বিশেষ প্রতিবেদক:
দীর্ঘ দিন প্রেম ভালোবাসা ও লুকিয়ে বিয়ের পর ছেলের বড় ভাইয়ের বাঁধার কারণে স্বামীর ঘর থেকে বঞ্চিত এক নারী। অভিযোগ পাওয়া গেছে মেয়ে আওয়ামী পরিবারের হওয়ার কারণেই এই বাঁধা। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। ছেলে আদালত থেকে স্থায়ী জামিন নিয়েছে। অসহায় মেয়েটি নিরাপত্তাহীনতার কারণে সম্প্রতি থানায় সাধারণ ডায়েরী পর্যয়ন্ত করেছেন। নভেম্বর মাসের ৯ তারিখে করা জিডি নং ৩২৪।
ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ১ নং ব্রহ্মপুর ইউনিয়নে। শাঁখারীপাড়া গ্রামের মৃত মোজম্মেল হকের মেয়ে তামান্না খাতুনের সম্পর্ক হয় পাশের ছাতার ভাগ গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে ইলিয়াস আলীর সঙ্গে। দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক চলার পর ১৫/০২/২০১৭ সালে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে গোপনে চক বাসুদেবপুর চাঁপাই নবাবগঞ্জের নিকাহ রেজিষ্ট্রার কাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের কাছে বিয়ে করেন। সেসময় লেখা পড়ার কারণে দুজনই রাজশাহীতে অবস্থান করতেন। এক পর্যায়ে তামান্না বিয়ের সামাজিক স্বীকৃতি চাইলে ইলিয়াস বাড়িতে কথা বলে জানাতে চায়। বাড়ি থেকে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান ইলিয়াসের বড় ভাই জামাত নেতা জিয়াউল হক জিয়া। জিয়া নলডাঙ্গা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। অপরদিকে তামান্নার সঙ্গে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয় ইলিয়াসের। তামান্না ইলিয়াসের খোঁজ করে কোথাও না পেয়ে দারস্থ হন বিভিন্ন জনের। শেষমেষ উপায় না পেয়ে নাটোর আদালতে মামলা করেন ইলিয়াস, ইলিয়াসের পিতা ইউনুস আলী ও ইলিয়াসের বড় ভাই জিয়াউল হকের নামে।যার মামলা নং ৫২/২০২০ (নল)১৬/০৭/২০২০।
মামলার প্রথম শুনানীর তারিখ ছিল আগষ্ট মাসের ২৭ তারিখে সেদিনই আদালত থেকে স্থায়ী জামিন পান ইলিয়াস। জামিনে বের হওয়ার পর থেকেই নলডাঙ্গার বিভিন্ন ধরনের প্রভাবশালীদের দিয়ে ফোনে সমঝোতা করে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। দেখানো হয় বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি। সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ফতোয়া জারির চেষ্টাও করেন কেউ কেউ। স্বামীর ঘর ফিরে পেতে কিংবা সুষ্ঠ বিচার পাওয়ার জন্য লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তামান্না, তবে তামান্নাকে কোন সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস পর্যন্ত কেউ দেয়নি ।
২০১৪ সালে রাজশাহীর মতিহার থানা থেকে ইলিয়াস কে আটক করা হয় জামাত শিবিরের কর্মকান্ডে সম্পৃকতার জন্য। এছাড়া ২০১৬ সালে মীর কাশেমের ফাঁসির পর গায়েবানা জানাযার জন্য মামলা হয় ইলিয়াসের বড় ভাই জিয়াউল হক জিয়া ও পিতা ইউনুস আলীর নামে। সেই মামলাতে দুই মাস পরে জামিন মেলে তাদের। এই মামলার খরচের জন্য ইলিয়াস তামান্নার কাছে দুই লাখ টাকাও নেয় বলে জানান তামান্না।
এ ব্যাপারে ভূক্তভুগী তামান্না খাতুন বলেন, আমাকে বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে। সমঝোতা করতে বলা হচ্ছে। আমি আমার স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে চাই। সবাই আশ্বাস দেয় কেউ কিছু করেনা। আমি আমার মাকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছি। আমার বাবা সারা জীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে গেছেন আমি নিজেও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদক হিসেবে আছি অথচ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরেও, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারী অধিকার নিশ্চিত ঘোষণার পরেও আমাকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।
তামান্নার মা কামরুন নাহার বলেন, যেদিন মামলার তারিখ ছিল সেদিন কোর্টের বারান্দায় পা ধরে কেঁদেছি আমার মেয়েকে তাদের বাড়িতে নেয়ার জন্য তারপরও তারা আমাদের কথা শুনলনা। এখন আমাদের বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখাচ্ছে। আল্লাহ জানেন কবে আমাদের এই বিপদ থেকে মুক্তি মিলবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইলিয়াসের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার যোগাযোগের নম্বর গুলো বন্ধ পাওয়া যায়।
পরবর্বতীতে ইলিয়াসের ভাই জিয়া কে ফোন করলে জিয়া জানান, এই বিয়ে ছিল চুক্তির তবে চুক্তি সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি জিয়া। এছাড়া জিয়া আরও জানান, এবিষয়ে আদালতে মামলা চলমান আর আমার ভাই তামান্না কে ডির্ভোস দিয়েছে।
আমাদের সমাজে এখনও মেয়েরা নিগৃহীত। প্রয়োজনে ব্যবহার এবং প্রয়োজন শেষ হলেই নানা রকম কারণ দেখিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়ার প্রবণতা যতদিন না উঠে যাবে ততদিন এধরণের সমস্যা চলতেই থাকবে। শেষ অবধি কি তামান্না তার অধিকার ফিরে পাবে সেটি সময় নির্ধারণ করবে কিন্তু এই ব্যাধি নির্মুল করতে সবার আগে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন কারণ এটি এখন সমাজের বড় ব্যাধির দিকে ধাবমান।
আরও দেখুন
পেঁয়াজের চারা পুড়ে শেষ-কৃষকের মাথায় হাত! জমিতে এখন শুধুই ঘাস!
নিজস্ব প্রতিবেদক নলডাঙ্গা,,,,,,,,,,,,,,,,,জমিতে নষ্ট হওয়া পেঁয়াজের চারা দেখে নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি জমি লিজ নিয়ে …