মুসলমানরাই বাংলাদেশের আদিবাসী

মাহমুদ ইউসুফ:

শিরােনাম দেখে যে কেউ অবাক হতে পারেন। আর অবাক হবারই কথা। পার্বত্য এলাকার উপজাতিদের যখন সাংবিধানিকভাবে আদিবাসী প্রতিষ্ঠা করার তােড়জোর চলছে তখন এই নিবন্ধ সম্পর্কে অনেকের মনেই খটকা লাগতে পারে। আর কৌতূহল জাগাই স্বাভাবিক। পশ্চিমারা অনেক আগ থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন জনগােষ্ঠীকে আদিবাসী মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের সাথে যুক্তয়েছে দেশের সেকুলার বাম রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের একাংশ। বিশেষ করে প্রতিবছর ৯ আগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবসকে সামনে রেখে এদের মাতামাতি যেন অনেকটাই বেড়ে যায়। এই প্রবন্ধ তাদের বক্তব্যের অসারতা প্রমাণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।দক্ষিণ বাংলার ইতিহাস গবেষক অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব সিরাজ উদ্দীন আহমেদ লিখেছেন, বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ বাঙালি জাতির প্রধান আদি বাসস্থান। প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে বাঙ জাতি এ অঞ্চলে বাস করত। তিনি আরও বলেছেন, “প্রাচীন জনপদগুলাে জনগােষ্ঠীর নামানুসারে নামকরণ হয়েছে। বাঙ্গাল জনগােষ্ঠীর নামকরণও বাঙ, কৌম বা গােত্র থেকে হয়েছে। ভাগিরথীর পূর্ব দিকে গাঙ্গেয় বদ্বীপ এলাকায় সুপ্রাচীনকাল থেকে বাঙ জনগােষ্ঠী বাস করত। তাদের নামানুসারে বঙ্গ জনপদের নাম। আদিমযুগ থেকেই স্থান বা জাতির নামকরণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষ প্রাধান্য পায়। আধুনিক যুগেও এ প্রথা বিদ্যমান। যেমন বুদ্ধের অনুসারীরা বৌদ্ধ, যীশুখ্রিস্টের অনুসারীরা ক্রিশ্চিয়ান বা খ্রিস্টান, কার্ল মার্কসের অনুসারীরা মার্কসবাদী প্রভৃতি। আবারশ্রীলংকার আদম চূড়া কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি, ভারতের মম তাজমহল ইত্যাদি।

উল্লেখ্য পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ.) জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়ে প্রথম পদার্পণ করেছিলেন হলে। এটি তখন ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে স্থানটি শ্রীলঙ্কায়। শ্রীলঙ্কার আদম চূড়া বা অ্যাডাম পিক এখনও হযরত আদম (আ.) এর স্মৃতি, ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিকতা বহন করে চলেছে। পাহাড়টি শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের শ্রিপাড়া নামক প্রদেশে অবস্থিত। এটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিকট একটি আকর্ষণীয় স্থান। মুসলিম, বৌদ্ধ, হিন্দু ও খ্রিস্টান-এই চার ধর্মের অনুসারীদের কাছে পাহাড়টি অতি পবিত্র স্থান। চূড়াটির উচ্চতা ৭৩৬২ ফুট। চূড়ায় হযরত আদম (আ.) এর পায়ের যে চিহ্ন রয়েছে তার দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি এবং চওড়া হচ্ছে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। তাছাড়া আদি মানব আদম (আ.) এর পুত্র হযরত শিষ (আ.) এর কর্মক্ষেত্রও ছিল ভারতে। ভারতের অযােধ্যায় এক মন্দিরের পাশে সুদীর্ঘ কবর আছে। ওই সমাধি হযরত শিষ (আ.) এর বলে কেউ কেউ মনে করেন। তাই বলা যায়, মুসলমানরা শুধু আরব দুনিয়া কিংবা বাংলাদেশের আদিম নিবাসী নয়; গােটা ভারতীয় উপমহাদেশেরই ভূমিপুত্র।

