আসলাম লিটন:
অতি সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া চঞ্চল চৌধুরী ও মেহের আফরোজ শাওনের গাওয়া ‘যুবতি রাধে’ গানটি সরলপুর ব্যান্ডের গান হিসেবে দাবি করা হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে সরলপুর ব্যান্ডের তারিকুল ইসলাম তপন এবং আতিকুর রহমান যৌথভাবে গানটি রচনা করেন এবং গানটি কম্পোজিশন করা হয় লীলা কীর্তন অনুসারে। গানটি তারা নাকি ২০১৮ সালে কপি রাইটও করিয়েছে। নিষ্চয়ই নির্মাতারা এর যথাযথ উত্তর দেবেন। গানটি আমি শুনেছি। ভিডিও দেখেছি। বেশ উপভোগ্য। শ্রুতিমধুর। সরলপুর ব্যান্ডের অভিযোগ যদি সত্যও হয় তবু আমি বলব গানটি কিছুতেই সরলপুর ব্যান্ডের নিজস্ব হতে পারে না। কেননা তারা নিজেরাই স্বীকার করেছেন গানটির কম্পোজিশন রাথা-কৃষ্নের লীলা কীর্তন অনুসারে করেছেন। গানের বাণীর প্রথম দিকটিও রাধাকৃষ্ণ কাহিনী থেকেই নেয়া। গানের পরের অংশ যেখানে বিয়ে সংক্রান্ত সাওয়াল-জবাব পর্ব সেটা ময়মনসিংহ গীতিকার মহুয়া পালা থেকে নেয়া। এছাড়াও কালো রং সম্পর্কিত বাহাসটুকু আমাদের প্রচলিত লোকগাথায় ব্যবপকভাবে ব্যবহৃত। যোগির গানে এরকম বাহাজ আছে।
পরবর্তিতে বেশ কিছু আধুনিক বাংলা গানেও এরকম বাহাজ ব্যবহৃত হয়েছে। মোদ্দাকথা ‘যুবতি রাধে’ গানটার বাণী, সুর, আদল, এবং কম্পোজিশন পুরোটাই আমাদের বিভিন্ন লোকজ শিল্প থেকে একটু একটু করে উপাদান চুরি করে কম্পোজ করা। কোন অংশই তাদের মৌলিক সৃস্টি নয়। আমাদের লোকজ ভাণ্ডার অনেক সমৃদ্ধ। ভরপুর। এবং যথেষ্ট শক্তিশালিও বটে্। ‘কম্পোজ’ শব্দটির মাইরপ্যাচে লোকজ ভাণ্ডার থেকে সম্পদ চুরি করে ঝেড়ে মুছে, রং-চং করে চকমকে লেবেলে পুরে বাজারে নিজ নামে চালিয়ে দেয়া শিল্পকর্মের সংখ্যা কম নয়। যুগে যুগে এরকম চুরি হয়েছে। অনেকে নাম-ধামও কামিয়েছেন। বিখ্যাতও হয়ে গেছেন। শুধ তাইই নয়, এসব গানের গায়কিও তারা পরিবর্তন করে মর্ডান লুক দিচ্ছেন। হৃদম পরিবর্তন করে মর্ডান বাণিয়ে বাণিজ্যিকিকরণ করছেন। যাতে বাজারমূল্য বেড়ে যায়। বিক্রি বাড়ে। বস্তুত এগুলো ফাপা মানুষের কাজ। ধান্দাবাজ মানুষের কাজ। আলু-পেয়াজ-সবজিবাজারের সিন্ডিগেট কারবারিদের সাথে এদের কোন তফাত নাই।
কিছুদিন আগে ফজলুর রহমান বাবু এরকম আরেকটি লোকসংগীত গেয়েছেন বিকৃত বাণীতে। যেখানে তিনি গেয়েছেন ‘ আখ ক্ষেতে ছাগল বন্দি, জলে বন্দি মাছ…” । বস্তুত গানটির প্রকৃত বাণী ”আক্কেলে ছাগল বন্দি..”। পরবর্তীতে এই ভুল বাণীতে গানটি অনেকেই গাইতে শুরু করেছেন। সম্প্রতি ভারতীয় চ্যানেল জি-বাংলায় প্রচারিত সারেগামাপা অনুষ্ঠানে গানটি ভুল বাণীতেই গাইল একজন প্রতিযোগি। মূলত এই গানটিও ময়মনসিংহ গীতিকা থেকে নেয়া। তবে যাই বলি, চুরি চুরিই- চোর চোরই। এগুলো বন্ধ হওয়া জরুরি। যদি লোকজ ভাণ্ডার থেকে নিতেই হয়, তাহলে তার দায় স্বীকার করতে হবে। স্বকীয়তা অক্ষুণ্ন রেখেই নিতে হবে। রি-মেইক, রিমিক্স এসব বাণিজ্যিক ছলচাতুরিপণা মার্কা বস্তাপচা ফাপা অজুহাতের নামে লোকশিল্প বাণিজ্যিকিকরণ বন্ধ করা দরকার। পারলে নতুন কিছু সৃষ্টি করুন। নতুন কিছু। অন্যের সম্পদ চুরি করে কেন?
আরও দেখুন
কবি নাজনীন নাহার এর কবিতা “আমি মানুষ’’
আমি মানুষ! নাজনীন নাহারআমি মানুষ!হ্যাঁ আমি মানুষ।আমি অমানুষের করি নাশ,মানচিত্র থেকে মুছে দেবো আমি অমানুষদের …