রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪
নীড় পাতা / জনদুর্ভোগ / নাটোর পৌরসভার জলাবদ্ধতার দায় কার?

নাটোর পৌরসভার জলাবদ্ধতার দায় কার?

উমা চৌধুরী জলি

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নাটোর পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আর এই জলাবদ্ধতার কারণে নানামুখী আলোচনা সমালোচনা এবং উস্কানি শুরু হয়েছে। প্রথমেই বলি ২০১৬ সালে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেয়ার কালে ঐতিহাসিক প্রাচীন এই পৌরসভা দুর্নীতির কারণে কালো তালিকাভূক্ত ছিল। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এর অবকাঠামো সুযোগ সুবিধা কোন কিছুই প্রথম শ্রেণির ছিল না। রাস্তাঘাট ছিল ভাঙা-চোরা খানা-খন্দে ভরা। বাতির অভাবে পৌরসভা ছিল ভুতুরে অন্ধকারে। পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহণকালে ৫ কোটি টাকা সরকারি রাজস্ব, ৬ কোটি টাকার অধিক বিদ্যুৎ বিল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বকেয়া ছিল। পূর্ববর্তী মেয়রের দুর্নীতির কারণে কালো তালিকাভূক্ত হয়েছিল। এই কারণে দাতা সংস্থা সব ধরণের দান অনুদান বন্ধ করে দিয়েছিল।

একটি বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কৃপদৃষ্টি, সকলের সগযোগিতায় নানামুখী চেষ্টার ফলে রাহু গ্রাস কাটিয়ে উঠে নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু হয়। রাস্তাঘাট বিভিন্ন স্থাপনা বেহাল দশা থেকে ধীরে ধীরে মুক্ত হতে শুরু করে। রাস্তার বাতিগুলো জ্বলতে থাকে। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। সড়কের বাতিগুলোর হয়েছে আধুনিকায়ন হচ্ছে। এরমধ্যেও রয়ে গেছে নানা সমস্যা। আর্থিক অপ্রতুলতার কারণে একসঙ্গে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

এর মধ্যে অন্যতম বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। বর্ষাকাল এলেই এই সমস্যা প্রতীয়মান হয়। কিন্তু কেন এই জলাবদ্ধতা? এই দায় কি পৌরসভার একার? আমাদের নাগরিকরা সচেতন নন অথবা বেশি সচেতন। লক্ষ্য করে দেখবেন অধিকাংশ মানুষ তার বাড়িঘর তৈরি করেছেন অপরিকল্পিতভাবে। পৌরসভার নিয়ম-কানুন এর তোয়াক্কা না করে তৈরি করেছেন তাদের বাড়িঘর এবং নানা স্থাপনা। অধিক সচেতন মানুষ বাড়ি বা মার্কেট নির্মাণের সময় এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড় দেননি ড্রেন করার জন্যে অথবা তার নিজের একটা গাড়ী তার বাড়ির পাশে দাঁড়ানোর মতো। তার ফলে পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণ করতে হচ্ছে সরু করে। এতে ভারি বর্ষণ হলে পানি দ্রুত নামতে পারছেনা।

আবার আমরা আমাদের বাড়ির ময়লা আবর্জনা, পলিথিন, প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত জিনিসপত্র নির্ধারিত জায়গায় ফেলে না দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ড্রেনে ফেলে দিই। আর এগুলোর জন্যে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা হলেই কষে পৌর কর্তৃপক্ষকে গাল মন্দ করি। অপরদিকে বিভিন্ন খাল জলাশয় দখল করে নির্মিত হয়েছে বাড়ি-ঘর স্থাপনা। রাজনৈতিক কারণে বা ভোটের কারণে কেউই ঝুঁকি নেননি উচ্ছেদের মতো কার্যক্রমের।