ইসলাম, ইহুদি ও খ্রিস্টধর্মের মত অনুযায়ী পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ.)। তিনি মানবজাতির আদি পিতা এবং ইসলামের প্রথম নবী। বিষয়টি এখন আর শুধু ধর্মীয় উপকথা নয়। ঐতিহাসিকভাবে সত্য। পরবর্তীতে হযরত নূহ (আ.) এর সময় সংঘটিত প্লাবনে তার অনুসারী ৮০-৮৫ জন নাগরিক ব্যতিত সবাই ধ্বংস হয়ে যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় প্লাবনের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশও এ বন্যা হতে বাদ যায়নি। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম, আক্রা এবং বদ্বীপ অঞ্চলের অন্যত্র মাটির নিচে বড় বড় প্রস্তর ও উপলখ-র এক বিরাট স্তর আবিষ্কৃত হয়েছে। এ প্লাবনের সঙ্গে তার যােগ আসছে। ঘূর্ণিঝড় হতে রক্ষাপ্রাপ্ত নৌকারােহীদের সবাই ছিলেন আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত মুসলমান। ইসলামের অনুসারী এই কয়েকজন ব্যক্তিই বর্তমান বিশ্ব মানবগােষ্ঠির পূর্ব পুরুষ। তাদের থেকেই সৃষ্ট বর্তমান পৃথিবীর সাতশ কোটি নর-নারী। আল কোরআন ও বাইবেলের বক্তব্যও একই সূত্রে গ্রন্থিত। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ও গবেষক ড. মােহাম্মদ হান্নান লিখেছেন, “হযরত আদম (আ.) থেকে আমাদের এই মানব জাতির শুরু। কিন্তু হযরত নুহ (আ.)-এর সময়ে সমগ্র পৃথিবীতে এক মহাপ্লাবন ঘটেছিল। এই মহাপ্লাবনে দুনিয়ার সকল কিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কেউ জীবিত ছিল না, শুধু নূহ (আ.)-এর নৌকায় আরােহণ করেছিলেন ৮০ জন নুহের ভক্ত; এই ৮০ জন থেকেই মানব জাতির আবার নতুন যাত্রা।

এই নতুন যাত্রায় জাতিরও সম্পর্ক ছিল। বেড়ে যাওয়া ৮০ জনের মধ্যে ছিলেন হযরত নূহের এক পুত; নাম তার হমি। নূহ তার পুত্র হামকে বললেন, তুমি মানব বসতি স্থাপনের জন্যে চলে যাও পৃথিবীর দক্ষিণ দিকে। পিতার নির্দেশ পেয়ে হাম চলে এলেন আমাদের এশিয়া মহাদেশের কাছাকাছি। সেখানে এসে তিনি তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হিন্দকে পাঠালেন ভারতের দিকে। অনেকে মনে করেন, হামের পুত্র হিন্দের নাম অনুসারেই ভারতের নাম হয়েছে হিন্দুস্তান। হিন্দের দ্বিতীয় পুত্রের নাম ছিল বঙ্গ। এই বঙ্গ এর সপ্তানরাই বাঙালি বলে পরিচিতি লাভ করে। এই গল্প সত্যি হলে কলতে হবে বাঙালির আদি পুরুষহচ্ছেন বঙ্গ অষ্টাদশ শতাব্দির ঐতিহাসিক গােলাম হােসেন সলীম লিখেছেন, ‘হযরত নুহ (আ.) এর পুত্র হামের জ্যেষ্ঠ সন্তান হিন্দ হিন্দুস্তানে আসার দরুণ এই অঞ্চলের নাম তার নামানুসারে রাখা হয়। সিদু জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার সাথে এসে সিন্ধু দেশে কসতি স্থাপন করায় এই অঞ্চলের নাম তারই নামানুসারে সিদ্ধু রাখা হয়। হিন্দের দ্বিতীয় পুত্র বং (বঙ্গ)-এর সন্তানেরা বাংলায় উপনিবেশ স্থাপন করেন। আদিতে বাংলার নাম ছিলাে বং। শেখ আবুল ফজল আলামি ছিলেন মুঘল মাট আকবরের মন্ত্রী, সভাসদ এবং নবরত্নের একইন। আবুল ফজল বাঙ্গাল ও বাঙ্গালাহ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে তার আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে লিখেছেন, বাঙ্গালাহ আদি নাম ছিলাে ‘বঙ্গ। প্রাচীনকালে এখানকার রাজারা ১০ গজ উচু ও ২০ গজ বিস্তৃত প্রকা- আল নির্মাণ করতেন। এ থেকেই বাঙ্গাল এবং বাঙ্গালাহ নামের উৎপত্তি। কি্তু আল কে বাংলা বা সংস্কৃত ভাষার শব্দ বা বর্ণ সমষ্টি বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ-ভারতে শব্দটির ব্যাপক বাবহারও দেখা যায় না। আল সেমেটিক বা আরবি ভাষা থেকে উতুত। সেমেটিক ভাষায় আল অর্থ আওুলাদ, সন্তান-সন্ত্রতি ও বংশদর। এ অর্থে (বং আল) বঙাল বা বঙ্গাল (অর্থাৎ বং-এর বংশধর) শব্দের উৎপত্তি হতে পারে। এখনও গ্রামে-গঞ্জে বংশ বা প্রজন্ম বুঝাতে আহু বা আল শব্দ বুঝানাে হয়। তাই বলা যায় হযরত নূহ (আ) প্রােপৌত্র বংই হলাে প্রথম বাঙালি এবং বাংলাদেশের প্রথম মানুষ। এ বিষয়ে ড, মােহাম্মদ হান্নান এর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন, বাঙালির প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসের প্রাপ্ত নিদর্শনের সময়ের সাথে নুহ (আ)-এর পৌত্র এবং প্রপৌত্রদের আগমনের সময়পর্বকে ভ. মরিস বুকাইলির অনুমানের সাথে মেলানাে সম্ভব। প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনাদি