প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে। তাহলেই এই করোনা যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব। এছাড়া দুর্নীতিবাজ এবং দুর্যোগকালীন সময়ে যারা ব্যবসা করতে চায় তাদের চিহ্নিত করতে হবে। পাশাপাশি তাদের শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন আলোচকরা। দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপে এসব কথা বলেন আলোচকরা।
রোববার (১২ জুলাই) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন- যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরী উপদেষ্টা (কোভিড-১৯) টীকা কর্মসূচী এবং ইমিউনোলজিস্ট ড. আবু সিদ্দিকি, এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু এবং আওয়ামী লীগ নেতা ফাইয়াজুল হক রাজু। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন।
ড. আবু সিদ্দিকি বলেন, আপনারা যদি দেখেন ম্যালেরিয়া ভাইরাস ছড়িয়েছিল ১৮১৮ সালে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। ম্যালেরিয়া থেকে এইডস’র কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যায়নি। করোনা ভাইরাস এসেছে গত বছরের শেষ দিকে। এখনই কোনো ভ্যাকসিন পাওয়াটা কম। স্বাভাবিকভাবে যদি করোনার ভ্যাকসিন আমাদের পেতে হয়, তাহলে আরো ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে যে গতিতে ভ্যাকসিন তৈরি করা হচ্ছে, তা আগামী ২ বছরের মধ্যে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ভালো কিছু আশা করা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে চীন এখনই ভ্যাকসিন ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। আমাদের দেশে এখন যে কাজটা করতে হবে সেটা পরীক্ষা। সেখানে পিসিআর টেস্ট এবং এন্ডিবডি টেস্ট করাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, চীনা ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে সব কোম্পানিই তাড়াহুড়ো করে কাজ শুরু করে দিয়েছে। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে পরিস্থিতিতে। চীনের ক্ষেত্রে মানুষগুলোকে তো ওরা পশুর মতো চিন্তা করে। সেখানে ভ্যাকসিন দিয়ে রোগ সংক্রমণের হার কমানোর চেষ্টা করছে। চীন যেহেতু কারো কাছ থেকে অনুমতি নেয় না, তাই এগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি, ওদের অনেক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। আশা করছি, তারা পারবে। মাস্ক ব্যবহার, ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এখন বলা হচ্ছে ১২ ফুট পর্যন্ত দূরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন। আমাদের দেশে যারা টেস্ট করছে, তারা পুরোপুরি প্রশিক্ষিত নয়। তারা ভুল করছে। তখনই মনগড়া রিপোর্ট দিচ্ছে। এছাড়া ২০০৯ সালের মেশিন কেনা হয়েছে। শেখ হাসিনার একার পক্ষে সব সামাল দেয়া তো সম্ভব নয়, তাহলে এই মন্ত্রী, ডিজিদের কি কাজ? তাদের কেন চাকরিতে রাখতে হবে। আমাদের দেশের ডাক্তার অনেক বেশি ভালো, কিন্তু তারা কেন বাংলাদেশে পারছে না।
মুনতাকিম আশরাফ বলেন, শুধু বাংলাদেশই নয়; পৃথিবীর সব দেশেই ব্যবসায় ধ্বঃস নেমেছে। এই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীনের মতো রাষ্ট্রও অর্থনীতিতে ধাক্কা খেয়েছে। আমাদের রপ্তানি আয়ের ৪৫ শতাংশই আসে পোশাক খাত থেকে। দেখুন, ইন্ডিটেক্সের জারা ফ্যাশনের ২৫ হাজার আউটলেট বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে পোশাক খাতে অর্ডার কমে আসবে। তবে এই করোনায় আমাদের সামনে সুযোগ আসছে। চীন ইতিমধ্যেই ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারতে অনেক কারখানা শিফট করেছে। এই সুযোগটা আমাদেরও নিতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই ক্ষুদ্র ও মাজারি শিল্প, বৃহৎ শিল্প এবং পোশাক খাতের জন্য প্রণোদনা দিয়েছেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও মাজারি শিল্পের জন্য ব্যাংকগুলো তেমন সহায়তা করছে না। করোনার আগেও ব্যাংকগুলো থেকে ২০০ কোটি টাকা করে দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু তারা নানা সুযোগ নিলেও প্রতিদান দিচ্ছে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ে তিনি আরো বলেন, দুর্নীতিবাজরা কখনোই আওয়ামী লীগার হতে পারে না। এই করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখনই ক্ষমতায় এসেছেন, তিনি কৃষিকে সবচে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আগে আমরা মাছ উৎপাদনে ৪র্থ ছিলাম, বর্তমানে ২য় স্থানে এসেছি। ১৯৭১ সালে আমাদের দেশে ৯৭ লাখ হেক্টর আবাদি জমি ছিল, বর্তমানে সেটি ৫০ লাখ হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের আবাদি জমির পরিমাণ কমলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। এই