বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে মাত্র সাড়ে ৩ বছর পেয়েছিল বাংলাদেশ। এত কম সময়ের শাসনামলে প্রায় জিরো কোটায় থাকা অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে যান বঙ্গবন্ধু।
তৎকালীন জাপান সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের পরম বন্ধু দেশ জাপান সফরে যান বাংলাদেশের জাতির পিতা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঙালির বীরত্বের প্রতি শ্রদ্ধার সাথে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানায় জাপান। ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে প্রথম দিকে স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশগুলোর অন্যতম দেশ হিসেবে জাপান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং জাপানি স্কুল শিশুরা তাদের টিফিনের অর্থ বাঁচিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো।
পঁচাত্তরের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর জাপানের ‘শ্রমমন্ত্রী তাকাশি’ দেশটির সংসদে শোক প্রস্তাবের আহ্বান করে বক্তব্য দেন। তার সেই বক্তব্যের বাংলা ভাষায় রুপান্তরিত করেন বাংলাদেশের আরেক বন্ধু ‘অধ্যাপক কাজুও আজুমা’। তৎকালীন শ্রমমন্ত্রী তাকাশি হায়াকাওয়ার সেই বাংলা বক্তব্যটি পরে প্রকাশিত হয় জাপানে বাংলা সাহিত্যসাময়িকী ‘মানচিত্রে’। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাকাশি ১৯৭৫ সালের ২৬ আগস্ট সংসদে বলেন, “রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান (বাঙালিরা যাকে বঙ্গবন্ধু নামে সম্বোধন করে), তিনি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ও আমার প্রিয় বন্ধু, যার জন্য আমি সব সময় আন্তরিক শ্রদ্ধা পোষণ করি।” বঙ্গবন্ধুর হত্যাকে জাপানের জন্য ‘চরম আঘাত’ ও ‘অবর্ণনীয় শোকের ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ‘জাপানের-পরম’ বন্ধু হিসেবে অভিহিত করা হয়। ওই সফরে বাংলাদেশ পুনর্গঠনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী কোকেই তানাকা বাংলাদেশের জন্য জাপানি মুদ্রায় ৯ হাজার মিলিয়ন ইয়েন বরাদ্দ দেন। শেখ রাসেল ও শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ওই সফরেই ‘যমুনা সেতু’ নির্মাণের চুক্তি হয়েছিল।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সাথে সাদৃশ্য জাপানের জাতীয় পতাকার। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায়ই বলতেন জাপানের পতাকা তাঁকে সূর্যোদয়ের দেশ হিসেবে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের পতাকায় সবুজের বুকে লাল সূর্য লাখো শহীদের আত্মত্যাগেরই প্রতিচ্ছবি।