কম করে হলেও দশ হাজার বছরের প্রাচীন এবং বাংলাদেশের সভ্যতা ও বালি জনমানুষের বসতি এই সময়পর্বেরই থারাবাহী। এ কথা অনুমান করতে দ্বিধা থাকা উচিত নয়। আর তার ধর্মীয় পরিচয় ছিল ইসলাম। তাই মুসলমানরাই বাংলাদেশের আদিবাসী এবং আদিম নাগরিক। আর আদিম বা আদি শব্দ দুটির উৎপত্তিও আদম থেকে হওয়ার সম্ভাবনা অধিক এদেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, উপজাহিসহ সকল সম্প্রদায় এ শব্দটি নিশঙ্কচিত্রে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লেখ্য এবং কথ্য উতয় তাষাতেই ব্যবহার করে। অন্যদিকে জনসংখ্যা গণনা ও পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে আদমশুমারি শব্দটি বহুল ব্যবহৃত। এক্ষেত্রেও একই বক্তব্য প্রযোজ্য।

এই নতুন যাত্রায় জাতিরও সম্পর্ক ছিল। বেড়ে যাওয়া ৮০ জনের মধ্যে ছিলেন হযরত নূহের এক পুত; নাম তার হমি। নূহ তার পুত্র হামকে বললেন, তুমি মানব বসতি স্থাপনের জন্যে চলে যাও পৃথিবীর দক্ষিণ দিকে। পিতার নির্দেশ পেয়ে হাম চলে এলেন আমাদের এশিয়া মহাদেশের কাছাকাছি। সেখানে এসে তিনি তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হিন্দকে পাঠালেন ভারতের দিকে। অনেকে মনে করেন, হামের পুত্র হিন্দের নাম অনুসারেই ভারতের নাম হয়েছে হিন্দুস্তান। হিন্দের দ্বিতীয় পুত্রের নাম ছিল বঙ্গ। এই বঙ্গ এর সপ্তানরাই বাঙালি বলে পরিচিতি লাভ করে। এই গল্প সত্যি হলে কলতে হবে বাঙালির আদি পুরুষহচ্ছেন বঙ্গ অষ্টাদশ শতাব্দির ঐতিহাসিক গােলাম হােসেন সলীম লিখেছেন, ‘হযরত নুহ (আ.) এর পুত্র হামের জ্যেষ্ঠ সন্তান হিন্দ হিন্দুস্তানে আসার দরুণ এই অঞ্চলের নাম তার নামানুসারে রাখা হয়। সিদু জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার সাথে এসে সিন্ধু দেশে কসতি স্থাপন করায় এই অঞ্চলের নাম তারই নামানুসারে সিদ্ধু রাখা হয়। হিন্দের দ্বিতীয় পুত্র বং (বঙ্গ)-এর সন্তানেরা বাংলায় উপনিবেশ স্থাপন করেন। আদিতে বাংলার নাম ছিলাে বং। শেখ আবুল ফজল আলামি ছিলেন মুঘল মাট আকবরের মন্ত্রী, সভাসদ এবং নবরত্নের একইন। আবুল ফজল বাঙ্গাল ও বাঙ্গালাহ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে তার আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে লিখেছেন, বাঙ্গালাহ আদি নাম ছিলাে ‘বঙ্গ। প্রাচীনকালে এখানকার রাজারা ১০ গজ উচু ও ২০ গজ বিস্তৃত প্রকা- আল নির্মাণ করতেন। এ থেকেই বাঙ্গাল এবং বাঙ্গালাহ নামের উৎপত্তি। কি্তু আল কে বাংলা বা সংস্কৃত ভাষার শব্দ বা বর্ণ সমষ্টি বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ-ভারতে শব্দটির ব্যাপক বাবহারও দেখা যায় না। আল সেমেটিক বা আরবি ভাষা থেকে উতুত। সেমেটিক ভাষায় আল অর্থ আওুলাদ, সন্তান-সন্ত্রতি ও বংশদর। এ অর্থে (বং আল) বঙাল বা বঙ্গাল (অর্থাৎ বং-এর বংশধর) শব্দের উৎপত্তি হতে পারে। এখনও গ্রামে-গঞ্জে বংশ বা প্রজন্ম বুঝাতে আহু বা আল শব্দ বুঝানাে হয়। তাই বলা যায় হযরত নূহ (আ) প্রােপৌত্র বংই হলাে প্রথম বাঙালি এবং বাংলাদেশের প্রথম মানুষ। এ বিষয়ে ড, মােহাম্মদ হান্নান এর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন, বাঙালির প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসের প্রাপ্ত নিদর্শনের সময়ের সাথে নুহ (আ)-এর পৌত্র এবং প্রপৌত্রদের আগমনের সময়পর্বকে ভ. মরিস বুকাইলির অনুমানের সাথে মেলানাে সম্ভব। প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনাদি কম করে হলেও দশ হাজার বছরের প্রাচীন এবং বাংলাদেশের সভ্যতা ও বালি জনমানুষের বসতি এই সময়পর্বেরই থারাবাহী। এ কথা অনুমান করতে দ্বিধা থাকা উচিত নয়। আর তার ধর্মীয় পরিচয় ছিল ইসলাম। তাই মুসলমানরাই বাংলাদেশের আদিবাসী এবং আদিম নাগরিক। আর আদিম বা আদি শব্দ দুটির উৎপত্তিও আদম থেকে হওয়ার সম্ভাবনা অধিক এদেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, উপজাহিসহ সকল সম্প্রদায় এ শব্দটি নিশঙ্কচিত্রে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লেখ্য এবং কথ্য উতয় তাষাতেই ব্যবহার করে। অন্যদিকে জনসংখ্যা গণনা ও পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে আদমশুমারি শব্দটি বহুল ব্যবহৃত। এক্ষেত্রেও একই বক্তবা হলো ।