নিজস্ব প্রতিবেদক, পুঠিয়া:
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় পুকুর খননের মহা উৎসব চলছে। গত দুই বছরে ১ শত ২১ টি পুকুর খনন সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে কয়েকটি স্থানে পুকুর খনন চলমান রয়েছে। ইতি মধ্যে পুকুর খননকারীরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, রাজশাহীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) কে উকিল নোর্টিশ প্রদান করেন।
একালাবাসীর দ্বন্দ্বের জের ধরে এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিন পুড়িয়ে দেওয়াসহ পুকুর খননের বিপক্ষে মানববন্ধন এর ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, সাংবাদিকদের অবগতকরণপত্র এবং হুমকি দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দিন-রাত পুকুর খনন করে চলছে। প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে বিভিন্ন সময়ে নিরব ভূমিকা পালন করছে। তাতে পুকুর খননকারী দালালদের সহযোগিতা করার অভিযোগ করেছে কয়েকজন ক্ষমতাশী দলের নেতার বিরুদ্ধে। যার কারণে দেখার যেন কেউ নেই। তাই রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। পরিবেশ নষ্ট করছে ট্রাক্টর ও ভারি ট্রাক বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায় মোট ৭১ টি পুকুর খনন করা হয়েছে। এর মধ্যে পুঠিয়া ইউনিয়নে ৬ টি, বেলপুকুরিয়ায় ৮টি, বানেশ্বরে ৪টি, ভালুকগাছীতে ১৯ টি, শিলমাড়িয়ায় ২৯ টি এবং জিউপাড়া ইউনিয়নে ৫টি পুকুর খনন করেছে।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে পুঠিয়া উপজেলায় মোট ৫০ টি পুকুর খনন করা হয়েছে। এর মধ্যে পুঠিয়া ইউনিয়নে ৫টি, বেলপুকুরিয়ায় ৫টি, বানেশ্বরে ২টি, ভালুকগাছীতে ২১ টি, শিলমাড়িয়ায় ৭টি এবং জিউপাড়া ইউনিয়নে ১০টি পুকুর খনন করেছে।
এর মধ্যে মহামান্য হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার রয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসক রাজস্ব এর অনুমতিপ্রাপ্ত হয়ে ২ টি পুকুর খনন হয়েছে।
চলতি বছর ৩০ এপ্রিল পুঠিয়া উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের বিলমাড়িয়া গ্রামের শামসুল হকের ছেলে শামীম হোসেন এবং একই উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের কাশিয়াপুকুর গ্রামের দবির উদ্দিনের ছেলে আব্দুল গফুর মিলে ব্যারিষ্টার আবু বাক্কার সিদ্দিক রাজন এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, রাজশাহীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুমন চৌধুরী ও সহকারী কমিশনার (ভুমি)কে উকিল নোর্টিশ প্রদান করেন। তারপরও বর্তমানে শামীম হোসেন দাপটের সাথে পুকুর খনন করে চলেছে।
ইতিমধ্যে জিউপাড়া ইউনিয়নের উজালপুর এলাকাবাসীর সাথে দ্বন্দ্বের জের ধরে এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিন পোড়ানোর ঘটনাও ঘটে। এ ব্যাপারে একটি মামলা চলমান রয়েছে। তারপরও পুকুর খনন শেষ করেছে খননকারীরা।
পুঠিয়া প্রেসক্লাব, পুঠিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবসহ সাংবাদিকদেরকে অবহিতকরণপত্র প্রাদান করে। আর একজন সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ায় দুইজন পুকুর খননকারী রিরুদ্ধে সাধারণ ডাইরী (জিডি) করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে ভালুকগাছী ইউনিয়নের গোটিয়া বিলে ফসলী জমিতে পুকুর খননের ঘটনায় এলাকাবাসী পুকুর খননকারী দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের মন্ডল এবং একই উপজেলার আব্দুল লতিফ এর বিরুদ্ধে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন। সেখানে ইতিমধ্যে ৪ বার ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেছেন। তারপরও পুকুর খননকারীরা রহস্যজনকভাবে দিন-রাত ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলী জমির চার ধার পুকুরের পাড় বাঁধা শেষ করেছে। এতে কোন সুফল না পাওয়ায় চলতি বছর মে মাসের ৪ তারিখে মানবন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
ব্যারিষ্টার আবু বাক্কার সিদ্দিক (রাজন) জানান, ‘মহামান্য আদালতের অনুমতিক্রমে ১৭ জনের পুকুর খনন করার কথা সেখানে ১০ টি পুকুর খনন করেছে আবেদনকারীরা। তবে আমি খবর পেয়েছি কিছু পুকুর খননকারীরা কোন অনুমতি ছাড়াই, ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দলের গুটি কয়েক নেতা ও প্রশাসনের সহযোগিতায় আদালতের কাগজ জালিয়াতির মাধ্যমে পুকুর খনন করেছে।
থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল ইসলাম জানান, পুকুর খননের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ব্যবস্থা নিবেন। আমাদের কিছু করার নাই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন্নাহার ভূঁইয়া জানান, পুকুর খনন করছে লাভের আশায়, আর জমিতে জলাবদ্ধতার কারণেও পুকুর খনন করছে। আরেকটি দুঃখজনক ঘটনা যে ফসলী জমিতে পুকুর খননের বিষয়ে আমাদের কৃষি অফিসের অনুমতি বা প্রত্যয়ন নেয় না। সেটা নিলে আমরা কখনোই দেবনা। আর কৃষকদের আমরা ভাল ফসল করতে সব সময় পরামর্শ প্রদান করছি। তাদের কোন সমস্য হলে আমাকে জানালেই আমি তাদের বাড়িতে গিয়ে পরামর্শ দিয়ে আসবো।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুমানা আফরোজ জানান, এই পুকুরের মধ্যে আদালতের রিট আবেদন ছিলো। তবে পুকুর খননের খবর পাওয়া মাত্রই আমি নিজে গিয়ে অভিযান চালিয়েছি। জরিমানাসহ ভেকু মেশিন অকেজো করা হয়েছে। আর তার রিপোর্ট প্রতিদিন জেলা প্রশাসক স্যারের নিকট পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওলিউজ্জামান জানান, আমাদের পক্ষ থেকে খবর পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদলতের অভিযান চালিয়ে জরিমানাসহ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পুকুরের মহামান্য আদালতের বিষয়টি ছিলো। আর অনেকে রাতের আঁধারে সেই পুকুর গুলো খনন করেছে। তবে কয়টি পুকুরে আদালতের অনুমতি ছিল বা আছে, সে বিষয়টি জানতে চাইলে তা তিনি জানাতে পারেনি।