নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকটসহ বিদ্যমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতিসংঘকে আরও সুনিশ্চিত ও জোরালো ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার এক বার্তায় তিনি বলেন, এখনও এমন কিছু ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে রোহিঙ্গা সংকটের মতো আজকের অনেক জটিল চ্যালেঞ্জ সমাধানে জাতিসংঘ আরও সুনির্দিষ্ট ও শক্তিশালী ভূমিকা নিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব এখনও দারিদ্র্য, ক্ষুধা, সশস্ত্র সংঘাত, সন্ত্রাসবাদ, নিরাপত্তাহীনতা, জলবায়ু পরিবর্তন- এসব সমস্যায় জর্জরিত। এসব সমস্যার প্রতিটির সমাধানে সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং বৃহত্তর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘের ৭৫তম বার্ষিকীর ঘোষণায় সম্মত হয়েছিলাম, আজ আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো পরস্পর সংযুক্ত। শুধু পুনরুজ্জীবিত বহুপক্ষীয়তার মাধ্যমেই এর সমাধান করা যেতে পারে। আমরা শুধু একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমেই ভবিষ্যতের মহামারি এবং অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা তৈরি করতে পারি।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে জাতিসংঘের সনদে অন্তর্ভুক্ত নীতি ও লক্ষ্যগুলোর প্রতি তার অটল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এ বছরটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তার প্রথম বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বিশ্ব শান্তির প্রতি তার দ্ব্যর্থহীন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন; বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংহতির ওপর জোর দেন; বহুপক্ষীয়তার পক্ষে কথা বলেন এবং জাতীয় ও বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন উন্নয়নের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা তার প্রাজ্ঞ দর্শন এবং দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা পরিচালিত হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২০ একটি চ্যালেঞ্জিং বছর এবং ২০২০ সালের প্রথম দিক থেকে এই মহামারি সারাবিশ্বকে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত করে চলেছে। এটি আমাদের সমাজ, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, জীবন ও জীবিকা, ব্যবসায় এবং রপ্তানি আয়ের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে। শুধু একসঙ্গে এবং সংহতি নিয়ে কাজ করার মাধ্যমেই আমরা এ মহামারির অবসান ঘটাতে পারি এবং এর পরবর্তী প্রভাব কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৭৫ বছরে জাতিসংঘের অনেক অর্জন রয়েছে এবং এটি স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছে, আন্তর্জাতিক উন্নয়নের রীতিনীতি রূপদান করেছে, সংঘাত নিরসনে সহায়তা করেছে এবং মানবিক পদক্ষেপের মাধ্যমে লাখো মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটি নারী-পুরুষের সমান অধিকারসহ সবার জন্য মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত ও সুরক্ষায় কাজ করেছে।
বাংলাদেশকে জাতিসংঘের একটি সক্রিয়, অবদানকারী ও দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী শান্তি ও সুরক্ষা বজায় রাখার প্রয়াসে বাংলাদেশ তার দীর্ঘদিনের শান্তির সংস্কৃতির প্রতি অনুগত থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার এসডিজি বাস্তবায়ন, নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারে অ্যাক্সেস বৃদ্ধি, খাদ্য সুরক্ষা অর্জন এবং বৈষম্য হ্রাস করার ক্ষেত্রে অনুকরণীয় সাফল্য অর্জন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ১১ বছর ধরে আমাদের অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স দুর্দান্ত। ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশে, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার অভিযাত্রায় আমরা সঠিক পথে রয়েছি।’
আজকের বিশ্ব ৭৫ বছর আগে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময়ের চেয়ে আলাদা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ ও সুযোগের এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে জাতিসংঘ সব দেশের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’
তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট ও অর্থবহ রোডম্যাপের সাহায্যে জাতিসংঘ আমাদের সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ গড়ার প্রয়াসে আমাদের পথনির্দেশক হতে পারে, যেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও উন্নয়ন নিশ্চিত হবে এবং মানবাধিকার সুরক্ষিত হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ, টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়বিচারের বিশ্ব গঠনের জন্য সব অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।