ওপরে উল্লিখিত ‘বং’ জাতির পরবর্তী জনগােষ্ঠীই হয়ত অস্ট্রো-এশিয়াটিক অথবা অস্ট্রিক বা নিষাদ নামে পরিচিতি পেয়েছে। কোনাে কোনাে ইতিহাসবিদ এদেরকেই বাংলাদেশের আদিম মানব গোষ্ঠী আখ্যা দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলাে বং জাতি মুসলিম হলে পরবর্তী অস্ট্রিক নিষাদ-দ্রাবিড়দের ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে ধারণা নেয়ার সুযােগ কোথায়? এ কথা সত্য সময়ের বিবর্তনে মানুষ বিভিন্ন মতাদর্শ গ্রহণ করে। যুগে যুগে মানুষ ও রাষ্ট্র প্রণীত নানা মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে দুনিয়ার বুকে। কালক্রমে এদেশে বিভিন্ন ধর্মাদর্শ ও মতবাদ প্রবর্তিত হয়। এখানের বং জাতিও তাওহীদবাদী ধর্ম পরিত্যাগ করে একসময় ভ্রান্ত আকিদা বিশ্বাসে আসক্ত হয়ে পড়ে। তখন তাদের মৌলিক জাতিসত্তাও বদলে যায়। মুর্তিপূজা, জড় পূজা, সূর্য পূজা, প্রতীক পূজা, প্রকৃতি পূজা তাদেরকে গ্রাস করে। ফলে স্বভাবতই তারা মূল ধর্মবিশ্বাস থেকে বিচ্যুত হয়ে মানব রচিত মতবাদ গ্রহণ করে। তাই মুসলমানরাই যে বাংলাদেশের প্রাচীন বাসিন্দা সেক্ষেত্রে পরবর্তী ধর্মবিশ্বাসের বিষয়টি কোনাে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না।অন্যদিকে কোনাে কোনাে ঐতিহাসিক দ্রাবিড় জাতিকে বাঙালির আদি মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আর্যোপনিবেশের পূর্বে যে প্রাচীন জাতি ভূমধ্যসাগর হতে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত স্বীয় অধিকার বিস্তার করেছিল তাহারাই বােধ হয় ঋগ্বেদের দস্যু এবং তাহারাই ঐতরেয় আরণ্যকে বিজেতৃগণ কর্তৃক পক্ষী নামে অভিহিত হইয়াছে। এই প্রাচীন জাতিই বংগ মগধের আদিম অধিবাসী। ভারতবর্ষে দ্রাবিড়দের আগমন ঘটেছে সুপ্রাচীনকালে, প্রাগৈতিহাসিককালে এবং তারা এসেছে সেমেটিকদের আদি আবাসভূমি পশ্চিম এশিয়া থেকে। অর্থাৎ ব্যাবিলন বা মেসােপটেমিয়াই ছিলাে দ্রাবিড়দের উৎপত্তিস্থল। সেমেটিক সভ্যতার উৎস সামের প্রােপৌত্র এবং হযরত নূহ (আ.)-এর সপ্তম অধস্তন বংশধর আবু ফীর ছিলেন উপমহাদেশের দ্রাবিড়দের আদি পুরুষ। অতএব, দেখা যায় দ্রাবিড়রা ছিল অহিভিত্তিক ধর্ম ইসলামের অনুসারী। এই তৌহিদী আদর্শের কারণেই আর্য হিন্দুদের সাথে তাদের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে।

মানবসভ্যতার ইতিহাসে যত ধ্ু-সংখাত, যুদ্ধ-বিগ্রহ সংঘটিত হয়, তার অধিকাংশই ঘটে ধর্ম ও আদর্শিক কারণে। যেমন: ইব্রাহীমনমরুদের জ্ব, ফেরাউন মুসার সংঘর্ষ, আর্য-অনার্য সংঘাত, মহানবী (সা.) ও মুশরিক ইহুদিদের সংঘাত, তারিক-রডারিক সংঘর্ষ, খুরী-পৃদ্মিরা যুদ্ধ, ঐতিহাসিক হুসেড, হিটলারের ইহুদি নিধন, রাশিয়ায় ধর্মের মূলোৎপাটন কিংৰা উইলিয়াম বুশের ইরাক-আফগানিজ্জান অভিযান সবই আদর্শিক সংগ্রাম। আর্য হিন্দু দ্রাবিড় সময় ব্যাপী যে বিরােধ চলছিল সেটা শুধু ঔপনিবেশিক তৎপরতা ছিল না; বরং তার মূলে ছিল ধর্ম-রাজনীতি-আদর্শ-নৈতিকতা। তাই দেখা যায় দ্রাবিড়রা যদি এদেশের প্রাচীন অধিবাসী হয় তাহলেও বলা যায় মুসলিমরাই বাংলাদেশের ভূমিপুত্র।