নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের বর্তমানে উৎপাদিত সব ক্যাটাগরির পণ্য চীনের বাজারে শুল্ক্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাবে। এ ছাড়া শতভাগ পাট ও পাটজাত পণ্য, মাছ, চামড়াজাত পণ্য, অপটিক্যাল ও সার্জিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট, হোম টেক্সটাইল পণ্যও চীনের বাজারে শুল্ক্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। চামড়া, পাদুকা, তুলা ও তুলার তৈরি সুতার সিংহভাগ পণ্যও শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পাবে।
স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে চীন তাদের আমদানি তালিকায় থাকা পণ্যের ৯৭ শতাংশে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। ১ জুলাই থেকে নতুন এই সুবিধা কার্যকর হয়েছে। গত ১৬ জুন চীনের স্টেট কাউন্সিলের ট্যারিফ কমিশন পণ্যগুলোর তালিকা চীনা ভাষায় প্রকাশ করে। গতকাল বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইংরেজি ভাষায় এ তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, চীন আট হাজার ৫৪৯টি এইচএস কোডে বিভিন্ন পণ্য বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করে থাকে। এর ৯৭ শতাংশ বা আট হাজার ২৫২ এইচএস কোডের বিপরীতে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পাবে।
এর আগে বাংলাদেশ চীনের আমদানি পণ্যের ৬১ শতাংশে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পেত। এতে তৈরি পোশাকের (ওভেন ও নিট) সব পণ্য শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পেত না। ওভেন গার্মেন্টে মোট ১৬৭টি ও নিট গার্মেন্টে ১৩২টি এইচএস কোড রয়েছে। আগের ৬১ শতাংশ সুবিধায় ওভেনের ১১৭টি এবং নিটের ৮৮টি এইচএস কোড শুল্ক্কমুক্ত সুবিধার আওতাভুক্ত ছিল। কিন্তু শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা বাড়িয়ে ৯৭ শতাংশ করায় এখন সব পণ্যই এ সুবিধা পাবে। এ ছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্যে একটি, মাছে ১০টি, চামড়ায় ১০টি, চামড়াজাত পণ্যে ১০টি, পাদুকায় ১৯টি, তুলা ও তুলা থেকে তৈরি সুতায় ৫২টি, অপটিক্যাল ও সার্জিক্যাল পণ্যে ৮৪টি, হোম টেক্সটাইলে ৫৫টি নতুন এইচএস কোড শুল্ক্কমুক্ত সুবিধায় যুক্ত হয়েছে।
চীন যত এইচএস কোডে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা বাংলাদেশকে দিয়েছে তার সব পণ্য বাংলাদেশ রপ্তানি করে না। যেমন- ওভেন গার্মেন্টে বাংলাদেশ থেকে চীনে ১০৩টি এইচএস কোডের বিপরীতে পণ্য রপ্তানি হয়। নিট গার্মেন্টে হয় ৭৯টি এইচএস কোডে। পাট ও পাটজাত পণ্যে মাত্র পাঁচটি, মাছে ১৯টি, চামড়ায় ১৫টি, চামড়াজাত পণ্যে ১৪টি, পাদুকায় ২৫টি এবং হোম টেক্সটাইলে ২৫টি এইচএস কোডের বিপরীতে পণ্য রপ্তানি হয়।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে চীনে মোট ৫৪৭টি এইচএস কোডে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এতে রপ্তানি আয় হয়েছে ১০৩ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে আগের ৬১ শতাংশের আওতায় শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে ৪২৫টি এইচএস কোডের পণ্য, যার রপ্তানি মূল্য ১০১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। মূল্যের বিচারে বাংলাদেশি পণ্যের ৯৮ দশমিক ১ শতাংশ শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু এই ৫৪৭ এইচএস কোডের পণ্য ৯৭ শতাংশ শুল্ক্ক ও কোটামুক্ত কর্মসূচির আওতায় রপ্তানি হলে বাংলাদেশের রপ্তানির ৯৯ দশমিক ১ শতাংশ এ সুবিধা পাবে।এ বিষয়ে ট্যারিফ কমিশনের সদস্য মোস্তফা আবিদ খান সমকালকে বলেন, আগে থেকেই বাংলাদেশ বেশ কিছু পণ্যে চীনের বাজারে শুল্ক্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। এখন সেই সুবিধা আরও প্রসারিত হয়েছে। এতে অবশ্যই বাংলাদেশের সম্ভাবনা বেড়েছে। কিন্তু এই সুবিধা নিতে দেশের উদ্যোক্তাদের চীনের বাজার ও বাজারের চাহিদা সম্পর্কে জানতে হবে। সে অনুযায়ী পণ্য তৈরি করতে হবে।
এ ছাড়া আরও যেসব বাংলাদেশি পণ্য চীনের বাজারে শুল্ক্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাবে তার মধ্যে রয়েছে- ওষুধ, প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক পণ্য, রাবার ও তা থেকে উৎপাদিত পণ্য, সার, ছাপানোর রং, পশম, কৃত্রিম পশম ও পশমের তৈরি পণ্য, সুগন্ধি, প্রসাধনী ও অন্যান্য টয়লেট্রিজ, সাবান, অন্যান্য ধোয়ার উপকরণ, বিস্ম্ফোরক, ফটোগ্রাফিক ও সিনেমাটোগ্রাফিক পণ্য, খনিজ জ্বালানি ও তেল, বিটুমিন, বিভিন্ন রাসায়নিক পণ্য, জৈব রাসায়নিক। আরও রয়েছে জীবন্ত গরু, ছাগল, মহিষ, ঘোড়া, হাঁস, মুরগি, মাছ, সাপ, কুঁচে, দুগ্ধজাত পণ্য, বিভিন্ন ধরনের সবজি, কফি, চা, মসলা, দানা জাতীয় শস্য, বিভিন্ন মিলের বর্জ্য, বেভারেজ, স্পিরিট, ভিনেগার, তামাক, তামাক পণ্য, চিনি ও চিনিজাত পণ্য (সুগার কনফেকশনারি), লবণ, সালফার, পাথর, সিমেন্ট ইত্যাদি।