- করোনাকালের অর্থনীতি
নিজস্ব প্রতিবেদক: বহুমাত্রিক সঙ্কটের মধ্যেও এগিয়ে চলেছে দেশের শস্য উৎপাদন খাত। ইতোমধ্যে সাত কোটি টনের মাইলফলক অতিক্রম করেছে দেশের বার্ষিক শস্য উৎপাদনের পরিমাণ। ২০৩০ সালের মধ্যে খাতটির উৎপাদনশীলতাকে দ্বিগুণে উন্নীত করতে চাইছে কৃষি মন্ত্রণালয়। তারপরও করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি পড়ে না থাকে, সে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্দেশের আলোকে কৃষি মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বসতবাড়িতে সবজি আবাদে প্রণোদনা দেয়া শুরু হয়েছে। প্রতিটি গ্রামের কয়েকটি পরিবার বা খানাকে সবজি উৎপাদনের মডেল বসতি তৈরি করে দেয়া হবে। আগ্রহীদের বীজ সহায়তা থেকে শুরু করে সার এমনকি বেড়াও তৈরি করে দেয়া শুরু হয়েছে। পতিত জমি আবাদি জমিতে রূপান্তরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী নোভেল করোনাভাইরাস হানা দেয়ার পর বিভিন্ন দেশ খাদ্যশস্য রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে সামনের দিনে খাদ্যশস্য বিশেষ করে দানাদার খাদ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সীমিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি পড়ে না থাকে, সে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশের আলোকে কৃষি মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বসতবাড়িতে সবজি আবাদে প্রণোদনা দেয়া শুরু হয়েছে। ফসল উৎপাদনে কৃষককে উৎসাহ দিতে ও খাদ্য সঙ্কট যাতে না হয়, সে জন্য কৃষি খাতে স্বল্প সুদের তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধান, গম, আলু, ভুট্টাসহ সব ধরনের শস্য ও ফসল উৎপাদনে ঋণের সুদহারও ৪ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত কৃষক পর্যায়ে সব ধরনের ঋণের সুদহার হবে ৪ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুনর্অর্থায়ন তহবিল থেকে মোট ৭৮ হাজার ৫২৬ কৃষক ১ হাজার ৮৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার কৃষি ঋণ পেয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত বছর প্রকাশিত ‘রিপোর্ট অন এগ্রিকালচার এ্যান্ড রুরাল স্ট্যাটিসটিকস ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশে মোট ব্যবহৃত জমির পরিমাণ ২২৬ কোটি ৫১ লাখ ৭৪ হাজার শতক। পরিবারপ্রতি জমির পরিমাণ প্রায় ৮২ শতক। এসব জমির মধ্যে বসতবাড়ি, পুকুর, স্থায়ী ফসলি জমি, অস্থায়ী ফসলি জমির পাশাপাশি পতিত জমিও রয়েছে। এর মধ্যে পতিত জমি রয়েছে দুই ধরনের অস্থায়ী পতিত এবং স্থায়ী পতিত জমি, যার পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার শতক।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের কৃষিতে সম্ভাবনার সবটুকু রয়েছে। সামনের দিনগুলোয় অর্থনৈতিক কাঠামোর অন্যতম শক্তিশালী ভিত্তিই হবে কৃষি। যে শস্য কম লাভজনক, সেটি কৃষকের কাছে পৌঁছানো কষ্টকর হবে। এটির পাশাপাশি কৃষকের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে সব ধরনের প্রযুক্তি পৌঁছাতে হবে। প্রণোদনা ও অর্থায়ন কাঠামোয় পরিবর্তন এনেই সেটি করতে হবে। উৎপাদনের পাশাপাশি নজর দিতে হবে বিপণনেও। এখনই কৃষি পণ্যের বিপণনে ডিজিটাল মাধ্যমের প্রবর্তন করতে হবে। কৃষকের খরচ কমিয়ে এনে মুনাফা বৃদ্ধির দিকে নজর বাড়াতে হলে এ খাতে উন্নত বিশ্বের মতো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ছোঁয়া দ্রুত পৌঁছাতে হবে। তাহলে দেশের কৃষি খাত একটি টেকসই রূপান্তর পাবে।