ভৌগােলিক দিক বিশ্লেষণ করলেও দেখা যাবে মুসলমানরাই বাংলাদেশের আদিম অধিবাসী। দশ কুমার চরিত হিন্দু ধর্ম সম্পর্কিত একটি প্রাচীন গ্রন্থ। এ গ্রন্থে প্রাচীন বাংলাদেশ সম্পর্কে যে তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সে সম্পর্কে শ্রী অক্ষয় কুমার দত্ত লিখেছেন, দশ কুমার চরিতের প্রথম ও চতুর্ঘ উচ্ছাসে কাল যবন দ্বীপ এবং ষ্ঠ-উচ্ছাসে যবন ও বন পােতের প্রসঙ্গ আছে। এইচ এইচ উইলসন ওই যবন জাতি, যবনপােতকে আরব জাতি ও আরব পােত বলিয়া বিবেচনা করিয়াছেন। অতএব বাংলাদেশের সাথে আরব, আ্যারাবিয়ান সংস্কৃতি ভাষার যােগসূত্র বিদ্যমান। অতীতকাল থেকেই আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াতের সহজপথ সামুদ্রিক পানিপথ। প্রতিটি উল্লেখযােগ্য সামুদ্রিক বন্দরেই আরবি ভাষা বুকত ও বলত। অর্থাৎ পৃথিবীর বড় বড় সামুদ্রিক বন্দর ও পানিপথুলােতে আরব ও সেমেটিকদের আধিপত্য ছিল। বাংলাদেশ হলাে একটি ট্রানজিট পয়েন্ট। এখানে এ সত্যটি অধিক প্রযােজ্য। আরবরাই পৃথিবীতে প্রথম সভ্যতার আলাে ছড়ায়। তারাই প্রথম লিপি বা বর্ণমালার উদ্ভাবন করেছেন। দক্ষিণ আরব বা ইয়েমেন ও ব্যাবিলন ছিল সভ্যতার আদি উৎসভূমি। পৃথিবীতে সকল দেশের সভ্যতা একই সময়ে একই সাথে সৃষ্টি হয়নি।সেমেটিক বা ইসলাম অনুসারী আদিযুগের মানুষেরাই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তরে নতুন নতুন সভ্যতার জন্ম দেয়। তাই প্রাচীন বাংলাদেশও মুসলমানদেরই সৃষ্টি। আর্য ব্রাহ্মণাবাদীরা বাংলাদেশের অধিবাসীদের দস্যু, চেস্থ ও অসুর বলতাে। ভিন্ন ধর্মমতের কারণেই তারা বাঙালিদের বিরুদ্ধে এরূপ আক্রোশ ও বিথেষভাব পােষণ করতে বলে আমরা মনে করি। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ, এল, বালাম আ্দের ওপর গবেষণা করে তার বিবরণীতে লিখেছেন, আর্ষরা নিরক্ষর ও বর্বর। নাগরিক সভ্যতার সাথে তাদের কোনাে পরিচয় ছিল না। তারা যাযাবর জীবন যাপন করতাে এবং তাদের গােত্রপতির নেতৃত্বে হানাহানিতে লিপ্ত থাকত। রাষ্ট্রীয় ধারণা তাদের মাঝে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ছিল। রাজা গশত্যস্যপ-এর আমলে ইরানে ধর্ম নিয়ে মতবিরােধ, আত্মকলহ ও পরিণামে ভীষণ মুগ্ধ বিগ্রহ শুরু হয়। বরদাশত বা যরঞ্রষ্ট সেখানে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে ইসলামের বাণী প্রচার করেন। বাদশাহ

গশতনি তার সভাসদসহ এ ধর্মমত গ্রহণ করেন। কিন্তু কুসংস্কার ও অঙ্চবিশ্বাসে মগ্ন আর্য হিন্দু পতি-পুরোহিতের দল পিতৃপুরুষের ধর্মের দোহাই দিয়ে জনসাধারণকে ক্ষেপিয়ে তােলে। ফলে নদীক্ষিত মুসলমানরা তাদের বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হয়। ফলে শৈতৃক ধর্ম ও শিবাদী সংস্কৃতি নিয়ে যার আর বিদ্রোহী মুশরিকদের নিয়ে হিন্দুস্থানসহ পার্ববর্তী দেশগুলােতে চলে আসে। ভারতে এসেই তারা স্থানীয় অধিবাসীদেৱ সাথে সংঘ্র্ষে লিপ্ত হয়। হরপ্পা মহেজোদারােসহ প্রাচীন সমৃদ্ধশালী সভ্যতাশুলাে ক্বংস করে। ইরানের ব্যর্থতা এখানে তারা সুদে-আসলে আদায় করে। ইসলাম ধর্ম বিকাশের কারণেই তাদেরকে ইরান তাগ করতে হয়। প্রতিশোধ গ্রহণ করে ভারতে এলে। তাতে ধারণা রা যায় ইরান শ ভারতের দুই সম্প্রদায়ই এই ধর্মবিশ্বাসের (ইসলাম) অন্তর্ভুক্ত ছিল।হিন্দুরা ভারত ভূমির আদিম নিবাসী ছিলেন না; দেশান্তর হতে আগমন করে এ স্থানে অবস্থিত হয়েছেন। প্রাচীনতার দিক থেকে হিন্দু-বৌদ্ধ এদেশে অপেক্ষাকৃত নতুন সম্প্রদায়। হিন্দুদের আদি নিবাস নিয়ে পণ্ডিতগণ একমত হতে পারেননি। কেউ বলেছেন তুর্কিস্তান বা রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল, কারও মতে ইরান, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী বা বােহেমিয়া। তবে অধিকাংশের মতে দক্ষিণ রাশিয়া। এৱা আনুমানিক প্রিশ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে এ উপমহাদেশের আগমন করেন। তাদের আক্রমণ ও লুষ্ঠনের ফলে দ্রাবিড় অধ্যুষিত সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংস হয়। এরপর তাব্বা পাঞ্জাবের পঞ্চনদ অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন কনে।