পুরোটার কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার যে ভিশন রয়েছে, সেগুলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অনেক সময় বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের যে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন, তার মতো আর কেউ দেননি। আমরা জাতি হিসাবে খুবই আবেগপ্রবণ এবং হাইপার। কোনো ঘটনা নিয়ে খুব দ্রুতই মাতামাতি করি, তা আবার দ্রুতই ভুলে যাই। এখন বাইরে গেলে বুঝা যায় না, দেশে করোনা মহামারি চলছে। নিম্ন শ্রেণীর মানুষ লকডাউন, মাস্কপরা, সামাজিক দূরত্ব কিছুই মানছেন না। এখন আর আমাদের লকডাউনে যাওয়ার সুযোগ নেই। জীবন ও জীবিকা একসাথেই চালিয়ে নিতে হবে।
সাজ্জাদ আলম তপু বলেন, এই করোনাকালে গণমাধ্যমকর্মীরা ফ্রন্টলাইনার হিসাবে কাজ করছে। গুজব প্রতিরোধে সব সময়ই গণমাধ্যম কাজ করছে। এছাড়া গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ সমাজের মুনাফাভোগীদের খুঁজে বের করতে পেরেছে। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলেই অন্যরা সাবধান হয়ে যাবে। এই করোনাকালে যে চক্রগুলো ব্যবসা করে মুনাফা করছে, তাদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে। আমরা বিশ^াস করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছেন। ইতিমধ্যেই ডা. সাবরিনা গ্রেফতার হয়েছে। এটা আশার কথা। এছাড়া সাহেদ করিমকেও গ্রেপ্তার করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্টমন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই লড়াইকে আমি সাধুবাদ জানাই। এই করোনাকালে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রয়োজন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি গঠনমূলক গণমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখতে হবে।
ফাইয়াজুল হক রাজু বলেন, এই মুজিববর্ষে আমরা সকল অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যুদ্ধে নেমেছি। আমাদের প্রথম দিকে অনেক অবব্যস্থাপনা ছিল, সেগুলো কাটিয়ে উঠে লড়াইটা চালানো হচ্ছে। এই করোনায় আমি আমার মাকে হারিয়েছি। মায়ের অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস ছিল, তাই তিনি সহ্য করতে পারেননি। মাকে নিয়ে কবরে শুয়েছি, তবুও আমার করোনা হয়নি। আমি এবং পরিবারের অনেকের টেস্ট করানো হয়েছে, সেখানে কারোই করোনা পজিটিভ আসেনি। এবার আসি সমসাময়িক বিষয়ে। আমি নাম নিয়েই বলছি, রিজেন্টের সাহেদকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম। কিন্তু তাকে আগে কখনো আওয়ামী লীগ করতে দেখেনি। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে এক দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন হলেও কিছু দুষ্টুচক্রও গড়ে উঠে। সাহেদ এবং ডা. সাবরিনার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এটা আমাদের আশার কথা। আর একটা কথা, কেউ রাষ্ট্রপতি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, মন্ত্রী-এমপিদের সাথে ছবি থাকলেই কেউ আওয়ামী লীগার হয় না।
তিনি আরো বলেন, আগামী সপ্তাহেই মালয়েশিয়াতে দুইটা বিমানবন্দরে স্বল্পসময়ে এন্টিজেন টেস্ট শুরু করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশেও করা যেতে পারে। কারণ ইতিমধ্যেই বহিবিশ্ব থেকে আলাদা হয়ে পরেছি। ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের যে ধারণা ছিল করোনা নিয়ে ডাক্তারদের মাঝে, মার্চে এসে সেটা ভালো হয়েছিল। কিন্তু মে মাসে সেখানে ধ্বঃস পরেছে। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি হয়েছে, কিন্তু সবাই যে দুর্নীতিবাজ সেটা আমি বিশ্বাস করি না। বি.বাড়িয়াতে একটা জানাযাতে যে পরিমাণ লোক হয়েছিল, তাতে মহামারী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে হয়নি। এছাড়া রাজধানীতে কড়াই বস্তি এবং মোহাম্মদপুরের বিহারীদের থাকার জায়গাগুলোতেও সেখানে করোনা আক্রান্ত হচ্ছে না। যদি কারো আক্রান্ত হয়, শুরুতেই পরীক্ষা করে পজিটিভ পাওয়া যায়, তাহলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অথবা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিলেই সুস্থ হওয়া সম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে অনেক সময় নানা বিদ্রুপের কথা বলেছেন, কিন্তু দেশ আজ ডিজিটাল প্লাটফর্মেই চলছে। অর্থনীতিকে ঠিক রাখতে হলে দেশীয় উৎপাদন এবং সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে।
আরও দেখুন
পিরোজপুরে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে দিনব্যাপীপ্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৩ জুলাই ২০২৪, শনিবার, ঢাকা: মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে পিরোজপুরের …