১০ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস সিংড়া সার্কেলের এএসপি জামিল আক্তার এর লেখা
জামিল আক্তার,সার্কেলের এএসপি সিংড়া:
সারা দেশে আত্মহত্যার প্রবণতা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার সার্কেল এএসপি হিসেবে কর্মকালিন এই সময়ে অনেক লাশ দেখতে হয়েছে। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু এবং হত্যাকাণ্ড ছাড়া সব লাশগুলোর কেস হিস্ট্রি আত্মহত্যা। আমি মেডিকেল সাইন্সের ছাত্র নয়। তবে পেশাগত প্রয়োজনের তাগিদে এবং তদন্তের স্বার্থে আমাদেরকে সকল লাশকে ফিজিক্যাল এভিডেন্স হিসেবে গণ্য করতে হয়। লাশকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হয় এবং লাশের গায়ে উপস্থিত Torture marks, Injury marks, ligature marks, presence of toxins ইত্যাদি আলামত এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় এটি হত্যা না আত্মহত্যা।
আমাদের এই সময়ে যেসব আত্মহত্যার ঘটনা হচ্ছে তার বেশিরভাগই প্রেমঘটিত বা দাম্পত্য কলহজনিত কারণে। Terminal Illness এ আক্রান্ত ব্যক্তিরা অসহনীয় শারীরিক যন্ত্রণা কারণে আত্মহত্যা করেন। তবে এদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। আত্মহত্যা করার আগে একজন ব্যক্তি যে মানসিক বিষণ্নতায় ভোগেন তা সম্পর্কে বাবা-মা, ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব কেউই খোঁজ রাখেন না। এমনকি এমন পরিবারও দেখেছি যারা পরিবারের সদস্যের আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে কিছুই জানে না। এমন বিচ্ছিন্নতাবোধ নিয়ে বেড়ে ওঠা ছেলে মেয়েদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।সেক্ষেত্রে ইনভেস্টিগেশন করে আমরা আত্মহত্যার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়। ত্রিভুজ প্রেম, প্রেমের সম্পর্কের টানাপোড়েন, বিবাহ বিচ্ছেদ, রিলেশনশিপ ব্রেকআপ, শারীরিক দুর্বলতা, অতি অভিমানী মানসিকতা, অতিমাত্রায় ঋণগ্রস্থ ও সামাজিক চাপ ইত্যাদি অনেক গল্প বের হয়ে আসে আত্মহত্যা মামলা তদন্তে। অকালে ঝরে পড়া এই জীবনের গল্পগুলো আরো পরিপূর্ণ হতে পারত। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করা ও ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায় পজেটিভ মোটিভেশন প্রদান করা সম্ভব হলে আত্মহত্যা প্রবণতা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা সম্ভব।
আসুন আমরা সবাই আমাদের আশেপাশে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেই। কিছু করা সম্ভব না হলেও আপনার কিছু পজিটিভ মোটিভেশন অনেক জীবন অকালে ঝরে পড়া থেকে রক্ষা করতে পারে।