প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ঋগ্বেদের অহিন্দুদের ভারতে আগমন সম্পর্কিত তথ্যের সন্নিবেশ ঘটেছে। বৈদিক যুগের মানুষ ভারতে এসেছিল বাস্তি হতে এবং তারাও প্রাগৈতিহাসিক যুগের অন্তর্ভুক্ত। এখন প্রশ্ন হলাে এই আদিম জাতির বাসভূমি কোথায় ছিল। এই নিয়ে প্রচুর মতদ্বৈত আছে। জার্মান পতি কোসিন প্রতিপাদিত করতে চেষ্টা করেছিলেন যে, তাদের আদি বাসভূমি ছিল উত্তর ইউরােপিয় উপত্যকায়। ভারতীয় গবেষক বাল গঙ্গাধর তিলক প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছেন যে, প্রাচীন আর্য জাতির বাস ছিল ৬০০০ খ্রিস্টপূর্ব শতাব্দিতে উত্তর মেরু অঞ্চলে। অধ্যাপক জে, এল, মায়া, হ্যান্ড পিক এবং চাইল্ড মনে করেন, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় ও দ্বিতীয় সহস্রাব্দ এদের নিবাস ছিল দক্ষিণ রাশিয়াতে এবং তার পূর্বাঞ্চল কাস্পিয়ান সাগরের তীরে। পিগােটের ধারণায় খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ শতাব্দির পরবর্তী শতাব্দিলােতে উত্তর পশ্চিম থেকে ভারত একাধিক জতি কর্তৃক আক্রন্ত হয়েছিল। ভারত ইউরােপিয় ভাষাতাবী মানুষও তাদের অন্যতম ছিল। দুইলারে ধারণা এই সময়ই ঋগোল বর্ণিত প্রাচীন আমাজাতি উত্তর পশ্চিম ভারতে প্রবেশ করে এবং হা সংস্কৃতির ধারক যে মনুষ্যগােষ্ঠী ছিল তাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সংস্রান্দির গােড়ার দিকে ভারতে হরপ্প সংস্কৃতি পূর্ণ মহিমায় অধিষ্ঠিত ছিল। তাদের সংস্কৃতি নগরকেন্দ্রীক এবং সেই নগলাে দুর্গ দিয়ে সুরক্ষিত ছিল। আর্য জাতি ভারতে প্রবেশ করলে তাদের (ভারপ্রবাসি সাথে) সাথে যুদ্ধে লি হয় এবং তদের দুর্গ্লাে প্বংস করে দেয়। এই ঐতিহ্াসিক

ঘটনারই ছায়াপাত হয়েছে ঋগ্বেদ ইন্দ্রের বীরত্বসূচক কীর্তির বর্ণনায়। উল্লেখ্য দেবরাজ ইন্দ্র পঞ্চাশ সহস্র কৃষ্ণবর্ণ শ্ুকে (ভারতীয়কে) বিনাশ করেছিলেন এবং শম্বরের নগরসমূহ ধ্বংস করেছিলেন। ইন্দ্র শম্বরের ৯৯টি পুরী (শহর) ধ্বংস করেছিলেন এবং দিবােদাসকে শততম পুরী বাসের জন্য দিয়েছিলেন।তবে বাংলাদেশে তাদের অভিযান পরিচালিত হয় হয় খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দিতে। এতে বােঝা যায়, এ উপমহাদেশে হিন্দু আক্রমণ ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার পর হাজার বছর পর্যন্ত বাংলাদেশে আর্যদের প্রভাব বিস্তার সম্ভব হয়নি। এরপূর্ব থেকেই বৌদ্ধধর্মের কিছুটা প্রভাব ছিল বাালি সমাজে। পরবর্তীতে বৌদ্ধ ও হিন্দুরা পালাক্রমে প্রায় সাতশত বছর রাজত্ব করেন। কিন্তু জনসাধারণ তাদের ধর্মমতকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করেনি। ত্রয়ােদশ শতকে মুসলিম শাসন কায়েম হলে সাধারণ মানুষ স্বততভাবে ইসলামকে মেনে নেয়। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার আগে এখানকার মানুষ প্রচলিত কোনাে ধর্মের অনুসারী ছিল না। ভারা হয়তাে সর্বপ্রাণেশ্বরবাদ জাতীয় কোনাে কোনাে ধর্মবিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিল; কিংবা ধর্মীয় রীতি-নীতির সাথে সেভাবে পরিচিতও ছিল না। মুসলমানদের আগমনের আগে এই অঞ্চলে হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী শাসকদের শাসন জারি ছিল। এসব শাসকদের পৃষ্ঠপােষকতায় উল্লিখিত ধর্মসমূহের উপাসনাগৃহও নির্মিত হয়েছে। অনেক শাসক তাদের ধর্মমত প্রচারের জন্য নানা কর্মসূচিও গ্রহণ করেছিল। কিন্তু নানা কারণে তা সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযােগ্য হয়নি বা পৌঁছায়নি। এমনকি পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম, কামরূপ প্রভৃতি এলাকায়ও হিন্দুরা এবং বার্মায় বৌদ্ধধর্ম বিকশিত হলেও বর্তমানে বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত এ অঞ্চলটিতে হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্ম বা কোনাে ধর্মই মানুষের কাছে পৌঁছেনি। ফলে গ্রভিত্তিক ধর্মের গঞ্ডির বাইরে থেকে যায় এখানকার মানুষ।