নিজস্ব প্রতিবেদক:
এ এক অনন্য মূল্যায়ন। এ এক অসাধারণ মর্যাদায় অভিষিক্ত করা। সাত বছর ধরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে কোমায় থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গত ১২ অক্টোবর তাকে কর্নেলর্ যাংকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাত বছর ধরে কোমায় থাকা কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজার চাকরির মেয়াদের শেষ দিনে তাকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কর্নেলর্ যাংকে উন্নীত করা হয়। পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে হাসপাতালের কক্ষেই সম্পন্ন হয় পদোন্নতির আনুষ্ঠানিকতা। বিধাতার ইচ্ছায় এই কর্মদক্ষ অফিসার কোমায় থাকলেও তার অবদানকে মূল্যায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই কর্মকর্তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশেও পাঠিয়েছে। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকষ কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা প্রায় ৩২ বছরের চাকরি জীবনে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে থাকা অবস্থায় বিশেষ অবদানের জন্য ‘পিস মেডেল’ অর্জন করেছেন। ছিলেন সেনাবাহিনীর একাধিক প্রশিক্ষণ স্কুলের রণকৌশল প্রশিক্ষক। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে বইও লিখেছেন তিনি। সেনাবাহিনীর ইতিহাস এবং প্রখ্যাত কর্মকর্তাদের জীবনী ছাড়া নিজের পূর্বসূরি হাছন রাজাকে নিয়ে লিখেছেন তিনি।
অবসরের দিন স্বামীকে সম্মানিত করায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ারের স্ত্রী মোসলেহা মুনিরা রাজা বলেন, প্রমোশনের ঠিক একমাস আগে আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে যান। আমাদের সবার মনে এক রকম আশা ছিল যে তার পদোন্নতি হওয়ার পরেই যেন তিনি অবসরে যান। আজ আমাদের সে আশা পূর্ণ হলো।
২০১৩ সালের মার্চ মাসে হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন সেনাবাহিনীর এই তুখোড় অফিসার। তারপর থেকেই কোমায় চলে যান তিনি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তার অসুস্থতাকে বলা হয় ‘হাইপোস্কিক স্কিমিক ইনজুরি টু ব্রেইন ইফেক্টস।’ চিকিৎসকরা বলছেন, তার মস্তিষ্কের নিচের অংশ ভালো আছে, কিন্তু মস্তিষ্কের যে অংশ মানুষের চিন্তা-চেতনার সাথে জড়িত, ওই অংশের কোষগুলো সুস্থ হয়নি।
দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা ২৩ জুন ১৯৮৯ সালে সাঁজোয়া বাহিনীতে কমিশন পাওয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ২০১৩ সালে হার্ট অ্যাটাক করার আগে ছিলেন শিক্ষা পরিচালকের পদে।