দুই বছর আগে নাটোর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে জলাবদ্ধতায় ব্যহত হচ্ছিল শিক্ষার্থীদের চলাচল। তাদের দাবির মুখে ওই রাস্তা উঁচু করে দেয়া হয়েছে এই বছরে। তাতেও সমস্যার সমাধান হয়নি বরং আরো বিপদ বেড়েছে। কারণ নিচু স্থানে অপরিকল্পিতভাবে বিদ্যালয় ভবন এবং তার আশে পাশের বাড়ি নির্মাণ করায় এবার তারা পড়েছেন জলাবদ্ধতায়। নাটোর শহরের ভিতর দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তাটি সম্প্রসারণ এবং আধুনিকায়ন হয়েছে। কিন্তু এর পাশে যখন ড্রেন নির্মাণ হয় তখনই আমি এর প্রতিবাদ করেছিলাম। কারণ ড্রেনটি ছিল অপরিকল্পিত। এটি শহরের মহল্লার বাড়িঘরের চেয়ে উঁচু হওয়ায় এই ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন তো দূরের কথা উল্টো অন্য উঁচু এলাকার পানি গড়িয়ে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় এসে জড় হয়। এতে সময় অসময়ে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দেয়।

কিন্তু আমি প্রতিবাদ করলেও আমার সে কথায় কর্ণপাত করেননি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী উল্টো আমার বিরুদ্ধে উন্নয়ন কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনেছেন। এদিকে পৌরসভার অভ্যন্তরে বিভিন্ন পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা হয়। এর ফলে পুকুরের পাশের বাড়িঘর ভাঙনের মুখে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্থরা পৌরসভায় এসে নালিশ করলেও আমার পক্ষে কোন সমাধান দেয়া বা সংকট নিরসনের জন্যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হয়না। ব্যক্তি মালিকানার পুকুর পাড়ের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পৌরসভার আর্থিক ব্যয়ে রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ করে তাদের এই সংকটও দূর করাও সম্ভব না। পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় সেচ পাম্প বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করে আরেক এলাকায় ফেলা হচ্ছে। তাতে যে ওই এলাকার লোকজন আরো জলাবদ্ধতায় পড়ছেন তার ভ্রুক্ষেপ নাই।

সর্বশেষ বাংলাদেশে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার আইন নেই। থাকলেও যেটুকু আছে তা প্রয়োগ করার ক্ষমতাও সীমিত। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে পারলে এর সমাধানও দ্রুত সম্ভব বলে মনে করি। বাংলাদেশের হাতে গোনা দুই তিনটি পৌরসভা আছে যার কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন পরিশোধ করে আসছে তারমধ্যে নাটোর পৌরসভা অন্যতম। আমার বাবার সময়ে ফিক্সড করে রেখে যাওয়া তিন কোটি টাকা যদি ভেঙে খরচ না করা হতো, হয়তো পৌর কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন নিয়ে ভাবতে হতোনা।

তারপরে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে সকল দায় আমার কাঁধে নিয়ে অসমাপ্ত কাজ পৌরবাসীর সহযোগিতা নিয়ে শেষ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। ইতিমধ্যে কুয়েত সরকারের দেয়া ১৪ কোটি টাকা হাতে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে কাজ করা যাচ্ছেনা। এই সংকট কেটে গেলে আশা করি বাকি উন্নয়ন কাজ দ্রুত সমাপ্ত করে পৌরবাসীর দুর্দশা লাঘবে সমর্থ হব।

লেখক: উমা চৌধুরী, মেয়র, নাটোর পৌরসভা

আরও দেখুন

বাড়ির উঠানে ৪ কেজি ওজনের গাঁজারগাছ-গ্রেপ্তার ১

নিজস্ব প্রতিবেদক সিংড়া,,,,,,,,,,,,নাটোরের সিংড়া পৌরসভার বালুয়াবাসুয়া মোল্লা পাড়া এলাকায় ১০ফুট উচ্চতার একটি গাঁজার গাছ উদ্ধার …