এদেশে খ্রিস্টানদের বয়স চারশত বছরের মতাে। পর্তুগিজ নাবিক ও জলদস্যু ভাস্কো-দা-গামা ১৪৯৮ সালে ভারতের কালিকট বন্দরে পৌছে। পরে ইটালিয়ান, স্প্যানিশ, ফরাসি, ওলন্দাজ খ্রিস্টানরাও ভাগ্যান্বেষণে এদেশে আসে। ১৬০০ সালের ২৪ আগস্ট আসেন বটিশ খ্রিস্টান উইলিয়াম হকিন্দ। আট জাহাঙ্গিরের দরবারে ব্যবসার অনুমতি চাইলে সম্রাট মর করেন। সর্বশেষ ১৭৫৭ সালে পলাশি ট্রাজেডির মাধ্যমে খ্রিস্টানরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ করে। পর্যায়ক্রমে দখলে নেয় সমগ্র ভারতবর্ষ। ইংরেজ-হিন্দু সখ্যতা এবং তাদের যৌথ মুসলিম বিরােধিতার কারণেই এই বিশাল পরিবর্তন সম্ভব হয়েছিল।বাংলাদেশ ভমিতে সর্বশেষ আগমন ঘটে পার্বত্য উপজাতিলে। অথচ কী আশ্চর্য তাদেরকেই নাকি আদিবস ঘোষণা করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামই

বাংলাদেশের একমাত্র অঞ্চল, যেখানকার মােট জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ অবাঙ্ালি এবং অমুসলিম। অক্ষলটি একটি মিশ্র জনগােষ্ঠী অধুমিত শিজিয় জাতি, উপজাতি, নানা ভাষাভাষী এবং নানা ধর্মাবলম্বী সহ নখ সংস্কৃতিবিশিষ্ট জনসংখ্যার একটি এলাকা। নৃতাত্ত্বিক এবং জাতিতাত্ত্বিক গবেষণা থেকে একথা এখন সুস্প্ট যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী কোনাে জনগোলীই এখানকার কোনাে আদিবাসী না ভুমিপুত্রের দাবিদার হতে পারে না। উপজাতি জনগােষ্ঠীর মধ্যে চাকমারা সংখ্যাগরিষ এবং মারমারা দ্বিতীয় অবস্থানে। চাকমারা ১৫০ থেকে ৩০০ বছর পূর্বে মুখল আমলের শেষ থেকে ব্রিটিশ শাসনামলের প্রথম দিকে মিয়ানমার থেকে পার্বত্য এলাকায় প্রবেশ করে। নােম চীন পর্বত থেকে এখানে আগমন করে। খ্যাং, পাংখাে এবং কুকি ২০০ থেকে ৫০০ বছর আগে এখানে শ্রাবণ হয়ে আগমন করে।ভারী গবেষক বিজি বারগিজ তার ন্থ ইন্ট রিসারজেন্ট শীর্ঘক গ্রন্থে লিখেছেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী উপজাতীয়রা হচ্ছে ভারতের উত্তর। পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারীদের মতাে তিথি/বার্মা/মন খেমাৰ বংশোদ্ভূত। এস উপজাতি গােড়শ থেকে উনবিংশ শতাব্দির মধ্যে এ এলাকায় অভিবাসন করে। বিভি স্থান থেকে আসায় তাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ভাষা আলাদা।ধর্ম ও আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে বাংলাদেশে জনসংখ্যাকে পাঁচটি শ্রেণিভুক্ত করা যেতে পারে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং উপজাতি। উপজাতিদের মধ্যে আবার নানা ধর্ম, বর্ণ ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণ। বর্ণিত পাঁচ সম্প্রদায়ের মধ্যে শেষােক্ত চার সম্প্রদায় বাংলাদেশে বসতি গড়ে অনেক পরে। এদেশ আবাদ করে প্রথম মুসলিমরাই। বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি, বাংলা তাগা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে মুসলমানদের নাড়ির সম্পর্ক। এজনাই বার শতকে সেন শাসক ও ত্রাণ মানুষের মুখের ভাষা বাংলাকে নির্মূল করার জন্য হকুম জারি করেছিল। ভাষাবিজ্ঞানী ড. দীনেশ চা সেন তার বহৎ বঙ্গ এন্তে এ বিষয়ে আলােকপাত করেছেন। বাংলা ভাষায় তাদের ধর্মচর্চাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছিল। অষ্টাদশ পুরানাম ৰামশ্য চরিনেট তাগায়ং মানবা তা রৌরবং নরকং বজেত। অর্থাৎ মানব রচিত বাংলা ভাষায় যে অষ্টাদশ পুৰাণ এবং রামচর্চা করবে তার ঠই হবে রৌরব নরকে।সংস্কৃত থাকে দেবভাষা আখ্যায়িত করে এর আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সর্নকৌশল প্রয়াগ করেছিল। বাংলার সঙ্গে তাদের বিরােধের কারণ হচ্ছে, বাংলা ভাষায় একটি মুসলমানী চং সুদূর অতীতকাল থেকেই ছিল। বাঙালিত্বের সাথে সরাসরি সম্পর্ক একত্ববাদ তথা ইসলামের মর্মবাণী। তাই ঐতিহাসিকভাবেই মুসলমানরা নাালি। বাঙালিরাই মুসলিম। মুসলমানরাই বাংলার আদি নিবাসী। বাংলাদেশের মূল ভূমিপুত্র মুসলিমরা। তাই সাংবিধানিকভাবে উপজাতি নয় মুসলমানদের কে আদিবাসী স্বীকৃতি দেয়া আবশ্যক।প্রাগেতিহাসিককালে একমাত্র ইসলাম াড়া অন্য কোনাে ধর্ম বা খিনের অস্তিত্ব ছিলাে না। মহান আ ই বাকল আলামিন হন্যরত আদম (আ) কে

