নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে সৃষ্ট মহামারী থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় একটি মানসম্পন্ন ভ্যাকসিন। বাংলাদেশ সরকার ভ্যাকসিন পেতে বিদেশি একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইতোমধ্যে চুক্তি করেছে। চুক্তির শর্তানুযায়ী বাংলাদেশ পর্যায়ক্রমে তিন কোটি ভ্যাকসিন পাবে। এর জন্য সরকারের ব্যয় হবে এক হাজার পাঁচশ’ উননব্বই কোটি তেতাল্লিশ লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা। অর্থাৎ, ভ্যাকসিন কেনা থেকে শুরু করে মানুষের শরীরে দেয়া পর্যন্ত এই টাকা প্রয়োজন হবে। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় অর্ধেক পরিমাণ প্রায় ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছাড় করেছে।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে এক অবহিতকরণ সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এবং হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান ভ্যাকসিনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়েছেন। গত ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এক তথ্য জানানো হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এবং হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান ভ্যাকসিনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়েছেন। গত ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এক হাজার পাঁচশ’ উননব্বই কোটি তেতাল্লিশ লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকার আর্থিক মঞ্জুরির অনুরোধ জানান। পরিবহন খরচসহ কোল্ড চেইনে পৌঁছানো পর্যন্ত তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য ১৫ কোটি ইউএস ডলার ব্যয় হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৭৭ পয়সা হিসাবে এক হাজার দু’শ একাত্তর কোটি পঞ্চান্ন লাখ টাকা প্রয়োজন। সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া এর প্রস্তাব অনুযায়ী উল্লিখিত টাকার ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ছয়শ’ পঁয়ত্রিশ কোটি সাতাত্তর লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা শর্তহীন ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে অগ্রিম প্রদান করতে হবে। অবশিষ্ট পঞ্চাশ শতাংশ টাকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ভ্যাকসিন অনুমোদনের পর প্রদান করতে হবে।
এ ছাড়া কোল্ড চেইন ইকুইপমেন্ট, এডি সিরিঞ্জ, সেফটি বক্স কেনা, ভ্যাকসিন কেন্দ্র পর্যন্ত পরিবহন, জনবল, মাইক্রোপ্ল্যানিং ও তালিকা প্রণয়ন, সুপারভিশন ও মনিটরিং প্রশিক্ষণ, প্রচার-প্রচারণাসহ মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন দেয়া পর্যন্ত প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনে আরও সোয়া ডলার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে তিন কোটি ভ্যাকসিনের জন্য আরও তিন কোটি পঁচাত্তর ইউএস ডলার প্রয়োজন। প্রতি ডলার ৮৪ দশমিক ৭৭ টাকা হিসাবে তিনশ’ সতেরো কোটি আটাশি লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনা ও মানুষের শরীরে প্রয়োগ পর্যন্ত মোট দরকার এক হাজার পাঁচশ’ উননব্বই কোটি তেতাল্লিশ লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এক অনুষ্ঠানে জানান, চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইন্সটিটিউট যেদিন আন্তর্জাতিক বাজারজাতকরণ শুরু করবে সেদিন থেকেই বাংলাদেশ মাসে ৫০ লাখ করে ডোজ পাবে। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে কম দামেই এই ভ্যাকসিন পাবে। প্রতি ডোজের দাম পড়বে মাত্র ৫ ডলার। সেরামের কাছ থেকে বাংলাদেশ ৬ মাসে মোট ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাবে।
অবহিতকরণ সভায় অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শহানীলা ফেরদৌসী জানান, করোনামুক্ত সনদ ছাড়া বিদেশ থেকে যারা আসছেন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তাদের দিয়াবাড়িতে কোয়ারেন্টিন করা হয়। তবে আগত যাত্রীর সংখ্যা এতই বেশি যে, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা একটি চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে এসব যাত্রীর আন্তর্জাতিক প্রবশপথে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, কোভিডমুক্ত সনদ নেই এমন যাত্রীদের যেন কোনো বিমান কর্তৃপক্ষ পরিবহন না করে, সে বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা সত্ত্বেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, এন্টিজেনের কোন কিট-টি সবচেয়ে ভালো বা কার্যকর, সেটি নিশ্চিত না হওয়ায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু করতে দেরি হচ্ছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত দুটি কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী মাস থেকে দেশে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হবে। যেসব জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই-এমন ১০টি জেলায় এই কার্যক্রম শুরু করা হবে। তবে সন্দেহজনক রোগীর অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ না হলে তাকে অবশ্যই পিসিআর পরীক্ষা করতে হবে।
সিএমএসডির পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামান জানান, গত ৩ জুনে থেকে এ পর্যন্ত কোভিড নিয়ন্ত্রণে ৪৪৭ কোটি ২৫ লাখ ৬২ হাজার ৮৩৭ টাকার কেনাকাটা করা হয়েছে। যা পিপিআর অ্যাক্ট-২০০৬ এবং পিপিআর রুল-২০০৮ সেকশন ৬৮ ও সেকশন ৩২ অনুসারে কেনাকাটা করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছেন। ইতোমধ্যে ২১৭ কোটি ৪২ লাখ ৫৫ হাজার ৫৯৩ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তিনি জানান, কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে ২ কোটি টাকার নিচে হলে মহাপরিচালকের অনুমতি নিয়ে, ৫ কোটি টাকার নিচে হলে সচিবের অনুমতি নিয়ে এবং ৫০ কোটি টাকার নিচের কেনাকাটা হলে মন্ত্রীর অনুমতিতে করা সম্ভব। তবে ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। পিসিআর কিটের মজুদ সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমানে এক লাখ ৮২ হাজার ৫৯১টি কিট মজুদ আছে। দু-এক দিনে আরও ৫৫ হাজার কিট যুক্ত হবে এবং আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ কিট অধিদফতরের হাতে পৌঁছাবে।
পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া জানান, এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৬৮০টি বেসরকারি হাসপাতাল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ হাসপাতালে নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে হয়ে যাবে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান এখনও নিবন্ধনের আওতায় আসেনি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ সময় আর বক্তব্য দেন পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর এমআইএস ডা. মো. হাবিবুর রহমান, পরিচালক আইইডিসিআর ডা. তাহমিনা শিরিন, লাইন ডিরেক্টর এমএনসি অ্যান্ড এইচ ডা. মো. শামসুল হক। সভার শুরুতে কোভিড তথ্য ব্যবস্থাপনা ও ই-সেবার ওপর তথ্য উপস্থাপন করেন ডা. মো. মারুফুর রহমান অপু।