবন্ধুর অনুভূতিকে ধারণ করি, তাদের যারা আঘাত দিয়েছে তারা যাই হোক কোনোদিন প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজউদ্দিন আহমেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরী ও মোহাম্মদ মশিউর রহমান, মাহফুজুর রহমান লিখন, নাসরিন সিদ্দিকা লিনা, মাসুদ আলম চৌধুরী, ব্যারিস্টার শেখ ওবায়দুর রহমান ও অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী দাস।
চলচ্চিত্রকর্মীদের প্রতিবাদ-মানববন্ধন : আনন্দ সময় প্রতিবেদক জানান, কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন দেশের চলচ্চিত্রকর্মীরাও। রোববার বিএফডিসির প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় জাতির জনকের ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে চলচ্চিত্র পরিবার। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারের নেতৃত্বে এই মানববন্ধনে অংশ নেন মৌসুমী, ওমর সানী, মুশফিকুর রহমান গুলজার, এসডি রুবেল, গোলাম কিবরিয়া, খোরশেদ আলম ও অপূর্ব রানাসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে এ ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যার হাত ধরে দেশে স্বাধীনতা এসেছে, যিনি বাংলাদেশের স্থপতি তাঁর ভাস্কর্যে আঘাত মানে বাংলাদেশের ওপর আঘাত। যারা এই কাজ করেছে তারা রাজাকার, দেশদ্রোহী। ওই দেশবিরোধীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।’
অভিনেত্রী মৌসুমী বলেন, ‘আমাদের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেত্রী ও সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা, অভিনেতা রিয়াজ, নায়িকা নিপুণ, নায়ক সাইমন সাদিকসহ অনেক তারকাই প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

আরও দেখুন

নাটোরে সিংড়ায় সংখ্যালঘুদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোরে সিংড়ায় সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণ, নির্যাতন চাঁদাবাজি বন্ধের প্রতিবাদে ও ধর্ষককে গ্রেফতারের দাবিতে …