রবিবার , অক্টোবর ৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / রাজনীতি থেকে দূরে খালেদা জিয়া

রাজনীতি থেকে দূরে খালেদা জিয়া

নিউজ ডেস্ক:
বিএনপির কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না খালেদা জিয়া। দলের নেতাদের সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে বৈঠক করেননি; তার কোনো বক্তব্য, বিবৃতি কিছুই নেই গত ছয় মাস ধরে।

খালেদা জিয়া মুক্ত হওয়ার পরও তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। করোনাকালে দলের বৈঠকগুলো হচ্ছে ভার্চুয়াল। সেখানে নেতৃত্বে থাকছেন তারেকই।

বিএনপির কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না খালেদা জিয়া। দলের নেতাদের সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে বৈঠক করেননি; তার কোনো বক্তব্য, বিবৃতি কিছুই নেই গত ছয় মাস ধরে। 

খালেদা জিয়া থাকছেন গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের বাসভবন ফিরোজায়। পাশেই ৮৩ নম্বর সড়কে তার রাজনৈতিক কার্যালয়। সেখানে একটিবারের জন্যও পা পড়েনি প্রায় চার দশক ধরে প্রতাপের সঙ্গে রাজনীতি করে আসা বিএনপি নেত্রীর।  

দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা পাওয়া খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে প্রথমে ছয় মাস এবং পরে আরও ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছে সরকার।

শর্ত হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি নেত্রী দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। চিকিৎসা নেবেন ঘরে বসে। তবে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিধি-নিষেধের কোনো কিছুই দল বা বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়নি।

তাহলে বিএনপি নেত্রী কেন রাজনীতি থেকে দূরে? 

দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের কাছে প্রশ্ন রাখলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটা বলার জন্য দুইজন আছেন; রিজভী আহমেদ এবং মহাসচিব সাহেব। এটা বলার জন্য আমি অপারগ।’

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্য নিউজবাংলা জানতে পারেনি। 

ফখরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ইউনুস আলী বলেন, ‘স্যার এগ্রি করছেন না। জানিয়েছেন কোনো কমেন্ট দেবেন না।’

আর একাধিকবার কল করা হলেও রিজভীকে পাওয়া যায়নি। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) তো অসুস্থ। উনার তো মুক্তিই হয়নি। উনি কীভাবে রাজনীতি করবেন?’

‘কিন্তু আপনাদের চেয়ারপারসন তো কারাগারে না।’ 

‘কিন্তু উনি তো বেইলে (জামিন) নাই। ট্রিটমেন্টের (চিকিৎসা) জন্য সাজা সাময়িক স্থগিত করেছে। উনি কীভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দেবেন?’

‘তাহলে চেয়ারপারসনকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা কি আপনাদের সিদ্ধান্ত?’ 

‘এটা আমাদের সিদ্ধান্ত বা কৌশল না। এটা তো সরকারের কৌশল। উনি তো মুক্ত হতে পারছেন না। সরকারের স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) হচ্ছে উনাকে জেলে রেখে দেশ চালাবে। আমরা তো উনার মুক্তি চাই, আমরা চাই উনি দল চালাবেন।’

‘উনি রাজনীতি করতে পারবেন না, এমন কোনো শর্ত আছে?’

‘শর্ত না, উনি তো বেইলে নন, তাহলে কীভাবে রাজনীতি করবেন?’

যদিও খালেদা জিয়া ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। নানা সময় তার সঙ্গে দেখা করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা; বের হয়ে জানিয়েছেন তাদের নেত্রীর বক্তব্য। 

দলের বৈঠক তারেক রহমানের নেতৃত্বে

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা হয় লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানকে। গত মার্চে বিএনপির নেত্রী কারামুক্ত হওয়ার পরও তারেকের এই পদ পাল্টায়নি।

গত মাসেই বিএনপির দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে। সেখানে নেতৃত্বে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনই।

পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সভা বসে। 

সভা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ড তথা স্থায়ী কমিটি পাবনা-৪ আসনে হাবিবুর রহমান হাবিবকে মনোনয়ন দিয়েছে।’

ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনে ১২ সেপ্টেম্বর দলের ভার্চুয়াল মনোনয়ন বোর্ডের সভায়ও সভাপতিত্ব করেন তারেক রহমান। এতেও অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। 

দলের নেতাদের সঙ্গে একবারই ‘সুখ দুঃখের আলাপ’

সাময়িক মুক্তির পর খালেদা জিয়া একবারই দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গত ১ আগস্ট ঈদুল আজহার রাতে গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের বাসা ফিরোজায় যান বিএনপির শীর্ষ নেতারা। 

মির্জা ফখরুল ছাড়াও ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থানের পর বের হয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা কথা বলেছি ঈদের দিনে যেসব কথা বলা হয়। এতদিন ধরে আমরা একসাথে কাজ করেছি, সকলের সুখ-দুঃখের কথাবার্তা আছে।’

বিএনপির নজিরবিহীন বিবৃতি

ওই বৈঠকে রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে দুটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে। সংবাদে যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, তা নিয়ে বিএনপি যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, তা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। 

দৈনিক যুগান্তরের ৫ আগস্ট করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আলোচনার এক পর্যায়ে নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা কেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট করতে গেলেন? কেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে গেলেন? আবার গেছেন, আগে কেন এজেন্ডা ঠিক করলেন না?’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি জানিয়ে আসছিল। এই দাবিতে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে তারা। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বানও উপেক্ষা করেন বিএনপি নেত্রী।

তবে গত নির্বাচনের আগে বিএনপির গঠন করা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে যায়। তবে কোনো দাবি আদায় করতে পারেনি। 

বিএনপি জোটের প্রধান দল হলেও সে সময় নেতৃত্বে চলে আসেন গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন। ১৯৯২ সালে গঠনের পর থেকে এই দলটি রাজনীতিতে কখনো এতটা গুরুত্ব পায়নি।

যুগান্তরের প্রতিবেদনে খালেদা জিয়াকে উদ্ধৃত করে আরও বলা হয়, ‘আপনারা ড. কামাল হোসেনকে জাতীয় নেতা বানালেন। কিন্তু তিনি (ড. কামাল) কবে জাতীয় নেতা ছিলেন? তিনি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কী করেছেন? তিনি তো জাতীয়তাবাদী শক্তির কেউ নন। তার সঙ্গে তো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, আদর্শিক নয়।’

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর সেদিনই বিএনপির পক্ষ থেকে বিবৃতি দেন রুহুল কবির রিজভী। এতে বলা হয়, ‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের শুধু ঈদ শুভেচ্ছা ও পারস্পরিক কুশলাদি বিনিময় হয়েছে। খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছেন নেতারা। খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেতাদের কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি বা তিনিও কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রদান করেননি।’

‘কোনো প্রকার তথ্য যাচাই ছাড়া এ ধরনের দায়িত্বহীন সংবাদ পরিবেশন করলে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।’

ওই দিন মির্জা ফখরুল দৈনিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি সঠিক নয়; বানোয়াট সংবাদ। জাতীয় ঐক্যের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা এবং ম্যাডাম সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা। যে আলোচনা হয়েছে, তা সেদিনই আমি ব্রিফিং করে বলেছি। উনি অসুস্থ, রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি।’

সাজা ও নির্বাহী আদেশে মুক্তি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার। সেদিনই কারাবন্দি হন তিনি। বিএনপি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে।

তারও আগের দিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি নেত্রীর সাত বছরের সাজা হয়। এই দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল এখনও নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

বিএনপি তার নেত্রীকে মুক্ত করতে উচ্চ আদালতে যত চেষ্টা করেছে তার সবই বিফলে গেছে। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে ‘মানবিক আবেদন নিয়ে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যান খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। বিএনপি এই উদ্যোগে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে।

খালেদার স্বজনদের আবেদনে প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দেন। গত ২৪ শে মার্চ শর্ত সাপেক্ষে সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য।

পরের দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবনে ফেরেন বিএনপি নেত্রী।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর সাময়িক মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ১৫ অগাস্ট শামীম ইস্কান্দার আবার আবেদন করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি আবার ইতিবাচক সাড়া দিলে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

আরও দেখুন

লালপুরে  শিক্ষা বিষয়ক সেমিনার ও মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত 

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ শনিবার  (৫ অক্টোবর ) নাটোরের লালপুর উপজেলার কলস নগর উচ্চ বিদ্যালয়ে  সকাল …