শুক্রবার , অক্টোবর ১৮ ২০২৪
নীড় পাতা / উপ-সম্পাদকীয় / নলডাঙ্গার মিনি-কক্সবাজার খ্যাত হালতি বিল পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাময় স্থান

নলডাঙ্গার মিনি-কক্সবাজার খ্যাত হালতি বিল পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাময় স্থান

মাহমুদুল হাসান (মুক্তা), নলডাঙ্গা, নাটোরঃ আনন্দ, বিনোদন, ভ্রমন পছন্দ করে না এ রকম বেরসিক মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। তাইতো ভ্রমণপিয়াসী মানুষেরা সামান্য অবসরে নির্মল আনন্দ খুঁজে বেড়ায় এক দেশ থেকে অন্য দেশে। এর টানেই তাদের ঢল নেমেছে নলডাঙ্গার অথৈ জলরাশির মিনি-কক্সবাজার খ্যাত হালতি বিলে। স্থানীয়দের কাছে বা যে সকল ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন তাদের কাছে মিনি-কক্সবাজার নামে খ্যাত এই বিলটি। নাটোর জেলার নবগঠিত নলডাঙ্গা উপজেলার উত্তর প্রান্তে তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার একরের এবং ৮ ফুট গভীর বিস্তির্ণ জলাভূমি নিয়ে এই বিলের অবস্থান। কথিত আছে ব্রিটিশ সরকারের সময়ে এই বিলে ঝাঁকে ঝাঁকে বিরল প্রজাতির ‘হালতি’ পাখি বসতো বলেই এর নামকরণ করা হয়েছিল হালতি বিল। তখন ব্রিটিশ সরকারের লোকজন এই বিলে আসতেন সেই হালতি পাখী শিকারে। আর দীর্ঘদিন পরে আবার এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থী আসে এই বিলের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য উপভোগ করতে। বর্ষা মৌসুমের প্রতিদিন হাজারো ভ্রমণপিয়াসী মানুষ আসে এই বিলে। বিলটি এখন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে মিনি-কক্সবাজার হিসেবেই পরিচিত। বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল হিসেবে পরিচিত চলনবিল ছাড়াও নাটোরে রয়েছে এই হালতির বিল। প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার নারী-পুরুষ হালতি বিলে আসে এর বিশাল জলরাশির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। পাটুল থেকে খাজুরা দীর্ঘ প্রায় আট কিলোমিটার সাবমারসিবল রাস্তা। খরা মৌসুমে রাস্তা বের হয়ে থাকে আর বর্ষা মৌসুমে রাস্তা পানির নিচে ডুবে থাকে। বর্ষার সময় সম্পূর্ণ বিলে থৈ থৈ করছে পানি আর ভরা বিলের মাঝখান দিয়ে রাস্তা পানির মধ্যে রাস্তায় হাটার মজাই আলাদা। চারপাশে শুধু পানি আর পানি। দূর থেকে দেখে মনে হয় পানির উপরে হাঁটছে মানুষ। কেউ কেউ দলবেঁধে বন্ধুবান্ধব নিয়ে আবার কেউ কেউ পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে আনন্দ বিনোদন করতে আসে হালতি বিলে। মাঝখানের রাস্তায় ছোট-বড় অসংখ্য ঢেউ আছড়ে পড়ছে। ঢেউয়ে যখন পা ভিজে যায় এ যেন অন্যরকম এক অনুভূতি, অন্যরকম এক ভালো লাগা কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য। আনন্দ বিনোদনের এমন সুযোগ এর আগেে মেলেনি এই অঞ্চলের মানুষের। এই রাস্তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বন্যার পানিতে রাস্তাটি তলিয়ে গেলেও শুকনো মৌসুমে আবার জেগে ওঠে। সে সময় এই রাস্তার ওপর দিয়েই গাড়িতে চলাচল করতে পারে। বর্ষায় শুরু হয়ে গেলে যখন বিল পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় তখন পাঁকা রাস্তার ওপর দিয়েই নৌকা চলাচল শুরু হয়ে যায়। বর্ষাকালের হালতি বিলটি অথৈ সমুদ্রের মতো দেখায়। এসময় বিলের মাঝে হালতি, খোলাবাড়িয়া, নূরিয়াগাছা, একডালা, দীঘীরপাড়, কুচকুরি ছোট ছোট গ্রামগুলো প্রায় ডুবু ডুবু দ্বীপের মতন দেখায়। বিলের বড় বড় ঢেউ সেখানে আছড়ে পড়ে। আগে দিনে ঝড়ের সময় কত যে নৌকাডুবি হয়েছে এখানে। কতো মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এই রাস্তা নিমার্ণের ফলে এখন যেন পুরোপুরি বদলে গেছে দৃশ্যপট। এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।