ইসলামি দ্বীন দিয়েই দুনিয়াতে প্রেরণ করেন। আর প্রাচীন ধর্ম ইহুদিবাদ সৃষ্টি হয় আরও অনেক পরে। অন্যদিকে খ্রিস্টান ধর্মের বয়স মাত্র দু’হাজার বছর। হযরত ইসা (আ.) বা যিশুখ্রিস্ট প্রথম শতাব্দিতে বেথেলহাম জন্মগ্রহণ করেন। ইহুদি জাতি বা হিক্রুদের আদি নেতার নাম আব্রাহাম ৰা হযরত ইবরহিম (আ.)। তার আবির্ভাবকাল সম্পর্কে যে ধারণা ইতিহাসবিদরা দিয়েছেন তাতে দেখা যায় যে, তিনি খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ অব্দ বা র্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দের দিকে উত্তর-পশ্চিম মেসােপটেমিয়ার পশুপালক সম্প্রদায় আবিত হয়েছিলেন। পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্মগুলাের সাথে হযরত ইব্রহিম (আ.) এর নাম জড়িয়ে আছে। তার ছেলে হযরত ইসহাক (আ.)-এর বংশেই জন্ম নিয়েছিলেন ইহুদিধর্মের প্রবর্তক (ইহুদিদের মতে) হিসেবে খ্যাত হযরত মুসা (আ.) এবং খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক খ্রিস্টানদের মতে) হিসেবে খ্যাত হযরত ইসা (আ.)। খ্রিস্টপূর্ব ১৩০০ অব্দের কাছাকাছি সময়ে হযরত মুসা (আ.) হি জাতিতে আবির্ভূত হন। তাই দেখা যায়, মানব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দুনিয়াতে মানুষের সূচনাকালে তাদের জীবনদর্শন হিসেবে ছিল একমাত্র ইসলাম।অন্যসব ধর্ম পরবর্তী সময়ে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে মানুষ নিজেরাই সৃষ্টি করে। আর সভ্যত্যর শুরু ঘেকেই বাংলাদেশে মানবজাতির বসবাস ছিল। ওই সময়ের একমাত্র ধর্ম হিসেব তাদের জীবনাদর্শ ইসলাম বৈ অন্য কিছু হতে পারে না।আল কোরআনে বলা হয়েছে আল্লাহ সকল প্রকারের প্রাণীকে পয়দা করেছেন পানি হতে (২৪.৪৫)। অন্যত্র বলা হয়েছে “অবিশ্বাসীরা কী ভেবে দেখে না যে, আকাশম-লী ও পৃথিবী একত্রে মিলিত ছিল? পরে আমি তাদের পূথক করেছি এবং আমি প্রতিটি জীবন্ত জিনিসকে বের করেছি পানি হতে? তারপরও কী তারা বিশ্বাস করবে না? (২১ ৩০)।ওপরে কোরআনের আয়াতের অনুবাদে যেখানে পানি শব্দের উল্লেখ রয়েছে তার মূল আরবি হচ্ছে মা। এর দ্বারা যেমন আসমানের পানি বুঝায়, তেমনি বুঝায় সমুদ্রের পানিও। শুধু তাই নয়, এই মা শব্দের দ্বারা যেকোনাে তরল পদার্থকেও বুঝানাে হয়ে থাকে। সুতরাং এখানে এই মা শব্দের দ্বারা প্রথম অর্থে যে পানি কে বুঝানাে হয়েছে সে পানি হচ্ছে জীবনের অপরিহার্য উপাদান। বিভিন্ন ভাষায় জন্মদাত্রীকে সন্তানেরা মা নামে ডেকে থাকে। তার সূত্র বোধ হয় এখানেই নিহিত।

বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্রই জন্মদাত্রী মাতাকে “মা’ নামে ডাকা হয়। মা’ ডাক সর্বাপেক্ষা সুমধুর। সন্তানদের প্রথম বুলি মা’। ছেলে মেয়েদের কাছে দুনিয়ায় মায়ের চেয়ে প্রিয় আর কেউ নেই। মায়ের উদর থেকে যেমন সকল শিশুর আবির্ভাব, তেমনি পানি থেকেই সকল সৃষ্টজীবের জন্ম। এক্ষেত্রে পানি মাতৃসমতুল্য। পানি থেকেই প্রাণীর উদ্ভব। তাই পানির আরবি প্রতিশব্দ মা’ থেকে ‘মা’ ডাকের উৎপত্তি বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। এদেশের যারা আদিম অধিবাসী তারাই এই মা’ ডাকের প্রচলন করে। আর তারা মুসলিম সম্প্রদায় বৈ অন্য কোনাে জাতি বা ধর্মের নাগরিক হতে পারে । আর তাদের মাতৃভাষা সেমেটিক বা আরবি হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। তাই বাংলাদেশ মুসলমানদের পূণ্যভূমি, তারাই এদেশের আদিবাসী, তারাই এদেশের প্রাচীন অধিবাসী, তারাই এদেশের মাটির সন্তান, ভূমিপুত্র।

লেখক :কলামিস্ট ও গবেষক