শনিবার , সেপ্টেম্বর ২৮ ২০২৪
নীড় পাতা / আইন-আদালত / কালিগঞ্জ মুচিপাড়া খাল কার?

কালিগঞ্জ মুচিপাড়া খাল কার?

বিশেষ প্রতিবেদক:
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়নের কালিগঞ্জ মৌজায় বিলের পানি বারনই নদীতে নিষ্কাষণের মুচিপাড়া সংলগ্ন খালটি কার? এমন প্রশ্ন এলাকার জনগণের। প্রতিবছরই বর্ষা শুরু হলেই সরকারি দলের স্থানীয় নেতা-পাতি নেতার তোর জোর দৌড় ঝাঁফ শুরু হয় খালটি তাদের দখলে নেয়ার। কখনো এটি লিজ দেয়া হয় স্থানীয় মসজিদের নামে, কখনো এটি নেতা পাতি নেতা এবং তাদের হাতাদের পকেট মানির উৎস হিসেবে। এ নিয়ে চলে নিজ দলের মধ্যে ক্ষমতা প্রদর্শনের মহড়া। এমনও হয় ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পেরে না ওঠা একটি অংশ এলাকার বাইরে থেকে ক্যাডার ভাড়া করে নিয়ে এসে তাদের হাতে তুলে দেয় খালটি। এতে করে খাল পাড় তথা এলাকার মানুষ বঞ্চিত হয় খালের মাছ শিকার থেকে।

স্থানীয় বাসিন্দা রহমান জানান, আগে এই খালের মাছ ধরে খেতো আসেপাশের সব গ্রামের মানুষ। মাছ মারা যেন একটি উৎসবে পরিণত হতো এলাকায়। এখন তা টাউট বাটপারদের দখলে চলে গেছে।

স্থানীয় এক কৃষক জানান, মাছ মারার খালের মুখে পানি নিষ্কাষণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় চাষ-বাসে বিলম্ব হয়। এতে করে ফসলের ফলন কমে যায়। এভাবে প্রতিবছরই কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দেখার কেউ নাই।

অখিল নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, প্রথমেই যখন এটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে লিজ দেয়া শুরু হয়, তখন থেকেই এটি অবৈধ দখলকারীদের হাতে চলে যায়। আর এর নামে কে কত অবৈধ টাকা রোজগার করতে পারবে তার একটা প্রতিযোগিতা চলে আসছে। এখন পর্যন্ত এটি অব্যাহত আছে।

এটি কি সরকারি কোন দপ্তর থেকে লিজ দেয়া হয়-এমন প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ কর্মী জানান, সরকারি কোন অফিস বিষয়টি জানেইনা। এনিয়ে দ্বন্দ্ব সংঘাত লেগেই থাকে।

এরই এক পর্যায়ে ২০১৩ সালের নভেম্বরের ১৫ তারিখে এই খালের দখল নিতে সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের অস্ত্রের আঘাতে খুন হন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা পিপরুল গ্রামের আলাউদ্দিন সরদার। সেই মামলা এখনো আদালতে চলমান রয়েছে। অনেকেই আহত হন সংঘর্ষে। পুলিশি হয়রানির ভয়ে এলাকা পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়ে। হয়রানি করার উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয় স্কুল শিক্ষক থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণকে। এর সমস্ত কোপ গিয়ে পড়ে খাল পাড়ের নিরীহ মুচি সম্প্রদায়ের লোকজনের উপর। তাদের বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাটও করা হয়। তারা এই দখল দারিত্ব বা এর সাথে কোনভাবেই জড়িত ছিল না। তারপরেও তাদের খেসারত দিতে হয়েছে।

পরের বছর থেকে এ পর্যন্ত চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিন বাইরের লোক এনে তাদের কাছে খালটি লিজ দিয়ে পুরো টাকা নিজের পকেটে পুরেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কর্মীরা। এবছর আবারো এই খাল লিজ দিয়েছেন স্খানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিন। দুই লক্ষ টাকার অধিক লেনদেন হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন এটার পরিমাণ আরো বেশি।

বিষয়টি স্বীকার করে চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিন জানান, দুই লক্ষ টাকার কথা সঠিক নয়। স্থানীয় লিজ গ্রহীতা আফজাল মন্ডলকে দুই লক্ষ পঁচাত্তর হাজার টাকায় লিজ দেওয়া হয়েছে। এই লিজ আপনি দিতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি নারদ বার্তাকে জানান, এটা স্থানীয়ভাবে করা হয়েছে।
এই টাকা কীভাবে ব্যয় করা হবে-এমন প্রশ্নে তিনি হেসে জানান, এর কিছু টাকা স্থানীয় মসজিদে দান করা হবে। আর বাদ বাঁকি টাকা আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের মাঝে ভাগ করে দেয়া হবে।

ওই এলাকার আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তারা লিজের বিষয়টি জানেন না। চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে কোন আলোচনাই করেননি।

পিপরুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জানান, শুধু কালিগঞ্জের খাল নয় আরো কিছু লিজ দিলেও আমি কিছুই জানিনা। গত বছরে ৮০ হাজার টাকা পেলেও কাউকে কোন টাকা দেন চেয়ারম্যান সাহেব। ওই টাকা চেয়াম্যান সাহেব এবং যুবলীগ নেতা দেওয়ান শাহজালাল ভাগাভাগি করে নিয়েছে।

এব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাছমিনা খাতুন নারদ বার্তাকে জানান, এধরণের লিজ দেয়ার এখতিয়ার চেয়ারম্যানের নাই। আমি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আরও দেখুন

নাটোরে সিংড়ায় সংখ্যালঘুদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোরে সিংড়ায় সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণ, নির্যাতন চাঁদাবাজি বন্ধের প্রতিবাদে ও ধর্ষককে গ্রেফতারের দাবিতে …