নাটোর জেলা শহর থেকে হালতি বিলের দূরত্ব মাত্র আট কিলোমিটার এবং নলডাঙ্গা উপজেলা সদর থেকে হালতি বিলের দূরত্ব প্রায় ছয় কিলোমিটার।শহর থেকে নিজস্ব গাড়ি ছাড়াও সিএনজি অথবা অটোরিকশা করে বিল দেখতে আসেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। ভ্রমন পিপাসু অনেক মানুষ বিভিন্ন জেলা থেকেও আসেন। ভ্রমন পিয়াসুদের জন্য এটি বাজার সমুদ্র সৈকতের আনন্দ দেয়। ভ্রমন পিপাসুদের জন্য হালতি বিলে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য নৌকার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি স্পীড বোটও। প্রতিবছর বর্ষায় সড়কটি পানিতে ডুবতে শুরু করলেই ভ্রমন পিয়াসুদের আসা-যাওয়া বেড়ে যায়। এখন প্রতিদিন হাজার হাজার নারী-পুরুষ বিলের দক্ষিণ প্রান্ত পাটুলের বটতলায় আসেন হালতি বিল ভ্রমনে। সাপ্তাহিক ছুটির দিগুলোতে এখানে সবচেয়ে বেশী ভিড় জমে। দুপুরের পর শহর থেকে দলে দলে মানুষ পাটুলের বটতলায় আসতে থাকেন। তাদের অনেকেই পাটুল ঘাট থেকে নৌকা বা স্পীড বোট ভাড়া করে অথৈ জলরাশির হালতি বিলে ঘুরে নির্মল আনন্দ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন। আবার অনেকে পানিতে তলিয়ে যাওয়া পাকা রাস্তায় দলবেঁধে হেঁটে বেড়ান। ভ্রমনকারিদর সাথে কথা বলে জানা যায় শহরের যান্ত্রিক জীবনের রুটিন বাঁধা কোলাহলপূর্ণ এক ঘেঁয়েমির ক্লান্তি দুর করতে তারা বর্ষা মৌসুমে সুযোগ পেলেই হালতি বিলে ঘুরতে চলে আসেন। এখানে এলে তাদের মনটা আনন্দে ভরে যায়। মিনি কক্সবাজার খ্যাত হালতি বিলকে কেন্দ্র করে অনেকের আয় বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। আগে বিলের একজন মাঝির দিনে ৮০ থেকে ১০০ টাকা আয় হতো আর এখন হচ্ছে পাঁচশ’ থেকে সাতশ’ টাকা। স্থানীয় নৌকার মাঝি মুঞ্জু মিয়া জানান, এখন প্রতিদিন সে গড়ে আয় করছে আটশ’ টাকারও বেশী। জনসমাগম দেখে পাটুল বটতলায় স্থানীয়ভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বসানো হয়েছে বেশ কিছু হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও মটর সাইকেল গ্যারেজ। শত শত মানুষের ঢল নামায় সেখানে হকারদেরও ভিড় বেড়েছে।মুড়ি, বাদাম, চানাচুর, ফল-মুল, চা-বিস্কুট, লজেন্স, চকলেট, পান-সিগারেট এমনকি চুড়ি-মালা আর কসমেটিক্সের পসরা সাজিয়ে বসেছে অনেকে।বিক্রিও হচ্ছে বেশ। এতো মানুষের আগমনে ‘মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত নাটোরের হালতিবিল এখন মুখরিত। ঢাকা শাহনূরী মডেল হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমি স্ত্রী আর দুই ছেলে নিয়ে গিয়েছিলাম পাটুল মিনি কক্সবাজার দেখতে। পানির ভেতর দিয়ে রাস্তা, হাটার সময় যখন ঢেউ এসে পা স্পর্শ করে ভিজে যায় তখন অনেকটাই কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের মতো আনন্দ অনুভব হয়। নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, মিনি কক্সবাজার খ্যাত হালতি বিল ভ্রমণ করতে আসা মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এখানে ভ্রমণ করতে আসা সাধারণ মানুষ যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এবং ভ্রমন পিয়াসুদের যাতে কোন রকম সমস্যা না হয় সে জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও স্বেচ্ছা সেবক মোতায়েন রয়েছে। হালতি বিল এই মিনি কক্সবাজারে যাতে বেশি করে ভ্রমণপিয়াসু মানুষ আসতে পারে সেজন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছি। আশা করছি আগামীতে এটি বাংলাদেশের মধ্যে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাময় এবং দর্শনীয় স্থান হবে।

আরও দেখুন

নাটোরের কালবেলার দুই বছর পূর্তি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক,,,,,,, আলোচনা ও কেক কাটার মধ্যে দিয়ে নাটোরের কালবেলার সাফল্য দুই বছর পূর্তির অনুষ্ঠান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *