রবিবার , নভেম্বর ২৪ ২০২৪
নীড় পাতা / ফিচার / রবীন্দ্রনাথ চিরনবীন-চির অবিনশ্বর

রবীন্দ্রনাথ চিরনবীন-চির অবিনশ্বর


আজ থেকে ঠিক ৭৬ বছর আগে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২শে শ্রাবণ (গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে ১৯৪১ সালের ৬ আগস্ট) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির তৃণময় শ্যামল প্রাঙ্গণে বর্ষণসিক্ত পরিবেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুবরণ করেন

কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখ বাংলা সাহিত্যের এ দিকপাল জন্মগ্রহণ করেন। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর আর মা সারদা দেবীর ১৪ সন্তানের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ১৩তম। জন্মের সময় তাঁর ডাক নাম রাখা হয় রবি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে রবির প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ‘অমৃত বাজার’ পত্রিকায়। পরবর্তীতে ১৬ বছর বয়সে গ্রেগরীয় বর্ষ ১৮৭৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ছোটগল্প এবং নাটক লিখেন। তাঁকে বাংলা ভাষায় ছোটগল্প রচনাধারার প্রবক্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

যদিও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে প্রভাবশালী সাহিত্য হচ্ছে তাঁর রচিত কবিতা এবং গান। তাঁর গান আজও বাঙালিদের নিত্যদিনের জীবনচর্চায় মিশে আছে প্রগাঢ়ভাবে। একই সঙ্গে উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমনকাহিনী এবং নাটক রচনায়ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সিদ্ধহস্ত। বাংলা সাহিত্যের অমর স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, দার্শনিক, সঙ্গীত রচয়িতা, সুরস্রষ্টা, গায়ক, অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সমাজসেবী এবং শিক্ষাবিদ। বহুগুনে গুনান্বিত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তাই আখ্যায়িত করা হয় সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি হিসেবে। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির এমন কোনো অংশ নেই যা নিয়ে কবি লেখালেখি করেননি।

আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ’ নামের বানানটিও আমরা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকেই পেয়েছি। বাঙালি তথা বাংলাদেশীদের যাপিত জীবনাচরণের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। এখনও প্রতি বছর রমনা বটমূলে রবীন্দ্রনাথের গানে গানে পহেলা বৈশাখ উদযাপন আমাদের জাতীয় জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ। আমাদের জীবনের এমন কোনো বিষয় নেই, যেখানে আমরা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে পাইনি। তাঁর রচনাবলী আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের দরবারে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন।


‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ প্রথম এশীয় হিসেবে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনিই একমাত্র কবি, যিনি তিনটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা (বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলংকা)। তাঁর সাহিত্যের আবেদন বিশ্বজনীন।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পযর্ন্ত তাঁর বাংলা সাহিত্যে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন। আর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে প্রথম এশীয় হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ চিত্রশিল্পী হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। ৮০ বছরের জীবন সাধনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জন্ম এবং মৃত্যুকে রাঙিয়ে দিয়ে গিয়েছেন শাশ্বত সুন্দরের অমর বার্তায়। বাঙালির চেতনার রঙ স্পষ্ট হয়েছে তাঁর মানসিকতা এবং সাহিত্যের আলোয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুঞ্জয়ী, চির অম্লান!

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের দর্শন ছিলো মানুষের মুক্তির দর্শন। তিনি ছিলেন বিশ্বমানবতায় বিশ্বাসী। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কবি সে দর্শন-ই অন্বেষণ করে বেরিয়েছেন। তাঁর রচিত কবিতা, গল্প, গান এবং সাহিত্যের যাবতীয় লেখনী মানুষকে আজও সে অন্বেষণের পথে, উপলব্ধির পথে আকৃষ্ট করে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ আজও আমাদের মনমানসিকতা গঠনের এবং চেতনা উন্মেষের প্রধান অবলম্বন। তাঁর পথ অনুসরণ করেই কিংবা বলতে হয় তাঁর হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য এর নতুন রূপ লাভ করে। বাংলা গদ্যের আধুনিকায়নের পথিকৃৎ রবীন্দ্রনাথ ছোটগল্পেরও জন্মদাতা। গল্পে, উপন্যাসে, কবিতায়, প্রবন্ধে, নতুন নতুন সুরে এবং বিচিত্র গানের বাণীতে, সমাজ ও রাষ্ট্রনীতিসংলগ্ন গভীর জীবনবাদী চিন্তাজাগানিয়া নিবন্ধে, অসাধারণ সব দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ অনুচ্ছেদে এমনকি চিত্রকলায়ও রবীন্দ্রনাথ চিরনবীন-চির অবিনশ্বর!

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো- বনফুল, সোনার তরী, মানসী, চিত্রা, কল্পনা, ক্ষণিকা, খেয়া, গীতাঞ্জলি, গীতালি, গীতিমালা, সেজুতি, বলাকা, পূরবী, পুনশ্চ, জন্মদিনে, শেষ লেখা প্রভৃতি। নাটকের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চিরকুমার সভা, তাসের দেশ, রক্তকরবী, চোখের বালি, শেষের কবিতা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের “আমার সোনার বাংলা” গানটি বাংলাদেশের, “জন গণ মন” গানটি ভারতের, এবং “শ্ৰীলংকা মাতা, অপ শ্ৰী… লংকা নম’, নম’, নম’, নম’ মাতা” (সিংহলি ভাষায় অনুবাদ করেন আনন্দ সামারাকুন) গানটি শ্ৰীলংকার জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়। সাহিত্য রচনার পাশাপাশি বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের জীবনকে মহিমান্বিত করেছে।

সূত্র: এইবেলাডটকম/মনিশ/এএস ।

আরও দেখুন

কবি নাজনীন নাহার এর কবিতা “আমি মানুষ’’

আমি মানুষ! নাজনীন নাহারআমি মানুষ!হ্যাঁ আমি মানুষ।আমি অমানুষের করি নাশ,মানচিত্র থেকে মুছে দেবো আমি অমানুষদের …